মতামত

এ ভাঙন রুধিবে কে

দলভাঙার সুর শোনা যাচ্ছে আবারও। বরাবারের মতো ভাঙ্গনের সেই সুরটা জোরালো- বিরোধী শিবিরেই দৃশ্যমান। নেতৃত্বের কোন্দলে ক্ষুদ্র দলগুলো নির্বাচন মৌসুমের আগেই যুক্ত হয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। এবার বড় বিরোধী দলেও শোনা যাচ্ছে ভাঙনের সুর। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সম্ভাব্য ভাঙনের বিষয়টি জোরালো আলোচনার জায়গা পেয়েছে সম্প্রতি।

Advertisement

চিরায়ত ধারায় ভাঙনের আলামত দেখা দিলে মূল দল বলে, দলছুটদের কারণে মূল দলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। ভাঙনের ক্ষেত্র যদি হয়, বিরোধী দল তাহলে তারা আরও একটি কথা যোগ করে-সরকারের প্ররোচনায় দল ভাঙা হচ্ছে। দলছুটে আগ্রহীরা সরকারের দালাল এমন কথা বলতেও কসুর করে না মূল দলের পক্ষ থেকে। আর দলছুট নেতারা প্রথম অবস্থায় ধরি মাছ না ছুঁই পানির অবস্থানে থাকেন। এই মুহূর্তেও তাই দেখা যাচ্ছে। একটা সময় যখন নতুন নামে তারা আবির্ভূত হন, তখন সরাসরিই পূর্বদলের গোষ্ঠী উদ্ধার করেন- কখনো পরোক্ষ কখনো সরাসরি।

সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর হাফিজ উদ্দীন বীর বিক্রম, মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন। এখন তার অবস্থান পরোক্ষ। একবার মনে হয়, তিনি নিজ দলের প্রতি অনুগত আবার মনে হয়, তিনি ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছেন। তবে তার নড়েচড়ে বসার বিষয়টি কিন্তু ভাবার মতোও। তিনি বিএনপি ছাড়েননি। বিএনপিও তাকে ছাড়েনি। এমনকি তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন আছেন, তাও কেউ অস্বীকার করছে না। কিন্তু এটা স্পষ্ট, মেজর হাফিজকে দলীয় কোনো কর্মসূচি এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণেও অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। সেই প্রশ্নটি কিন্তু তিনিও করেছেন।

আগামী নির্বাচন বিগত সময়ের আর সব নির্বাচনের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির জন্য অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্র যেমন হবে তেমনি আওয়ামী লীগেরও শুধু ক্ষমতা রক্ষারও ক্ষেত্র হবে। হয়তো পক্ষকালের মধ্যেই আমাদের নতুন কোনো চমক দেখতে হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে।

Advertisement

তিন বছর আগে তাকে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। তিনি জবাব দিয়েছেন। এরপর দল থেকে তাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেই মনে হয়। অতি সম্প্রতি তিনি যখন মিডিয়ায় কথা বলেন,তখন প্রধান নেতৃত্ব সম্পর্কে তার বিরুপ ভাবনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। মেজর হাফিজ এর সাম্প্রতিক সাংবাদিক সম্মেলন এবং গণমাধ্যমে নানামুখী বিশ্লেষণ দেখে মনে হতে পারে,নতুন কিছু দেখার সম্ভাবনা দৃঢ় হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিলো তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কি না? তিনি নতুন কোনো দল করছেন কি না। ঢাকা মেইলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, তিনি এর জবাবে বলেছেন ‘নো কমেন্ট’। রাজনীতিতে এই ‘নো কমেন্ট’ শব্দদ্বয় যে অধিকাংশক্ষেত্রেই ইতিবাচক কমেন্ট হয়ে থাকে তা সবার জানা। অর্থাৎ মেজর হাফিজের নেতৃত্বে নতুন দল হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসাটা ভিত্তিহীন বলে এক বাক্যে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আপনি নতুন দল করছেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে সরকারের মন্ত্রীরা দাবি করছেন, এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? জবাবে তিনি বলেন,‘এই বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমি দেখছি… এই টুকুই আপনি লিখুন। এর বেশি কিছু এখন বলব না।' তাঁর এমন বক্তব্যও ইঙ্গিতবহ বলে মনে করি।

