# হরতাল-অবরোধে গুলিস্তান থেকে কুমিল্লার গৌরিপুর ও চান্দিনা রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখছে বিআরটিসি # গুলিস্তান কাউন্টারে টিকিট কিনতে গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা# বিআরটিসি বিএনপির হরতাল-অবরোধ সমর্থন করে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা
Advertisement
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা। গুলিস্তানের শহীদ মতিউর পার্কের দক্ষিণ ফটকের পাশে বিআরটিসি টিকিট কাউন্টারে বসে সস্ত্রীক বাসের অপেক্ষা করছিলেন মাহতাব আলী (৬২)। গন্তব্য কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুরে। কিন্তু আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকিট কাউন্টারে কাউকে পেলেন না। এখন বাড়ি যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায়।
আলাপকালে মাহতাব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছি। সাতদিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে ঢাকায় আসি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। এখন অনেকটা সুস্থ। গুলিস্তানে গিয়ে দেখি বিআরটিসির গৌরিপুর কাউন্টার ফাঁকা। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কারও দেখা পেলাম না। কাউন্টারের চেয়ার-টেবিলে তালা লাগানো, সামনে বাসও নেই। তাই বিকল্প ব্যবস্থায় কীভাবে বাড়ি যাবো এ নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন>> ‘অবরোধে দলগুলোর স্বার্থ হাসিল হয়, তারা জনগণের ভোগান্তি ভাবে না’
Advertisement
মাহতাব আলীর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কুমিল্লার আরেক গন্তব্য চান্দিনা কাউন্টারে বিআরটিসি বাসের টিকিট কাটতে যান আবু সাঈদ। সঙ্গে তার দুই ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রী। কিন্তু বিআরটিসির চান্দিনা কাউন্টারে তালা দেখে হতাশ তারা। পরে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডের একটি লোকাল বাসে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন।
বাসে ওঠার আগে আবু সাঈদ বলেন, ‘গত শুক্রবার সকালে ফার্মগেটে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেছিলাম। তখন বিআরটিসি বাসেই চান্দিনা থেকে ঢাকা গেছি। এখন দেখি গুলিস্তান বিআরটিসি কাউন্টারে বাস নেই, বাসের লোকজনই নেই। আশপাশের কয়েকজন দোকানি জানান, অবরোধে বিআরটিসি বাস যাত্রী পরিবহন করে না।’
হরতাল-অবরোধে গুলিস্তান-চান্দিনা বা কুমিল্লা রুটে যাত্রী পরিবহন করলে তেলের টাকাই ওঠে না। বাসে পর্যাপ্ত যাত্রী থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে এই রুটে বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শুক্র ও শনিবার যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক রয়েছে।– বিআরটিসি চান্দিনা ডিপোর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ আব্দুল কাদের জিলানী
গত ২৮ অক্টোবরের পর অঘোষিতভাবে টানা হরতাল-অবরোধে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে কুমিল্লার গৌরিপুর ও দাউদকান্দি রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রেখেছে বিআরটিসি। ফলে প্রতিদিন শত শত যাত্রী গুলিস্তানে বাস না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন>> হরতাল-অবরোধে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত, উৎকণ্ঠায় কোম্পানিগুলো
যাত্রীদের অভিযোগ, হরতাল-অবরোধে সরকার ও পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত যখন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিচ্ছে, তখনই এই দুটি রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখছে বিআরটিসি। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, বিআরটিসি কি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের সমর্থন করে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখছে?
