একুশে বইমেলা

নির্বাচনের বছরে জমবে কি বইমেলা?

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার কিছুদিন পরই শুরু হবে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। বর্তমান অবরোধ-হরতাল অব্যাহত থাকলে বইমেলা কি আদৌ জমে উঠবে? নাকি রাজনৈতিক অস্থিরতায় বইমেলার ওপর প্রভাব পড়বে? বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন লেখক-প্রকাশক-পাঠকরা।

Advertisement

এরই মধ্যে আসন্ন বইমেলা নিয়ে নানা চিন্তা-ভাবনা ডানা মেলেছে। অনেকেই ইতিবাচক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ আশঙ্কার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, অরবোধ, হরতাল না থাকলে বইমেলায় আসা-যাওয়ায় কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকলে বইমেলায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন অনেকেই।

কবি ও গল্পকার মাঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনের প্রভাব বইমেলায় কতটুকু পড়বে বা আদৌ পড়বে কি না—সেটা নিয়ে ভাবছি কয়েকদিন যাবৎ। বইমেলায় নির্বাচনের প্রভাব অনেকটা নির্ভর করে নির্বাচন কেমন হবে এবং এর ফলাফলের ওপর। আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুই মাস আগে থেকেই বিরোধীদলগুলো হরতাল-অবরোধ দিয়ে জনজীবনের স্বাভাবিক গতি মন্থর করার চেষ্টা করছে। অনুমান করা যায়, নির্বাচন পরবর্তী কয়েক মাস এই অস্থিরতা বিরাজ করবে। যার প্রভাব বইমেলার ওপর পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে আমি চাইবো, বইমেলা স্বাভাবিক ছন্দেই হোক।’

আরও পড়ুন: মনোজগতের সঙ্গে মিল রেখে বই খুঁজুন: মনদীপ ঘরাই 

Advertisement

লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার বলেন, ‘বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। বইমেলায় নির্বাচনের প্রভাব খুব বেশি পড়বে বলে মনে হয় না। তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেলে এটি নিশ্চয়ই প্রভাব ফেলবে। আমি মনে করি, বছরের শুরুতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত হলে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলায় পরিণত হবে অমর একুশে বইমেলা।’

কবি ও শিশুসাহিত্যিক ফখরুল হাসান বলেন, ‘হ্যাঁ, বইমেলা জমবে। কারণ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে বইমেলার কোনো সম্পর্ক নেই। বইমেলা মূলত সৃষ্টিশীল মানুষের মেলা।’

লেখক ও সাংবাদিক রণজিৎ সরকার বলেন, ‘নির্বাচনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তারপর নির্ভর করবে বইমেলার আয়োজন। তবে আশা করি, বইমেলা ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হবে।’

আরও পড়ুন: বইয়ের বিক্রি নির্ভর করে প্রচারণার ওপর: মাসুম আওয়াল 

Advertisement

কবি, নাট্যকার ও প্রকাশক জাহিদ সোহাগ বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই যেভাবে লাগামহীন অবরোধ ও বাসে আগুন দেওয়া শুরু হয়ে গেছে, তা নির্বাচনের পরে বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছি। এই পরিস্থিতিতে একটি শান্তিপূর্ণ বইমেলা উদযাপন করা কঠিন। জন-নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে কোনো উৎসবেরই রং থাকে না। অন্যান্য বছরে এই সময়ে লেখকদের যে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে; এ বছরে তার কিছুটা কমতি আছে বলে মনে করছি। সরকারের উচিত গণভীতি দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করে মানুষকে আস্থায় ফিরিয়ে আনা।’

কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন, ‘নির্বাচন ৭ জানুয়ারি। ভোটের পর নির্বাচনের আবহ থাকবে সর্বোচ্চ একসপ্তাহ। আমাদের দেশে গত ৩০ বছর ধরে সাহিত্যে বিরাজনীতিকীকরণ চলছে। আমাদের কবি-কথাশিল্পীদের সাহিত্যকর্মে রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে তারা যেমন সাহিত্যে রাজনীতির প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন; তেমনই তাদের পাঠকরাও রাজনীতিবিমুখ হয়ে উঠছেন। আর রাজনৈতিকভাবে যারা অসচেতন, তারা দেশের নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। তাদের একদল বইমেলায় আসবে ঘুরেফিরে ফটোশ্যুট করতে, আরেক দল আসবে প্রেম করতে। ছোট্ট একটি দল আসবে টুকটাক বই কিনতে। ফলে নির্বাচন বইমেলার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।’

এসইউ/জিকেএস