‘বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই,/ মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?’ কবিতার চরণ দুটিতে বাঁশ বাগান নিয়ে গ্রামীণ পরিবেশের সুন্দর একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। আমাদের গ্রামবাংলার প্রকৃতি মানেই ঝোঁপঝাড়, জঙ্গল আর বাঁশঝাড়ে ঢেউ খেলানো সবুজ প্রকৃতি। বাড়ির আঙিনায় বাঁশঝাড়ের ঐতিহ্য গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপ।
Advertisement
তবে নির্বিচারে বাঁশ কাটা ও সেই অনুপাতে বাঁশ গাছ রোপণ না করার কারণে ক্রমশই কমে যাচ্ছে বাঁশঝাড়। ফলে প্রকৃতি থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দুর্যোগ প্রতিরোধক ও পরিবেশের পরম বন্ধু বাঁশঝাড়। বাঁশের অভাবে বেকার হয়ে যাচ্ছেন কুটির শিল্পের কারিগররা।
একসময় গ্রামীণ জনপদে বাঁশঝাড় ছিল না—এমনটা কল্পনাও করা যেত না। যেখানে গ্রাম; সেখানেই বাঁশঝাড়। বিশ্বে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির বাঁশ আছে। বাংলাদেশেই জংলি ও আবাদি প্রকৃতির ২৬ প্রজাতির বাঁশ আছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো এসব বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড়কে বাড়ির পর্দাও মনে করা হতো।
আরও পড়ুন: সমুদ্রের অলস প্রাণী শাপলা পাতা মাছ
Advertisement
টিনের ঘর নির্মাণ, ধানের গোলা তৈরি, বিয়ে বাড়ির প্যান্ডেল, নাটকের মঞ্চ, মই, ঝুড়ি, খাঁচা, পাটি, ঝাড়ু, কুলা, হাতপাখা, মাদুর, বাঁশের দোচালা ও চারচালা ঘর, ঘরের খুঁটি, চাটাই, সোফা, বুকসেলফ, ছাইদানি, ফুলদানি, ছবির ফ্রেম, নুনদানি, পানদানি, চুনদানি ইত্যাদি নিত্যদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরির কাজে বাঁশের বিকল্প ছিল না।
এছাড়া বাঁশ দিয়ে রকমারি আসবাবপত্র সোফা, চেয়ার, টেবিল, খাট, ওয়্যারড্রব তৈরি করে কাঠের চাহিদা পূরণ করা হয়। বাজালি বাঁশ দিয়ে বাঁশি তৈরি হয়। বাদ্যযন্ত্র হিসেবে বাঁশের বাঁশির কদর যুগ যুগ ধরেই শিল্পী সমাজে। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজনীয়তা থাকবেই। শক্ত প্রকৃতির বরাগ বাঁশ দিয়ে গ্রামগঞ্জের সাঁকো নির্মাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হয়।
বাঁশ গাছ অন্য যে কোনো গাছের তুলনায় দ্রুত সময়ে ক্ষতিকারক কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস শুঁষে নেয়। এর শিকড় মাটি ক্ষয়ে যাওয়া রোধ করতে সক্ষম। শীতল ছায়া ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঁশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবেশের ক্ষতি বাঁচাতে এর বিকল্প নেই। সুতরাং বাঁশঝাড় না কেটে বেশি করে বাঁশ লাগানোর ওপর জোর দেওয়া উচিত।
এসইউ/এমএস
Advertisement