মেজর হাফিজ বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন সেই বিষয়টিও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। পরিস্থিতি পরিবেশ বিশ্লেষণ করে এটা মনে করা যায়, আরেকটি বিএনপি হয়তো শিগগিরই আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। যেহেতু মেজর হাফিজকে এখনও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, তাই তিনি যদি তড়িঘড়ি করে সাধারণ সভা ডেকে নতুন বিএনপির জন্ম দেন তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেক্ষেত্রে বিএনপি নামে তিনি নির্বাচনে অংশ নিলেও আইনগতভাবে অগ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে তিনি হয় তো প্রথম সাধারণসভাতেই তারেক জিয়াসহ অন্যদের দল থেকে বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে যাত্রা করতে পারেন।

এমন পরিস্থিতি হলে নতুন দলে বিএনপির প্রথম সারির অনেক নেতাকেই পাওয়া যাবে। বিশেষ করে যারা দলে এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন, যাদের দল থেকে মূল্যায়ন করা হয় না,যারা তারেক রহমানের নেতৃত্বকে অপছন্দ করেও দলে টিকে আছেন চোখ বন্ধ করে, বিভিন্ন সময় দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন তারাও যে ওই দলে যোগ দিতে পারেন তা অনুমান করা যায়।

Advertisement

দল ভেঙ্গে নতুন দল গড়া বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। এই বিএনপিও একাধিকবার ভেঙ্গেছে। সম্ভবত প্রথম ভাঙন হয় বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম নেতা কে এম ওবায়দুর রহমানের হাত ধরে। আওয়ামী লীগ মালেক উকিল এবং আওয়ামী লীগ মিজান চৌধুরীর মতো বিএনপিও ব্রাকেটবন্দী হয়েছিলো বিএনপি ওবায়েদ হিসেবে। ওবায়েদ সাহেবের বিএনপিতে তৎকালে বড় একটি গ্রুপও বেরিয়ে গিয়েছিলো। ওবায়দুর রহমানের ভাঙ্গাগড়াটা ছিলো মালেক উকিল আব্দুর রাজ্জাকের মতো ভাঙাগড়ার মতোই। মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে মূল দলে ফিরেছিলেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল অলি আহমদ, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিএনপি ছেড়ে নতুন দল গঠন করেছেন। তারা মিজান চৌধুরী আব্দুর রাজ্জাকের মতো মূল দলে ফিরে আসেননি। যেমনি ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী মূল দলে ফিরেননি।

বিএনপিতে বহিষ্কার কিংবা দলছুটের বড় দাগের ঘটনা হিসেবে আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া, অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মো. আশরাফ হোসেনের কথা মনে থাকার কথা। পরবর্তীকালে তারা হয়তো রাজনীতিতে নতুন বড় কিছু দিতে পারেননি, কিন্তু দল হিসেবে বিএনপি যে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেউ কেউ এমনও বলেন আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার মতো কোনো নেতা যদি আজকে বিএনপিতে থাকতেন, জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠজন এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বদরুদ্দোজা চৌধুরী যদি বিএনপিতে থাকতেন এই মুহূর্তে তাদের যে ক্রাইসিস চলছে এতটা কঠিন অবস্থায় হয়তো তাদের পড়তে হতো না।

দলছুটের বিষয়টি মূলত দুই কারণে হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে আদর্শিক কারণে দ্বিতীয়টি হচ্ছে নেতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কিংবা ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম আওয়ামী লীগ ছেড়েছিলেন আদর্শিক কারণে। ইতিহাস বলে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগ ছেড়েছিলেন মূলত পররাষ্ট্র বিষয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ার কারণে। তাছাড়া দুজনের রাজনৈতিক চিন্তার মধ্যেও ছিলো বিশাল ফারাক। তাদের বিভাজনটা আদর্শিক কারণেই হয়েছিলো। যে কারণে দুটি দলেরই তেমন ক্ষতি হয়নি একটা। কিন্তু অধিকাংশই দল ছাড়েন নেতার সিদ্ধান্ত যদি অন্য নেতার স্বার্থের বাইরে যায় তখন। কেউ বলতে পারেন দ্বন্দ্ব থেকে দল ছাড়লে আর দলের কী ক্ষতি হতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে- কমবেশি হয় এবং হবেও।

