সকাল ১০টা। মহাখালী বাস টার্মিনালের ভেতরে একটি বেঞ্চে শুয়ে আছেন শেরপুরের জয়নাল মোল্লা। তার মাথার পাশেই বড় দুটা ব্যাগ। এরমধ্যে কাপড়চোপড়সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। তিনি শুয়ে শুয়ে কি যেন চিন্তা করছেন, আবার কিছুক্ষণ পরপর এদিক-ওদিক দেখছেন।
Advertisement
এগিয়ে গিয়ে কথা হয় জয়নাল মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ঢাকার মোহাম্মদপুরে মেয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) গ্রামে যাবেন বলে সকাল ৯টায় মহাখালী বাস টার্মিনালে আসেন। ‘সোনার বাংলা পরিবহনে’র একটি বাসের টিকিট কাটেন। তবে পর্যাপ্ত যাত্রী পেলে বাস ছাড়বে বেলা ১১টায়। তাই টার্মিনালে বেঞ্চে শুয়ে আছেন জামাল।
সোনার বাংলা পরিবহনের সুপারভাইজার মানিক মিয়া বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-শেরপুর রুটে সোনার বাংলার ১৮টি বাস নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে। এসব বাস প্রতিদিন সকালে যাত্রী নিয়ে শেরপুর যায়, আবার ঢাকায় ফেরে বিকেলে। কিন্তু হরতাল-অবরোধে যাত্রী নেই। সকাল পৌনে ৯টায় ২২ জন যাত্রী নিয়ে একটা বাস ছেড়ে গেছে। এ বাসের আরও ১২টা আসন ফাঁকা ছিল। এখন বেলা ১১টার পর আরেকটা বাস ছাড়ার কথা। তবে পর্যাপ্ত যাত্রী পেলে সময় মতো বাস ছাড়বো। না হলে আরও অপেক্ষা করতে হবে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে আধা ঘণ্টা পরপর একটি করে বাস শেরপুরের উদ্দেশ্য ছেড়ে যেতো।
সোনার বাংলা বাসের মতো এভাবে মহাখালী বাস টার্মিনালের ভেতরে-বাইরের সড়কে শত শত বাস পার্কিং করা রয়েছে। কিন্তু টার্মিনালে দূরপাল্লার যাত্রী নেই। টার্মিনালের সামনে বাসচালক বা তার সহকারীদেরও নেই হাঁকডাক।
Advertisement
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। অবরোধে মহাখালী বাস টার্মিনালে পর্যাপ্ত যাত্রী নেই। ফলে এ টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস তেমন ছাড়ছে না।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটছে। আতঙ্কে মানুষ দূরের গন্তব্যে যাচ্ছেন না।
যদিও গত মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে বাস চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী বাস টার্মিনালের ভেতর এবং বাইরের সড়কে শত শত বাস পার্কিং করে রাখা। অধিকাংশ বাসের ভেতর চালক ও সহকারীরা ঘুমাচ্ছেন। টার্মিনালে যাত্রী নেই বললেই চলে। এরমধ্যে ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের কাউন্টারে দু-একজন করে যাত্রী দেখা গেছে।
Advertisement
ময়মনসিংহগামী যাত্রী রাকিব হাসান সকাল ১০টার দিকে টিকিট কেটে এনা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। আলাপকালে তিনি বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনালের এমন চিত্র আগে কখনো দেখিনি। পুরো টার্মিনাল ফাঁকা, যাত্রী নেই। টিকিট কাউন্টারের সামনেও নেই ভিড়।
জানতে চাইলে এনা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সকাল ৬টা থেকে ১০টার মধ্যে ৩০টিরও বেশি বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ে। কিন্তু আজ সকাল থেকে টার্মিনালে যাত্রী কম। চারটা বাস যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছেড়েছে। ঢাকার বাইরে থেকেও বাস কম আসছে।
এদিকে মহাখালীর আমতলী থেকে নাবিস্কো পর্যন্ত সড়কের দুপাশে শতাধিক দূরপাল্লার বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ শাহ ফতেহ আলী, এনা পরিবহন, সৌরব এক্সপ্রেস, মা-বাবার দোয়া পরিবহন, শাহওন পরিবহন, প্রিয়ন্তী প্রিয়শী পরিবহন, সুপার ডিলাক্স, সোনার ময়না পরিবহন, শেরপুর পরিবহনের বাস আড়াআড়ি করে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে এককভাবে এনা পরিবহনের বাসের সংখ্যাই বেশি। এসব বাস আড়াআড়ি করে রাখার কারণে সকাল ৭টার পর থেকে সড়কে থেমে থেমে যানবাহন চলছে।
সুপার ডিলাক্স পরিবহনের সুপারভাইজার মাহবুব আলম বলেন, টার্মিনালে যাত্রী নেই। যাত্রী পেলে গন্তব্যে যাবো। গাড়ির চাকা ঘুরলেই পরিবহন শ্রমিকদের পেটে ভাত জোটে।
এমএমএ/জেডএইচ/এএসএম