জাতীয়

‘পরিবেশ ও কৃষিজমির ক্ষতি করে, এমন প্রকল্প বন্ধ করতে হবে’

দুই দিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলনে ৩৩দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পরিবেশ ও কৃষি জমির ক্ষতি করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি করতে হবে।

Advertisement

শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুই দিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা ও দাবি তুলে ধরা হয়।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, স্থানীয় বাস্তুসংস্থান ও মানুষের ওপর জীবাশ্ম জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রকল্পের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কর্মসংস্থান হারানো ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে নতুন কর্মসংস্থান নয়, পূর্বের কর্মসংস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ধনী দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহু পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। জীবাশ্ম ও অপরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে ফিরে আসতে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সহায়তা বাড়াতে হবে।

Advertisement

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, সাফারি পার্কের নামে বনাঞ্চল ধ্বংশ ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত বন্ধ করতে হবে। নদীগুলোকে ক্ষয়, বন্যা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিভিন্ন সমাধানমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসতি থেকে উচ্ছেদের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসীদের বাসস্থান ও জীবণধারণের উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। যথাযথ পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্যায়ন ছাড়াই আগ্রাসী শিল্পায়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।

আরও পড়ুন>> অনুমতি ছাড়া কেউ গাছ কাটতে পারবে না: মেয়র আতিক

প্রস্তাবনায় শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে আয়োজিত সমাবেশে সারাদেশ থেকে আসা ভুক্তভোগী নানা শ্রেণি-পেশার জনগণ সমস্যা ও সংকট চিত্র তুলে ধরেছেন। ওই সব বিষয়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ দিয়েছেন। যার ভিত্তিতে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো আগামী জলবায়ু সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতার অভাবে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি ও ক্ষতিপূরণে দাবি বিষয়টি কোনভাবেই অনুদানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। যুগের পর যুগ ধরে ধনী দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ ও ভ্রান্ত উন্নয়ন নীতির কারণে আমরা বরাবরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এছাড়াও দেশের ভেতরে পরিবেশ সংকটাপন্ন জায়গাগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং দখল-দূষণের কারণে জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ছে। এসব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা ও সংকট সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Advertisement

এপিএমডিডি’র লিডি ন্যাকপিল বলেন, জীবাশ্ব জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসা বিষয়টির সঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। জীবাশ্ব জ্বালানি সস্তা হলেও নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে নিয়মিত জ্বালানি কিনতে হয় না বলে এটাতে তুলনামূলক খরচ কম ও নিরাপদ। ফলে অনবায়ণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের জন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই ক্ষতিপূরণ কোনো দান-দক্ষিণা নয়, এটা ন্যায্যপ্রাপ্য।

গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড ওয়েল নেটওয়ার্ক’র স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম বলেন, জলবায়ু সংকট মূলত, জীবাশ্ম জ্বালানি সংকট, যা মোট বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ৯১ ভাগ নিঃরণের জন্য দায়ী। এছাড়াও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে এলে শুধুমাত্র যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজে আসবে তা নয়। জনস্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সহজলভ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে এশিয়ান পিপলস্ মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র (এপিএমডিডি) সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল, গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড ওয়েল নেটওয়ার্ক’র স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম, জাপান থেকে আগত প্রতিনিধি মাকিকু আরিমা, ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আরএএস/ইএ/এএসএম