এই দ্বন্দ্ব মূল নেতৃত্বের প্রতি হলে কোনো নেতা দল ছেড়ে গেলেও দলের মধ্যে এর প্রভাব পড়ে। যেমন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিতারণের মধ্য দিয়ে দলচ্যুত হয়েছিলেন। তার অনুসারী একটা গ্রুপ ছিলো। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠজন এবং জিয়াউর রহমানের মন মানসিকতা অন্যদের চেয়ে বেশি বুঝতেন এবং দলের নাড়িনক্ষত্রও তার চেনাজানা ছিলো। দলের প্রতি মমত্ববোধও ছিলো অনেক। সেই অবস্থায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তা বলার সুযোগ কোথায়। তাঁর দলত্যাগের মুহূর্তে যে দ্বন্দ্ব প্রত্যক্ষ করা গেছে তাকে ভুলে থাকার কথা নয়।

একটা দলের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল করে দেয় এমন দলত্যাগীদের কারণে। কত ত্যাগী নেতাকে বিএনপি ছাড়তে হয়েছে সেই হিসাবটা অবশ্যই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে আছে। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তৃণমূল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করে বিএনপির ছায়া রেখে দিয়েছেন। তার দলছুটের কারণে একসময়ের বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের মোবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের দলীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিএনপি।

আবার দলছুটই শুধু নয় দ্বন্দ্ব হওয়ার কারণে দলের ভিতরেও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া বিষয়টিও আমরা লক্ষ্য করি। জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতো গতিশীল বিএনপি নেতা কিংবা খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতো নেতাকে যখন আমরা চুপ মেরে থাকতে দেখেছি, তখন বিএনপিকে অনেকেই ক্ষয়িষ্ণু দল হিসেবেই চিহ্নিত করতে থাকে। এই নেতারা চলনে বলনে প্রধান নেতার প্রতি যে তাদের ক্ষোভ সেটাই কিন্তু প্রকাশ করে গেছেন। মনে আছে খন্দকার মাহবুব হোসেন সরাসরি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন করেছেন। এবং তিনি তখন দলের ভিতরে থেকেই স্পষ্ট বক্তব্যটি দিয়েছিলেন। মাহবুবুর রহমানকে নিজ দলের কর্মীদের হাতে নাজেহাল পর্যন্ত হতে হয়েছিলো সেটাও অনেকেরই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। খন্দকার মাহবুব হোসেন নিষ্ক্রিয় থেকে থেকেই শেষ পর্যন্ত মারা গেছেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ চাপা ক্ষোভ নিয়েই বিদায় হয়েছেন দুনিয়া থেকে।

যা মওদুদ আহমদের আচরণেও বহুবার প্রকাশ হয়েছে। এই প্রসঙ্গে জিয়াউর রহমানের আমল থেকে যুগ্মমহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন তো অনেক আলোচনাতেই নিজ দলের সমালোচনা করতেন রাজপুত্রের দল বলে।

দল ছাড়লে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ড.কামাল হোসেন,ড.অলি আহমদ কিংবা বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর ভাগ্য বরণ করেন এমনটাও বলা যায় না। অনেকেরই জানা থাকার কথা আওয়ামী লীগে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনকারীই শুধু নয় আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ছায়াখ্যাত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদ তার মতো আব্দুস সামাদ আজাদও ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য।

