জাহিদ সোহাগ একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী ও সাংবাদিক। তার জন্ম ১৯৮৩ সালের ১০ মার্চ মাদারীপুর জেলা সদরের কুলপদ্বী গ্রামে। বসবাস করছেন ঢাকায়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
Advertisement
তার কবিতার বই ‘আর্তনাদও এক বায়বীয় ঘোড়া’, ‘অসুখের শিরোনাম’, ‘দুপুর’, ‘ব্যক্তিগত পরিখা’, ‘ব্যাটারি-চালিত ইচ্ছা’, ‘নামহীন’, ‘অহেতু বুদ্বুদ’, ‘কয়েকটি সূর্য পেরিয়ে’, ‘রোদের ফালি তরমুজে’, ‘লুণ্ঠিত একা’। গল্পের বই ‘বড়দের মাছমাংস’। উপন্যাস ‘সে ও তার শুয়োর’। নাটকের বই ‘নিহত দিনের নাট্য’। যৌথ সম্পাদনা করেছেন ‘তিন বাঙলার শূন্যের কবিতা’।
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?জাহিদ সোহাগ: দুটি বই প্রকাশের সম্ভাবনা আছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: মনোজগতের সঙ্গে মিল রেখে বই খুঁজুন: মনদীপ ঘরাই
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?জাহিদ সোহাগ: কোনো কাজে লাগবে না, তবুও বলি, ধুলা ও দৃশ্য দূষণমুক্ত একটি বইমেলা চাই। প্রতিদিন কী কী বই আসছে বা মোড়ক উন্মোচনের ঘোষণার জন্য মাইক ব্যবহার বন্ধ রাখা জরুরি। জরুরি প্রয়োজনেই কেবল মাইক ব্যবহার করুন। মাইকের ঘোষণা শুনে কেউ বই কেনে না বা মোড়ক উন্মোচনের স্থানে উঁকি দেয় না।
খাবারের দোকান তো দিন দিন অশ্লীলতার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে; কেবল চা-কফি ও নাস্তার দোকান রাখুন। এছাড়া মেলার পরিসর বাড়াতে হবে এবং নানা স্থানে বসার জায়গা রাখতে হবে। গাড়ি পার্কিং নিয়ে সবারই সমস্যা হয়; একবার টিকিট কেটে গাড়ি-বাইক রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেই ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসংগতি চোখে পড়েছে?জাহিদ সোহাগ: উপরে যা-যা বললাম; তা-ই অসংগতি। এই অসংগতি যেন বইমেলার অলংকার হয়ে গেছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: মেলাকে পাঠক উপযোগী করা হোক: খান মুহাম্মদ রুমেল
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?জাহিদ সোহাগ: বাড়ছে হয়তো। নন-ফিকশন ও অনুবাদের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়া ভাইরাল লেখকরা বই বিক্রিতে প্রভাব তো ফেলছেনই। তবে কাগজ ও ছাপার খরচ বেড়ে যাওয়ায় এই বই বিক্রি খানিকটা হোচট খেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব তো আগামী বইমেলায় পড়বেই।
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?জাহিদ সোহাগ: যে বেশি খরচ করবে, সে বেশি প্রচার পাবে; যে বেশি মিডিয়াকে ম্যানুপুলেট করবে, সে বেশি প্রচার পাবে। এই প্রচার-খরচের দায় কে বহন করে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লেখক। আমি এসবকে ভালো-মন্দ কোনো চোখেই দেখি না; তবে মনে করি, লেখকের নিজের লেখার দিকেই মনোযোগ রাখা উচিত। শেষ বিচারে লেখাই লেখককে বাঁচায়, প্রচার বা সিন্ডিকেট নয়। আর সবার হাতে ফেসবুক আছে, ফেসবুক নিজেই ব্যবহৃত হওয়ার জন্য বসে আছে। ভিখিরির ভরসা যেমন ফুটো থালা, অর্থ ও ক্ষমতাহীন লেখকের ফেসবুক।
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন? জাহিদ সোহাগ: পাঠককে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা রাখি না। পাঠক তো একই সঙ্গে ক্রেতা, ক্রেতা কেন বিক্রেতার কথা শুনে ফাঁদে পড়বেন!
আরও পড়ুন: মানসম্মত বই বেশি প্রকাশ হোক: তাহমিনা শিল্পী
আমাদের মতো একটি পচনশীল দেশে বইমেলার পাঠক তো স্টলের সামনে বই নিয়ে সেলফি তোলার মধ্যেই আটকে আছে; পাঠক তৈরি হওয়ার কোনো বাস্তবতাই তো সমাজ ও রাষ্ট্রে নেই। জেলা ও উপজেলার লাইব্রেরির দিকে তাকালেই তো দেখতে পাবেন। ঢাকায় ৩ কোটি মানুষের বসবাস, বইয়ের দোকান কয়টা? সৃজনশীল বইয়ের মুদ্রণ ১০০ কপিতে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশিদের টাকা খরচ করার সুনাম আছে, তবে বই কেনার নেই; বই এমন একটি পণ্য যেটির ভোক্তা হতে হলে শিক্ষিত হয়ে উঠতে হয়। এখন শিক্ষিত হওয়ার পথই কঠিন।
এসইউ/এমএস