কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি গত আটদিন ধরে বন্ধ। গত ১৪ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত টেকনাফ স্থলবন্দরে সব ধরনের পণ্য আমদানি রপ্তানি বন্ধ। ফলে গত আটদিনে প্রায় ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
Advertisement
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বন্দর সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ। এ কারণে রাখাইনের জেলা শহর মংডু থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আসা বন্ধ। সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে ৪৭ টনের একটি হিমায়িত মাছের চালান টেকনাফ এসেছিল।
এদিকে, টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গড়ে প্রতিদিন তিন কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
Advertisement
দেখা যায়, বন্দরে অচলাবস্থার কারণে জেটি ফাঁকা পড়ে আছে। নেই কোনো কার্গো ট্রলার বা জাহাজ। স্থলবন্দরের ব্যবসার ওপর নির্ভর করে চলা মহাসড়কের কিনারে অর্ধশতাধিক দোকান পাটও বন্ধ। তবে বন্দরের খোলা জায়গা ও ওয়্যারহাউজে মিয়ানমার থেকে আগে আসা বিভিন্ন ধরনের কাঠ, আদা, শুকনা সুপারি, শুঁটকি, নারিকেল, আচারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য মজুত রয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রহমান মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে জানান, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যেই চলমান সংঘাতের কারণে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখতে হয়েছে। কবে নাগাদ চালু হবে তাও বলা যাচ্ছে না। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায়, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা আলী আজগর মাঝি বলেন, বন্দরে ছয় শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। মিয়ানমার থেকে টানা দেড় সপ্তাহ ধরে বন্দরে কোনো মালামাল না আসায় বিপাকে পড়েছেন এসব শ্রমিক। কাজ না থাকায় শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা এ এস এম মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থলবন্দরে মিয়ানমার থেকে কোনো ধরনের পণ্য না আসায় রাজস্ব আদায়ও বন্ধ। আমদানি-রপ্তানি সচল থাকলে দিনে প্রায় তিন কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হতো। সে হিসেবে গত আটদিনে প্রায় ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
Advertisement
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আটদিন ধরে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্যবাহী মালামালের ট্রলার না আসায় বন্দরে কার্যক্রম বন্ধ। তবে, এর আগে আসা আদা, নারিকেল, আচার, সুপারি, শুঁটকিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বন্দরে এখনো জমা রয়েছে। এসব পণ্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তবে আরও শঙ্কার বিষয় হলো মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের যেন আবার আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে না দেয়। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এএইচ/এমএস