কিন্ডারগার্টেন, প্রিপারেটরি, কে জি স্কুলের নামে ঢাকাসহ দেশের অলিগলিতে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধিমালা করেছে সরকার। এ বিধিমালা অনুযায়ী সব স্কুলকে নিবন্ধন করতে হবে। মানতে হবে বিধিমালায় থাকা শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন ও তহবিল পরিচালনাসহ ৩৩টি বিভিন্ন শর্ত-নিয়ম।
Advertisement
অনেকটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মের মতোই বেসরকারি স্কুলগুলোকে চলতে হবে। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে নিবন্ধন পেতে এবং নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং তাদের নিয়মিত বেতন পরিশোধের নির্দেশনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: থাকছে না কিন্ডারগার্টেন, চলবে ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে
তবে বিধিমালা করে বহু শর্ত যুক্ত করে দিলেও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের দায়ভার নেবে না সরকার। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টিউশন ফি, সেশন চার্জ, পুনঃভর্তি ফি আদায়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বিধিমালায়। ফলে শিক্ষক নিয়োগ ও বেতন পরিশোধ নিয়ে বেকায়দায় পড়ার আশঙ্কায় স্কুলের মালিকরা।
Advertisement
বিধিমালার ১৮ নম্বর ধারায় ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও ইত্যাদি’ শিরোনামে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্য সুবিধাদি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এককভাবে পরিশোধ করতে হবে। বেতন-ভাতা ও অন্য সুবিধাদি প্রদানের দায় কোনোক্রমেই সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে না।
৬ শিক্ষক বাধ্যতামূলক, নিয়োগ প্রক্রিয়াও কঠোর:প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো স্কুলগুলোতে কমপক্ষে ৬ জন স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া শিক্ষক থাকতে হবে। তাদের নিয়োগও হবে কঠোর নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে।
আরও পড়ুন: ‘কিন্ডারগার্টেন’ নামেই নিবন্ধন চান মালিকরা
বিধিমালার ১৭ নম্বর ধারায় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
Advertisement
এ ধারার উপবিধি-২-এ বলা হয়েছে, বিধিমালার অধীন প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য ন্যূনতম ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। উপবিধি-৩ অনুযায়ী, শিক্ষক নিয়োগের জন্য বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। তাতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতাসহ অন্য বিষয়াদি উল্লেখ থাকতে হবে।
৪ ও ৫ নম্বর উপবিধিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে নির্দিষ্ট একটি বোর্ড থাকবে। এ বোর্ডে অবশ্যই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার একজন প্রতিনিধি থাকবেন। কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা থাকলে, তা শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার একমাসের মধ্যে জানাতে হবে। শিক্ষকের বেতন-ভাতা বহন করবে বিদ্যালয়। অন্যদিকে স্কুলে প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকা বাধ্যতামূলক হবে।
এদিকে, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালায় এর বাইরেও বেশ কিছু নিয়ম রাখা হয়েছে। বিধিমালার ৩৩টি ধারায় উল্লেখযোগ্য নিয়ম ও শর্তগুলো হলো- ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে স্কুল খুলতে ৮ শতক জমি বা সমপরিমাপের ভবন থাকতে হবে, ব্যক্তি নামে স্কুল খুলতে ৫ লাখ টাকার তহবিল, পাঠদানের অনুমতি পেতে আলাদা আবেদন, অনুমতির পর নিবন্ধন, নিবন্ধন নবায়ন, ইউএনও-ডিসির প্রতিনিধি রেখে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন ও এনসিটিবির অনুমোদিত পাঠ্যবই পড়ানো ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা জারি
রাজধানীর রামপুরার উলন রোডের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক নাম অপ্রকাশিত রেখে জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দেশের মোট শিক্ষার্থীর বড় একটি অংশ পড়ালেখা করে। তুলনামূলক কম বেতনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সন্তানদের এখানে পড়তে দিচ্ছে। কিন্তু সরকার কঠোর বিধিমালা করে স্কুলগুলো বন্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু সরকার কিন্ডারগার্টেনগুলো নিয়মের মধ্যে আনতে চাইছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছেন; তাহলে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এখানেও শিক্ষকদের বেতন-ভাতার কিছু অংশ দেওয়া উচিত। তা না হলে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন বিধিমালায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকটা সরকারি নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশনা রয়েছে। কমপক্ষে স্নাতক পাস শিক্ষক নিতে হবে। পত্রিকায়ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। স্নাতক পাস একজন গ্র্যাজুয়েট এত অল্প বেতনে তো স্কুলে শিক্ষকতা করতে পারবেন না। তাকে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী মানসম্মত বেতন-ভাতা দিতে হবে। সেটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো দেবে কোথা থেকে?’
আরও পড়ুন: পিছিয়ে পড়বে কিন্ডারগার্টেন স্কুল, বাড়বে বৈষম্য-চ্যালেঞ্জ
তিনি বলেন, ‘বিধিমালা করে আপনি হাজারও শর্ত চাপিয়ে দেবেন, কোনো সহযোগিতা দেবেন না; সেটা তো কাম্য নয়। আমাদের দাবি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার নির্দিষ্ট একটি অংশ সরকারকে পরিশোধ করতে হবে। অবশ্যই দায়ভার কিছুটা হলেও সরকারকে নিতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াত বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
>> বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
এএএইচ/এমকেআর/এএসএম