আইন-আদালত

চার বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা তাহেরের কারাদণ্ড

রাজধানীর নিউমার্কেট থানার ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মো. আবু তাহের দাইয়া। চার বছর আগেই মারা যান তিনি। চার বছর আগে নিউমার্কেট এলাকায় মাথা ঘুরে পড়ে গেলে মাথায় রক্তক্ষরণ হয়। এতে তিনি মারা যান। তবে মারা যাওয়ার চার বছর পর এক মামলায় আবু তাহের দাইয়াকে দেড় বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত। মৃত ব্যক্তিকে এভাবে সাজা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আবু তাহেরের পরিবার। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবীও। তবে মামলার নথিতে তার মৃত্যুর সংবাদ বা প্রতিবেদন নাই।

Advertisement

সোমবার (২০ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ তাকে এ কারাদণ্ডাদেশ দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি মৃত তাহেরকে সাত হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: একদিনে বিএনপির সম্মুখসারির ৫ নেতাসহ ১৩৬ জনের সাজা

এ বিষয়ে মৃত তাহেরের ছেলে এহসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাবা রাজনীতি করতেন। রাজনীতি করতে গিয়ে মাথায় অনেক আগে আঘাত লাগে। আঘাত লাগার কারণে তার একটি ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। চার বছর আগে নিউমার্কেট এলাকায় মাথা ঘুরে পড়ে যান। এতে মাথায় রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান তিনি। মারা যাওয়ার এত বছর পরে বাবাকে আদালত সাজা দিয়েছেন, এটা শুনে খারাপ লাগলো। একজন মৃত ব্যক্তিকে কীভাবে আদালত সাজা দেন আমার জানা নেই। এটা আমাদের মর্মাহত করেছে।’

Advertisement

আসামিপক্ষের আইনজীবী জাকির হোসেন জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, ‘চার বছর আগে মারা যান আবু তাহের দাইয়া। আজ নিউমার্কেট থানার মামলায় তার দেড় বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একজন মৃত ব্যাক্তিকে আদালত কীভাবে সাজা দিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।’

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শহিদ উদ্দিন বলেন, এ মামলার আসামি আবু তাহের প্রথম থেকে পলাতক। তার অনুপস্থিতিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়। তিনি মারা গেছেন কি না এ বিষয়ে আদালতের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। কোনো আইনজীবী বা তাহেরের পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুর বিষয়ে আদালতকে অবগত করেননি। আদালতকে এ বিষয়ে জানানো উচিত ছিল। মামলার নথি অনুযায়ী আদালত বিচার করে থাকেন। আইনানুযায়ী কেউ মারা গেলে সাজার দায় থেকে স্বাভাবিকভাবেই অব্যাহতি লাভ করবে।

আরও পড়ুন: যুবদলের সাবেক সভাপতি নীরবের আড়াই বছরের কারাদণ্ড

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় মামলায় হয়। ওই মামলায় এজাহারনামীয় সাত নম্বর আসামি ছিলেন আবু তাহের। মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ২১ জুলাই আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ মামলায় বিচার চলাকালীন চার বছর আগে তাহের মারা যান।

Advertisement

তবে মামলার বিচার শেষে আবু তাহের, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ ১৪ জনকে দেড় বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে দণ্ডবিধি ১৪৩ ধারায় আসামিদের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। অপরদিকে দণ্ডবিধি ৩২৩ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। এ অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরও দুই মাসের কারাভোগ করতে হবে।

একদিনে বিএনপির সম্মুখসারির ৫ নেতাসহ ১৩৬ জনের সাজাপুলিশের কাজে বাধা ও নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলায় আজ সোমবার বিএনপির সম্মুখসারির পাঁচ নেতাসহ ১৩৬ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা সোহেল-হেলাল-সপুর কারাদণ্ড

সম্মুখসারির পাঁচ নেতার মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে দুই মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ ১৩২ জনকে বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের পৃথক আদালত এসব মামলার রায় ঘোষণা করেন।

জেএ/কেএসআর