মতামত

জনগণ থেকে প্রত্যাখাত বিএনপি নেতারা এখন ব্যস্ত বিবাদে

জনগণের বিন্দুমাত্র সমর্থন নেই। তাই সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়ে গোটা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। তবে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা নিয়ে বিএনপির মধ্যে দোটানাও রয়েছে। এমনিতেই দলটির অবস্থা শোচনীয়। চূড়ান্ত হতাশা দেখা দিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে।

Advertisement

খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব আজ আর গোপন নেই। এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সঙ্গে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিবাদ। টুকু ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে জোট অতীত’। সেইসঙ্গে তার দাবি, ‘বিএনপি একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল’। তার এই মন্তব্যের জেরে জামায়াত নেতারা ক্ষুব্ধ হন।

বিএনপির’র কিছু নেতা টুকুকে সমর্থন করলেও জামায়াতপন্থীরা ক্ষেপে যান। তারা ভেবেছেন, জামায়াতের কাঁধে ভর করে নিজেদের শক্তি জাহির করবেন। তাই রিজভী বিবৃতি দিয়ে টুকুর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। বুঝিয়ে দেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই তারা দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন। আন্দোলন কর্মসূচির নামে বিএনপি ও জামায়াত জোটের জ্বালানো-পোড়ানোর রাজনীতি তাই এখনও চলমান।

নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করলেও মৌলবাদী এই দলটির শক্তি কিন্তু কমেনি। বরং বিএনপির ছত্রছায়ায় গোপনে গোপনে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে পাকিস্তানপন্থী সংগঠনটি। গোয়েন্দা পুলিশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের দাগ লেগে থাকা সংগঠনটির ২০০৮ সালে স্থায়ী সদস্য বা রুকনের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৮৬৩। বর্তমানে দলটির স্থায়ী সদস্য সংখ্যা ৭৩ হাজার ৪৬। একই সময়ে এই দলটির কর্মী সংখ্যা আগের ২ লাখ ২১ হাজার থেকে ৩ গুণ বেড়ে ৬ লাখ ৩৯ হাজার হয়েছে।

Advertisement

২০১৮সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার কেড়ে নেয়। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির একটা বড় অংশ ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে। তাই শুরু হয়েছে অবরোধের নামে সন্ত্রাসী পরিবেশ তৈরির অপপ্রয়াস।

অবরোধের নামে বোমাবাজি চালাচ্ছে জামায়াত। রোববারই রাজশাহীতে ঝটিকা মিছিলের নামে হাত বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জামায়াত।রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক জানান, সিটিহাট এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে।সেখানে হাত বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে সেখান থেকে পুলিশ ৬ জনকে আটক করে।

গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছেন। জঙ্গিবাদকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় না দিয়ে কড়া হাতে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগের সরকার। মানুষ ভুলতে বসেছে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল অবধি তারেকদের সেই অন্ধকার সন্ত্রাসময় দিনগুলোর কথা। এটা সহ্য হচ্ছে না বিএনপি নেতাদের। আর তাই জামায়াতের হাত ধরে দেশকে ফের অগ্নিগর্ভ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। বিদেশ থেকে নিজের অনুগামীদের মারফত ফের মানুষের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করছেন তারেক রহমান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিতে পুলিশ ও প্রশাসনকে কঠোর হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষ যখন শান্তিতে আছে, তখনই বিএনপি-জামায়াত আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে, মানুষ পুড়িয়ে উল্লাস করছে’! বিএনপি-জামায়েত প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আর অন্যএকটি দল আছে, মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে পারে না। বরং দেশের মানুষের সম্পদ লুটে খায়। এরা খুন, হত্যা, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, চোরাকারবারি, অস্ত্র চোরাকারবারি এগুলো তারা জানে।’প্রধানমন্ত্রীর সাফ কথা, ‘আমরা উন্নয়ন করি, আমরা সৃষ্টি করি—ওরা ভাঙে, ওরা নস্যাৎ করে। ওরা ধ্বংস করতে জানে, মানুষের কল্যাণকরতে জানে না।’

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা যে পুরোপুরি সত্যি সেটা সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দেখলেই বোঝা যায়। ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের দিন থেকে ৯ নভেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত সারা দেশে মোট ১২৩টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি,২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর ১টি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর ৭টি, ৪ নভেম্বর ৬টি, ৫ নভেম্বর ১৩টি, ৬ নভেম্বর ১০টি এবং ৮ ও ৯ নভেম্বর মোট ১৩টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে হরতাল ডেকেও সাড়া পায়নি বিএনপি। তাই তারা শুরু করেছে খুন, হত্যা, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা। মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে অতীষ্ট।

বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা তাই বিএনপি ও জামায়াতের বর্তমান কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধের থেকেও জঘন্য বলে বর্ণনা করেছেন।এডুকেশেন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলমেন্ট ফোরামের (ইআরডিএএফবি) মতে, জঙ্গিবাদ ও জামায়াতীদের অপরাজনীতি রুখে দেওয়াটাই বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেনের মতে, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার চক্রান্ত করছে।’

আসলে বিএনপির এই অপরাজনীতি ও বিদেশীদের প্রতি নির্ভরতা দেশের মানুষের প্রতি আস্থাহীনতার বহিঃপ্রকাশ। জামায়াত ও বিএনপি’র এই জঘন্য ষড়যন্ত্রের কারণে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে মানুষের রুটি-রুজির। স্থবির করে দেয়ার চেষ্টা চলছে দেশের অগ্রযাত্রার। জাতির মেরুদণ্ড দুর্বল করে দিতে চাইছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সুবিধাবাদীদের এই জোট। তাদের এই জোটে নতুন করে সামিল হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলের নেতা চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমও চাইছেন বাংলাদেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে। হেফাজতে ইসলামের নেতারাও সন্দেহের বাইরে নন। সব মিলিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চলছে। তাই মানুষকে সংঘবদ্ধ হয়ে ফের নামতে হবে দেশ বাঁচানোর লড়াইতে। একাত্তরের মতোই চব্বিশেও লড়তে হবে বাঙালি জাতিকে।

এবারের লড়াই দেশের সার্বভৌমত্ব, অসাম্প্রদায়িক চেতনার পাশাপাশি শান্তি ও উন্নয়ন ধরে রাখার লড়াই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে নেতৃ্ত্ব দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। এবার নব্য রাজাকার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাঙালি জাতির নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। অপশক্তিকে হারাতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়ানোই প্রতিটি বাংলাদেশীর এখন সবচেয়ে বড় কর্তব্য।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এইচআর/এমএস