দেশজুড়ে

বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে বন্ধ লঞ্চ, নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকটে গাইবান্ধার বালাসী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌরুটে বন্ধ লঞ্চ চলাচল। ফলে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে যাত্রীদের। অতিরিক্ত সময় ব্যয়ের পাশাপাশি যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়াও।

Advertisement

এ রুটে উত্তরাঞ্চলের আট জেলার কয়েক হাজার মানুষ নিয়মিত চলাচল করে। এ অবস্থায় যাত্রী ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর তাই এ নৌ-রুটকে সচল রাখতে দ্রুত ড্রেজিংয়ের দাবি সংশ্লিষ্টদের।

বোনারপাড়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, নদের এপারে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের তিস্তামুখঘাট আর ওপারে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট। ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে এ দু’ঘাটে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চল-রাজধানীর রেল যোগাযোগ চালু করেন। উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলার মানুষ ট্রেনযোগে বোনারপাড়া রেল জংশন হয়ে তিস্তামুখ ঘাটে এরপর তিস্তামুখ ঘাট থেকে ফেরিতে পার হয়ে ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যেতেন।

নাব্য সংকটে তিস্তামুখ ঘাটটি স্থানান্তর করা হয় একই উপজেলার বালাসীঘাটে। সেখানে থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালের জুন মাসে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হয়। ফলে ২০০০ সাল থেকে এ রুটে ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। অকার্যকর হয়ে পড়ে বালাসীঘাট।

Advertisement

রেল ও ফেরি বন্ধ হওয়ার দীর্ঘ ২২ বছর পর গত বছরের এপ্রিলে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে চালু হয় লঞ্চ সার্ভিস। বর্ষা মৌসুমে ৩-৪ মাস লঞ্চ চললেও শুকনো মৌসুমের শুরুতেই ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকট দেখা দেয়। বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর জেগে ওঠায় বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল। ফলে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে চলতে হচ্ছে যাত্রীদের। একইসঙ্গে বাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি সময়মতো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না তারা।

নৌযাত্রী আমজাদ আলী বলেন, বর্ষা মৌসুমে বাহারাদুরাবাদ ঘাট থেকে নৌকায় বালাসীঘাটে আসতে সময় লাগতো আড়াই ঘণ্টার মতো। শুকনো মৌসুমে সময় লাগছে সাড়ে ৩ ঘণ্টা থেকে ৪ ঘণ্টা। কারণ নদের বিভিন্নস্থানে পলি জমে ডুবোচর জেগে উঠেছে। এছাড়া মূলঘাট থেকে প্রায় ২ থেকে আড়াই মাইল দূরে নৌকা থেকে যাত্রীরা নেমে হেঁটে আসতে হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে গেছে।

বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটের নৌকা চালক আবু হাসান জাগো নিউজকে বলেন, নদীতে পানি না থাকায় আমরা সময় মতো পৌঁছাতে পারি না। আমাদের এক ঘণ্টার জায়গায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। কখনো কখনো বিভিন্ন চরে গিয়ে নৌকা আটকে যায়। এতে বিপদে পড়তে হয়। কখনো যাত্রীদের সহযোগিতা নিয়ে আবার কখনো নিজেরা নৌকা ঠেলে চলাচল স্বাভাবিক করি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালাসীঘাটের একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘এ নদে ড্রেজিং অনেকটাই লোক দেখানো, কাজের কাজ কিছু হয় না। নদের পলিমাটি কাটলেও নাব্যতা না থাকায় লঞ্চ চলাচলে সমস্যা রয়ে গেছে।’

Advertisement

বালাসীঘাটের লঞ্চ মালিক মো. আরিফ মিয়া রিজু জাগো নিউজকে বলেন, বছরে তিন-চার মাস লঞ্চ স্বাভাবিকভাবে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে চলাচল করতে পারে। কিন্তু বাকি সময়গুলো লঞ্চের স্টাফদের নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। লঞ্চ চলাচলের জন্য নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং করতেই হবে। সার্বক্ষণিক একটা ড্রেজার প্রয়োজন। তাহলেই সারাবছর এ রুটে আমরা লঞ্চ চালাতে পারবো। ফলে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা স্বল্প সময়ে ও অল্প খরচে সহজেই ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে।

লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি মো. মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, নাব্য সংকটের নদীপথে ডুবোচরের কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছে। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করছে।

তিনি আরও বলেন, ছোট লঞ্চের জন্য প্রয়োজন ছয়-সাত ফুট পানি। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বের বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটের অন্তত ২০-২৫টি পয়েন্টে পানির নাব্যতা কমে নৌযান চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে।

এ বিষয়ে বালাসী লঞ্চঘাট ইজারাদার মোস্তাক আহম্মেদ রঞ্জু জাগো নিউজকে বলেন, বালাসী ঘাটের ইজারা নিয়ে আমরা বিপদে আছি। নাব্য সংকটে এরই মধ্যে বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অল্প কিছু ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকা চলাচল করছে। তাও কিছু কিছু জায়গায় বালুচরে আটকে যাচ্ছে। একদিকে সময় বেশি লাগছে অন্যদিকে নৌকার তেল খরচও বেড়েছে। এছাড়া যাত্রীরা সময়মতো বাহাদুরাবাদ না পৌঁছাতে পারায় ট্রেনও ধরতে পারছেন না।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, নদের তলদেশে পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের প্রস্থ ঠেকেছে ১৬-১৮ কিলোমিটারে। এর কারণ হচ্ছে নদে শত শত চর-ডুবোচর জেগে ওঠা। এতে অসংখ্য চ্যানেল সৃষ্টি হয়েছে। নদীর নাব্য সংকটে নৌরুটগুলো বন্ধ। আমরা নদী প্রতিরক্ষামূলক কাজটি করে থাকি। ড্রেজিংয়ের কাজটি করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

বিআইডব্লিউটিএর বালাসীঘাটে ড্রেজিং কাজের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. মোতাব্বের হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারবো না। নদী খননে বর্তমানে একটি ড্রেজার কাজ করছে।

শামীম সরকার শাহীন/এসজে/এএসএম