আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
Advertisement
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী দেশের মানুষের কল্যাণে ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, মানবাধিকার, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাস করে। কোনো ধরনের অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ও মানুষের স্বার্থের পরিপন্থি কর্মসূচিতে অভ্যস্ত নয় জামায়াত। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা শক্তিশালী ও মজবুত করার লক্ষ্যে জামায়াত সর্বদাই নির্বাচনমুখী তৎপরতা চালিয়ে আসছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য সর্বপ্রথম কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার ধারণা জাতির সামনে উপস্থাপন করে জামায়াত।
এদিকে সম্প্রতি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকায় দলটি আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লাও নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারবে না।
Advertisement
এ বিষয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আপিল খারিজের মাধ্যমে জামায়াতকে নির্বাচনে দলীয়ভাবে ও দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন লাভ করেছিল জামায়াতে ইসলামী। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে নিবন্ধনের বিরুদ্ধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। রিটটি শুনানির জন্য তালিকায় আসে। দুজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে নিবন্ধন মামলার শুনানি শুরু হলে বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি মামলাটির সঙ্গে সাংবিধানিক বিষয় জড়িত বিধায় বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন। প্রধান বিচারপতি মামলাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে জামায়াতের নিবন্ধন মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন। উক্ত বেঞ্চে দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট রিটের নিষ্পত্তি করে রায় দেন। জামায়াতের নিবন্ধন বহাল রেখে রায় দেন একজন বিচারপতি। অপর দুজন বিচারপতি জামায়াতের নিবন্ধনটি আইনগত এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনি বলে রায় প্রদান করেন।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির আরও বলেন, হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে দুই মাসের মধ্যে আপিলের সার-সংক্ষেপ জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ‘ডিফল্টার’ হলে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। জামায়াত নির্দিষ্ট সময়ের সাতদিন আগে আদালতে সার-সংক্ষেপ জমা দেয়।
তিনি বলেন, জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ও জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে দুটো পিটিশন করা হয়। ওই পিটিশন দুটি শুনানির জন্য বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে ১৯ নভেম্বর আপিল মামলা ও পিটিশন শুনানির দিন ধার্য করেন।
Advertisement
কিন্তু হরতাল ও রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে শুনানির জন্য জামায়াতের আইনজীবীরা সময় আবেদন করেন জানিয়ে মুজিবুর রহমান বলেন, আপিল বিভাগ সিনিয়র আইনজীবীর এ্যাজর্নমেন্ট পিটিশন রিজেক্ট করে মামলাটি ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন ও আদালত অবমাননার আবেদন উভয় পিটিশনটি খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
এ বিষয়ে জামায়াতের আইনজীবীরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপিলকারী হিসেবে বক্তব্য শোনার সুযোগ না দিয়ে মামলাটি ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ করে দেওয়ায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
কেএইচ/জেডএইচ/এমএস