জাতীয়

রাজধানীতে যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক, জনমনে আতঙ্ক

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিন রাজধানীতে যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক দেখা গেছে। সকাল থেকেই বাস, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, পণ্যবাহী গাড়ি, রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল খুবই কম। সকালে যাত্রীরাও ভোগান্তি ছাড়া নিজ গন্তব্যে যেতে পারছেন বলে জানিয়েছেন। তবে গণপরিবহনে যাতায়াতে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে বলে জানান তারা।  

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, আজিমপুর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসময় সায়েন্স ল্যাব মোড়ে যানবাহনের চাপ কিছুটা বেশি দেখা গেলেও মিরপুর রোডে চলাচল স্বাভাবিক ছিল।

সকাল সাড়ে ৮টায় মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গেটের সামনে মতিঝিলগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মোবারক হোসেন। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে নিজ গন্তব্যের বাসে ওঠেন। এর আগে মোবারক জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আজ সড়কে গাড়ি পাবো কি না এ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। তবে সকালে রাস্তায় এসে দেখি গাড়ি চলাচল স্বাভাবিকই আছে। এখন নিরাপদে গন্তব্যে যেতে পারলেই হলো।’

আরও পড়ুন>> অবরোধে ‘প্রায় ফাঁকা’ নিউমার্কেট, চিন্তিত ব্যবসায়ীরা

Advertisement

ধানমন্ডির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শরিফুল ইসলাম। সকাল ৯টায় মিরপুর-১ নম্বর থেকে আজিমপুরগামী একটি বাসে ওঠেন। রাস্তা ফাঁকা থাকায় ২০ মিনিটে তিনি ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সামনে নামেন।

আলাপকালে শরিফুল বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে যানজটবিহীন নগরীতে যাতায়াতে খুবই ভালো লাগে। মাত্র ২০ মিনিটে মিরপুর ১ নম্বর থেকে ধানমন্ডিতে আসা স্বপ্নের মতো লাগছে। তবে মনে আতঙ্ক কাজ করছিল। কারণ, হরতাল-অবরোধে বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে। তারপরও নিরাপদে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পেরেছি।’

সকাল সাড়ে ৯টায় ধানমন্ডির সিটি কলেজের বিপরীত পাশে নগর পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদপুর যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন এনামুল হক। কিন্তু ১০ মিনিট দাঁড়িয়েও তিনি নগর পরিবহনের বাস পাননি। পরে আজিমপুর-মোহাম্মদপুর রুটের ১৩ নম্বর বাসে ওঠেন তিনি।

বাসে ওঠার আগে এনামুল হক বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে ধানমন্ডির জিগাতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহনে প্রায়ই ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। কিন্তু তারপরও মানুষ জীবিকার তাগিদে বাসা থেকে বের হতে বাধ্য হন। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ সহিংস কার্যকলাপ পরিহার করে সুস্থ রাজনীতিতে ফিরতে হবে।’

Advertisement

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়া, রায়েরবাগ, কাজলাসহ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, সায়েদাবাদ, টিকাটুলী, গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। তবে কোনো কোনো রুটের বাসের সংখ্যা একটু কম। আবার কোনো কোনো রুটে বাসের সংখ্যা বেশি কিন্তু যাত্রী কম।

'

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবার অনেক বাসও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিল। রায়েরবাগ থেকে নিউমার্কেটের দিকে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা কম দেখা যায়। সে কারণে ওই রুটের দু/একটি বাস এলেই যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন। তবে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচলকারী গুলিস্তান রুটের অনেক বাস সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে যাত্রীর অপেক্ষা করছিল।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার দু/একটি বাসও চলাচল করতে দেখা গেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা, সিলেট, ফেনী, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রী নেওয়ার জন্য অনেক বাস অপেক্ষা করছে। দূরপাল্লার বাস ছাড়ার সংখ্যা অন্যান্য অবরোধের দিনের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন বাসমালিক ও শ্রমিকরা।

রাজধানীর গুলিস্তান এবং জিরো পয়েন্টেও স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। যানবাহনের চাপ থাকায় তা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজধানীর জিরো পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতাও চোখে পড়ে।

এমএমএ/ইএ/জিকেএস