তবে বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, চলমান হরতাল-অবরোধে আন্তঃজেলার প্রতিটি গন্তব্যে যাত্রী সংকট রয়েছে। ফলে আগে যেসব রুটে ১০টি বাস যাত্রী পরিবহন করতো, এখন সেখানে তিন-চারটি বাস চলে। আবার কিছু গন্তব্যে একেবারেই যাত্রী থাকে না। অল্প যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে গেলে তেলের টাকাই ওঠে না।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের এক দফা দাবিতে বুধবার (১৫ নভেম্বর) থেকে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের পঞ্চম দফার অবরোধ চলছে।
এদিন সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তানে শহীদ মতিউর পার্কের দক্ষিণ পাশের ফুটপাতে থাকা বিআরটিসির গৌরিপুর কাউন্টার ফাঁকা। কাউন্টারের চেয়ার-টেবিলে শিকল দিয়ে পেঁচিয়ে তালা লাগানো। কাউন্টারের পেছনের অংশে একটি ব্যানারে লেখা ‘বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিস: গুলিস্তান টু গৌরিপুর’। এ ব্যানারের নিচের অংশে একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। সেটিতে একাধিকবার কল দিয়েও বন্ধ পাওয়া যায়। অথচ কিছুক্ষণ পরপর কাউন্টারে টিকিট-বাস না পেয়ে যাত্রীদের ফিরে যেতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন>> অবরোধে সারাদেশে বাস-মিনিবাস চলবে: এনায়েত উল্যাহ
গৌরিপুরগামী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিআরটিসি একটি রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা। হরতাল-অবরোধে এ পরিবহনে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখার কোনো মানে হয় না। এতে চরম জনভোগান্তি হয়। বিষয়টি নিয়ে বিআরটিসির সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘গৌরিপুর থেকে গুলিস্তান বা গুলিস্তান থেকে গৌরিপুরে দিনে হাজারো যাত্রী বিআরটিসিতে যাতায়াত করেন। কুমিল্লার মধ্যে এই রুটটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেউ গুলিস্তান থেকে গৌরিপুরের বাসে উঠলে সহজেই কুমিল্লার হোমনা, তিতাস, মুরাদনগর, চাঁদপুরের মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, কচুয়ায় যাতায়াত করতে পারেন।
বিআরটিসি একটি রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা। হরতাল-অবরোধে এ পরিবহনে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখার কোনো মানে হয় না। এতে চরম জনভোগান্তি হয়। বিষয়টি নিয়ে বিআরটিসির সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।– গৌরিপুরগামী যাত্রী
গুলিস্তান-গৌরিপুর রুটে বাস পরিচালনা করে বিআরটিসির যাত্রাবাড়ী বাস ডিপো। জানতে চাইলে এই ডিপোর প্রশাসন ইনচার্জ হারুনার রশিদ জুয়েল কোনো মন্তব্য করেননি। পরে ট্রাফিক ইনচার্জ মো. কাজল গাজী বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে যাত্রী সংকট থাকে। বাস কাউন্টারে রাখলেও যাত্রী পাওয়া যায় না। আবার কম যাত্রী নিয়ে বাস চালালে তেলের টাকাই ওঠে না। তবে হরতাল-অবরোধ ছাড়া (শুক্র, শনি বা মঙ্গলবার) অন্যদিন যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক থাকে।’
গৌরিপুর কাউন্টারের পূর্ব পাশেই কুমিল্লার আরেক গন্তব্য চান্দিনা বিআরটিসি কাউন্টার। এ কাউন্টারে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। কাউন্টারের সামনে বিআরটিসির কোনো বাসও দেখা যায়নি। অথচ এ রুটে বিআরটিসির আটটি বাস নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করতো বলে জানা যায়।
চান্দিনা কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন সোহেল মোবাইল ফোনে কথা হলে বলেন, বিআরটিসির সব বাস ডিপোতে নিয়ে গেছে। অবরোধে বাস বাইরে বের হতে দিচ্ছে না। আর বাস বের করলেও সড়কে যাত্রী পাওয়া যায় না।
চান্দিনা কাউন্টার পরিচালনা করে বিআরটিসির কুমিল্লা বাস ডিপো। এ ডিপোর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ আব্দুল কাদের জিলানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে গুলিস্তান-চান্দিনা বা কুমিল্লা রুটে যাত্রী পরিবহন করলে তেলের টাকাই ওঠে না। বাসে পর্যাপ্ত যাত্রী থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে এ রুটে বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শুক্র ও শনিবার যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক রয়েছে।’
তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে বিআরটিসির কুমিল্লার দাউদকান্দি কাউন্টারে। মতিঝিল ডিপোর অধীন এ কাউন্টার থেকে নিয়মিত টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ঘণ্টাখানেক পরপর যাত্রী নিয়ে বাস গন্তব্যে ছুটছে।
এ কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মামুন জানান, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তাদের কাউন্টারে যাত্রী অনেক কম। আগে আধাঘণ্টা পরপর বাস ছাড়তো। এখন একটি বাসের সব আসনে যাত্রী পরিপূর্ণ হতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
এমএমএ/এএসএ/এমএস