একুশে বইমেলা

বইমেলায় শিশুপ্রহরের সময় বাড়ানো হোক: কামাল মুস্তাফা

কামাল মুস্তাফা ১৯৯১ সালে ১৭ জুন যশোর শহরের শংকরপুরের আশ্রাম রোডে জন্মগ্রহণ করেন। যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে অনার্স শেষ করেন। লেখালেখির শুরু ছোটবেলা থেকেই। প্রথম লেখা প্রাকাশিত হয় ২০০৪ সালে দক্ষিণ অঞ্চলের জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক গ্রামের কাগজে। শিশু-কিশোরদের সৃজনশীল মনন গঠনের লক্ষ্যে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে শিশুতোষ পত্রিকা ‘দোলন’। ছোট কাগজ সম্পাদনার আগ্রহ থেকেই হয়েছেন প্রকাশক। প্রতিষ্ঠা করেছেন দোলন পাবলিকেশন। তিনি সমাজসেবামূলক সংগঠন ‘গর্জে ওঠো’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পাশাপাশি আলোকচিত্রশিল্পী হিসেবে সুনাম আছে তার। তার শিশুতোষ ছড়ার বই ‘আমার ছড়া ছন্নছাড়া’ প্রকাশ হয় ২০১৯ সালে।

Advertisement

সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?কামাল মুস্তাফা: ২০২৪ সালের একুশে বইমেলায় দোলন পাবলিকেশন থেকে ১৫টি শিশুতোষ বই প্রকাশের পরিকল্পনা চলছে। ডিসেম্বরের ভেতরে চারটি বইয়ে একটি সিরিজের কাজ শেষ হবে। সিরিজটি মূলত বাংলা বর্ণমালার। আশা করি শিশুদের বাংলা বর্ণমালার সিরিজটি বেশ পছন্দ হবে। কারণ সিরিজটি গতানুগতিক বাংলা বর্ণমালার বইগুলো থেকে একটু আলাদা।

আরও পড়ুন: প্রাণ জাগাতে বইয়ের বিকল্প নেই: ইমরুল ইউসুফ

Advertisement

জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?কামাল মুস্তাফা: পৃথিবীতে যত রকমের মেলা আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর মেলা হচ্ছে আমাদের অমর একুশে বইমেলা। বইমেলা আমার কাছে অনেকটা ঈদের মতো। ভালো লাগে যখন দেখি এটা লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের মিলনমেলার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তবে ছুটির দিনে শিশুপ্রহর থাকলেও সেটা খুব কম সময়ের জন্য। আমি চাইবো শিশুপ্রহরের সময় বাড়ানো হোক। স্থায়ীভাবে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা কিংবা আনন্দ করার জন্য শিশু চত্বরের মধ্যেই স্থায়ী শিশু কর্নার হোক।

জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসংগতি চোখে পড়েছে?কামাল মুস্তাফা: বেশ কিছু অসংগতি নজরে পড়েছে। মেলার পরিধি বড় হওয়ায় স্টল খুঁজে পেতে বেশ জটিলতা দেখা যায়। বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য এটি কষ্টদায়ক। সে ক্ষেত্রে স্টল সারির নাম্বারিং একটু পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হবে। প্রচুর ধুলাবালি উড়তে দেখা যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, মেলার মাঠে এবং স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। একসময় ইট বিছিয়ে দেওয়া হতো। প্রতিদিন মেলা শুরুর আগে ফায়ার সার্ভিস দ্বারা পুরো মেলার মাঠে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হতো।

লিটল ম্যাগাজিন যেহেতু সাহিত্যিকদের ‘আঁতুরঘর’; সেহেতু এই স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরই লিটল ম্যাগের স্থান নিয়ে বেশ অভিযোগ দেখা যায়। স্থানটা মেলার মাঝখানে অথবা মুক্তমঞ্চের পাশে হতে পারে। গ্রন্থ উন্মোচন কেন্দ্র দেখলে আমার মনে হয়, সেখানে মাইকিং করে আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে। কারণ সেখানে যে মাইক ব্যবহার হয়; সে মাইক এখন গ্রামের যাত্রাপালায়ও ব্যবহার হয় না। মাইকের ঘ্যার ঘ্যার শব্দে কিছুই বোঝা যায় না। সে ক্ষেত্রে গ্রন্থ উন্মোচন কেন্দ্রে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। খাবারের দোকান বেশি হওয়ায় মাঝে মাঝে ভুলে যাই—বইমেলায় আছি নাকি পুরান ঢাকায় বিরিয়ানির দোকানগুলোর সামনে আছি। দোকান যদি রাখতেই হয়, তবে খেয়াল রাখা দরকার—যাতে বইমেলার প্রাণ নষ্ট না হয়।

আরও পড়ুন: সারাবছরই বইয়ের প্রচার করা উচিত: ফখরুল হাসান

Advertisement

জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?কামাল মুস্তাফা: বইয়ের বিক্রি বেড়েছে। তবে বইয়ের প্রচারণা যেভাবে হয়, সে তুলনায় কম। বিষয়টি এমন—আগে বইয়ের প্রচারণার জন্য অনেক মাধ্যম ছিল না। কিন্তু এখন একটি বই প্রকাশিত হলে লেখক এবং প্রকাশক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালান। হাজার হাজার মানুষ বইটি সম্পর্কে জানতে পারে। কিন্তু সে তুলনায় বইয়ের বিক্রি খুবই কম।

জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?কামাল মুস্তাফা: বইয়ের প্রচারণাকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। একটি বই প্রকাশিত হলে বইটি প্রচারণার জন্য প্রকাশকের যেমন গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন; তেমনই লেখকেরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হবে বইয়ের খবর।জানাতে হবে পাঠক কেন বইটি পড়বেন?

জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?কামাল মুস্তাফা: পাঠকের জন্য বলবো, বইমেলায় আসুন এবং শিশুকে নিয়ে আসুন। আমরা জানি, শিশুদের অন্তর ফুলের মতো পবিত্র এবং সুন্দর। পবিত্র এবং সুন্দর অন্তরটাকে শুদ্ধতমভাবে গড়ে তােলার দায়িত্ব মা-বাবা এবং শিক্ষকদের। মেলার মাঠে শিশুকে ছেড়ে দিন। দেখবেন শিশুটি অনেক বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হবে। শিশুটির পছন্দের অন্তত দশটি বই কিনে দিন।

এসইউ/এমএস