দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এখন মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পালা। বিএনপি এখনো নির্বাচনে না অংশ নেওয়ার ব্যাপারে অনড়। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা। জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ নেবে বলেই শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বড় একটি অংশ আইনজীবী। দলের বাইরে গিয়েও অনেক আইনজীবী নির্বাচন করতে আগ্রহী।
Advertisement
প্রধান দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে থেকে নির্বাচনে আগ্রহী আইনজীবী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, অ্যাডভোকেট মুহসীন রশিদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট এএসএম মোর্শেদ, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ব্যারিস্টার সিগমা হুদা ও ব্যারিস্টার অন্তরা সেলিমা হুদা, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম।
আরও পড়ুন>ধানের শীষ নিয়ে এমপি হতে চান যেসব আইনজীবী
মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা। তিনি নতুন নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে মনোনয়ন নিতে চান এবার।
Advertisement
ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাবেক নেতা ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তিনি বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত ল’ইয়ার ফ্রন্টের কো-কনভেনর। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আমাদের নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। কারণ এখন আমরা মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছি।
তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে যে সংগ্রাম চলছে, আমাদের দাবি অনুযায়ী, যদি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয় তা হলে সে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে, এছাড়া না। অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১৪, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলা। আসনটি ২০০৮ এর আগে চট্টগ্রাম-১৩ এর অংশ ছিল। এ আসনের সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমানে এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ।
বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত ল’ইয়ার ফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সুপ্রিম কোর্ট বারের গঠিত এডহক কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মহসিন রশিদের বসবাস ঢকার-৬ আসনে। তিনি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে এ আসন থেকে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মহসিন রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে, ভোট করবো না।
ঢাকা-১৭ আসনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন সাবেক সংসদ সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। এর আগে আন্দালিব রহমান পার্থ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হয়ে ভোলা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। এর আগে ভোলা থেকে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন আন্দালিব রহমান পার্থ।
Advertisement
ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, দলটির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। তিনি এ আসন থেকে এর আগে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও-পাগলা) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য পদে ভোট করতে চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম মোর্শেদ আহম্মেদ। তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) যুগ্ম মহসাচিব। তিনি জানান, সরকার পতন ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে একমত লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। পরিস্থিতি যদি ভালো হয় এবং দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তা হলে মনোনয়ন দিলে ভোট করবেন বলে ঠিক করেছেন। তিনি এর আগে গফরগাঁওয়ের সাবেক (১৯৮৫-১৯৯০ সালের) উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন।
ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে রয়েছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী ব্যারিস্টার সিগমা হুদা ও কন্যা ব্যারিস্টার অন্তরা সেলিমা হুদা। তাদের কথা হলো আগামী নির্বাচনের পরিবেশ ভালো হতে হবে। অংশগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তারা। তবে তারা কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন বা আদৌ করবেন কি না সেটি নিশ্চিত করেননি। ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠা করেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ব্যারিস্টার অন্তরা সেলিমা হুদা।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করতে চান তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। এর আগে তিনি নারায়নণগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বলে জাগো নিউজকে জানান। তিনি বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জ- ১ আসন থেকে ২০০৮ সালের সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। এর পরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকেও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য পদে এবং সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ‘যদি পরিবেশ ভালো হয় নির্বাচনে অবশ্যই আমরা যাবো।’ সেই নির্বাচন কি আপনারা জোটবদ্ধ হয়ে না এককভাবে ৩০০ আসনে করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে।
পিরোজপুর-১, পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে এ আসনটি গঠিত। এ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মুখপাত্র ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেন। তিনি প্রায়ই এ আসনের তিন উপজেলায় গণসংযোগ করছেন।
আরও পড়ুন>দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন/ নৌকা নিয়ে ভোটে লড়ার প্রস্তুতি অর্ধশত আইনজীবীর
লক্ষীপুর -২ আসনে বিকল্পধারার মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট এডহক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল। তিনি বলেন, ১৫ বছরে ধরে মানবাধিবকার, সাংবিধানিক অধিকার, ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে আছি। যদি পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক হয়, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আর দল থেকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে আছে। বিএনপি, সমমনা রাজনৈতিক দলের যদি দাবি পূরণ হয় প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন হলে ভোট করবো।
সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম। পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অংশগ্রহণ করবেন বলে জাগো নিউজকে জানান তিনি।
মাগুরা-১ (সদর ও শ্রীপুর) আসনে সংসদ সদস্য পদে বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. কাজী রেজাউল হোসেনের ভোট করার কথা রয়েছে।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল আওয়াল যশোর-২ থেকে ভোট করতে চাচ্ছেন।
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) বাংলাদেশ কংগ্রেসের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ খানের এ আসন থেকে ভোট করার কথা রয়েছে।
খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের বাংলাদেশ কংগ্রেসের সিনেট সদস্য অ্যাডভোকেট দেবদাস সরকার। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছেন। দলের সবুজ সংকেত পেতে অব্যাহত চেষ্টা চলছে তার।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা এরই মধ্যে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। তারা সভা, সমাবেশ, উঠোন বৈঠক, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং তাদের সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।
এফএইচ/এসএনআর/এএসএম