কৃষি ও প্রকৃতি

শেরপুরে তিন মাসে খরচের চারগুণ লাভ

মরুভূমির ফল ‘সাম্মাম’ এখন চাষ হচ্ছে শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে। প্রথমবারের মতো ঝিনাইগাতী উপজেলার গোমড়া এলাকায় চাষ করে সফলতা পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় কম খরচে বেশি লাভের দেখা পেয়েছেন তিনি। এতে আশেপাশের অনেকে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন। ফলে আমদানি নির্ভরতা কমাতে বিদেশি ফল চাষে আগ্রহীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস কৃষি বিভাগের।

Advertisement

কৃষি উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন বছর দুয়েক আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে বাড়িতেই শুরু করেন সবজি চাষ। তিনি বলেন, ‘বাবার জমিতে সবজির পাশাপাশি নতুন কিছু করার জন্য খুঁজছিলাম। ইউটিউবে সাম্মাম সম্পর্কে জানতে পারি। রাজধানী থেকে বীজ সংগ্রহ করে ১০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করি ২ জাতের সাম্মাম ফল। মাত্র ১ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। পরে পরাগায়ণের দেড় মাসের মধ্যে ফুল থেকে ফল ধরে।’

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ফল পাকতে শুরু করে। মাত্র ৩ মাসের মধ্যে এ ফল খাওয়া ও বাজারে বিক্রি করার উপযোগী হয়। ফলনও হয়েছে ভালো। এ ফল চাষে খরচ করেছিলাম মাত্র ২৫ হাজার টাকা। ১০ শতক জমিতে তিন মাসে খরচের চারগুণ লাভ হয়েছে। উৎপাদিত সাম্মাম ১ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে স্থানীয় বাজারে। আমার উৎপাদিত সাম্মামের এক জাতের বাইরের অংশ সবুজ, ভেতরে হলুদ। আরেক জাতের বাইরের অংশ হলুদ, ভেতরে লাল।’

আরও পড়ুন: ড্রাগন চাষে সফল বরগুনার শিক্ষক উজ্জল

Advertisement

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সাম্মাম মূলত মরু অঞ্চলের ফল। আমাদের দেশে সাম্মাম হিসেবে পরিচিতি পেলেও অনেকে একে রকমেলন বা হানিডিউ মেলনও বলেন। বাংলাদেশে এর খুব একটা চাষ হয় না। তবে অনেক কৃষক এখন বিদেশি এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের এ ফল দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হলেও গারো পাহাড়ে এই প্রথম সফলতা মিলেছে। গাছ লাগানোর ২ মাসেই ফল পাকতে শুরু করে। পরিপক্ক একেকটি ফলের ওজন প্রায় ২ কেজি। সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় বাড়ি থেকেই ফল বিক্রি হচ্ছে। নতুন জাতের ফলে লাভের হাতছানি পেয়ে স্থানীয়রাও আগ্রহী হচ্ছেন চাষে।

আনোয়ারের বাবা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার ছেলে এ ফল চাষের কথা জানালে প্রথমে নিষেধ করি। এরপরেও আনোয়ার চাষ করে। ২ মাস পরেই দেখি গাছে অনেক ফুল ও ফল ধরেছে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে এ ফল চাষ করবো।’

স্থানীয় কৃষক হাসমত আলী বলেন, ‘শুনতেছি এটি দামি ফল। ফলটি খুব মিষ্টি ও রসালো। খেতেও সুস্বাদু এবং খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ। আনোয়ার পরীক্ষামূলকভাবে এ ফল চাষ করেছে। অনেক ফল ধরছে। আগামীতে এ ফলের চাষ আমিও করবো।’

আরও পড়ুন: বারোমাসি ‘কাটিমন’ আম চাষে সফল শামিম

Advertisement

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, ‘আনোয়ার পরীক্ষামূলকভাবে সাম্মাম চাষ করে সফল হয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে বাগান নিরাপদ রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশেপাশের অনেকেই সাম্মাম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এটি চাষ করে লোকসানের ভয় নেই। কেউ আগ্রহী হলে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

ইমরান হাসান রাব্বী/এসইউ/এএসএম