ইতিহাস বলে তারা কিন্তু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাননি। বরং উজ্জ্বলতর হয়েছেন। যে মতিয়া চৌধুরী ষাটের দশকে একাই ছিলেন ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়নের নক্ষত্র তিনি দল ছেড়ে এসে কি হারিয়ে গেছেন? নূহ উল আলম লেনিন,নূরুল ইসলাম নাহিদ দল ছেড়ে হারিয়ে যাননি। আরও আগের ইতিহাসের দিকে যদি আমরা দৃষ্টি দেই –মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কথা বলতে পারি।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পাকিস্তানে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি শুরু আওয়ামী লীগ মাধ্যমে। সেই মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের সম্পর্কচ্ছেদ করেন ১৯৫৭ সালের ২৪জুন। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তানে। মওলানা সাহেবের ক্যারিসমায় বেশ শক্তিশালী ভিত তৈরি করতে সক্ষম হয় ন্যাপ। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে হয়তো সেই শক্তির কিছুটা প্রমাণও পাওয়া যেতো। তবে এটা ঠিক স্বাধীনতা পূর্বকালে এই বাংলায় মোজাফফর ন্যাপ ও ভাসানী ন্যাপ এর নাম উচ্চারিত হতো আওয়ামী লীগের পরপরই। তাই আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে পরবর্তীকালে তিনি নিখোঁজ হয়ে গেছেন এমন বলার অবকাশ নেই। যদিও আতাউর রহমান খান, আমেনা বেগম কিংবা মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ প্রমুখের অবস্থাটা ছিলো ভিন্নতর।

দলছুট নেতাদের প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের কিছু বক্তব্য শোনার পর ইতিহাসের উদাহরণটি মনে আসে। এটাও মনে আসে দলছুট নেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই হারিয়ে গেছেন। তবে রাজনৈতিক দলের জন্য এমনকি জাতীয় রাজনীতির জন্যও এই দলছোটাছুটির বিষয়টি যে ইতিবাচক নয় সেই উদাহরণও আছে আমাদের সামনে। মূল দল থেকে চলে গিয়ে নির্দিষ্ট নেতা হয়তো বড় কিছু করতে পারেন না কিংবা নতুন দল করে সুবিধাও করতে পারেন না, কিন্তু মূল দলে যে আচড় পড়ে সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই।

আবার এটাও বলতে হবে কোনো দলের যখন ক্রান্তিকাল চলে,যখন বড় ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হয় তখন সিনিয়র কেন মধ্যমাপের নেতাও যদি দল ছেড়ে যান তখন ক্ষতিটা চাপা দিয়ে রাখার মতো হয় না। বর্তমান বিএনপি নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগছে বলে ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারিত। সেই অবস্থায় যদি এই শূন্যতা আরও বেড়ে যায় তাহলে দলটি কি সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার মতো অবস্থানে আছে? আর এই অসন্তোষের কারণ দূর করা বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয় এটা স্পষ্ট। যদি কেউ চেষ্টা করে তাহলে যে এখনকার শূন্যতা তখন মহাগহ্বরে পরিণত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অনেকেই মনে করেন বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে আর নতুন কোনো ভাঙন তৈরি হবে না। এর পেছনেও জোরালো যুক্তি নেই। কারণ অসন্তুষ্ট নেতারা বর্তমান নেতৃত্বের প্রতিই নাখোশ। অসন্তুষ্ট নেতাদের বিএনপি মনোনয়ন দেওয়া হবে না এটাও স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে তাদের ঠেকানো সহজ হবে না এটাই স্বাভাবিক।

এই মুহূর্তে বিএনপির ঘোষণা তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না। আওয়ামী লীগও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে ফিরে যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে তারা নির্বাচন করছে না যদি ধরে নেয়া যায়, তাহলে নির্বাচনমুখী বিএনপি নেতারা এমনিতেই দল ছাড়বেন। না হয় স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন। সুতরাং বিএনপি দলে যে নেতাছুট অবশ্যম্ভাবি তা স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে মেজর হাফিজ নতুন দল করলে নেতা-কর্মীর অভাব হবে না। আর সম্ভাব্য দলটি যদি প্রতিষ্ঠা লাভ করে তাহলে বিএনপিকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

সবশেষে এটা বলা যায়-আগামী নির্বাচন বিগত সময়ের আর সব নির্বাচনের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির জন্য অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্র যেমন হবে তেমনি আওয়ামী লীগেরও শুধু ক্ষমতা রক্ষারও ক্ষেত্র হবে। হয়তো পক্ষকালের মধ্যেই আমাদের নতুন কোনো চমক দেখতে হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে।

লেখক: সাংবাদিক, গবেষক।

এইচআর/এএসএম