ছাত্রীকে প্রলোভন ও ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ ও কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করবেন মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে তিনি জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ছাত্রীর বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুনলাম পুলিশ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে মুশতাক আহমেদ ও সাবেক অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। আমরা পুলিশের এ প্রতিবেদন মেনে নিতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ যেহেতু মামলায় তথ্যগত ভুলের কথা বলেছে, সে জন্য আমাকে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। কোন ধরনের তথ্যগত ভুল সেটা এখনও জানি না। সেগুলো যাচাই করে আমরা আইনজীবীর মাধ্যমে দ্রুত আদালতে নারাজি আবেদন করবো।’
Advertisement
জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা মামলাটির তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে তিনি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনে তিনি ‘মামলাটি দায়ের করার ক্ষেত্রে তথ্যগত ভুল হয়েছে’ উল্লেখ করে আসামি খন্দকার মুশতাক আহমেদ ও ফাওজিয়া রাশেদীকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) গুলশান থানার, আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক তাহমিনা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ৩০ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি থানা থেকে পাঠানো হয়। আমরা ৩-৪ দিন আগে হাতে পেয়েছি। আজ মামলারটির ধার্য তারিখ। মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ বদলি হবে।
আরও পড়ুন> আইডিয়ালের মুশতাক-ফাওজিয়াকে অব্যাহতির সুপারিশ
গত ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে কলেজ ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ছাত্রীর বাবা মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা গ্রহণের আদেশ দেন। এরপর গুলশান থানা মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে।
Advertisement
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে (ভুক্তভোগী) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি খন্দকার মুশতাক আহমেদ বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভুক্তভোগীকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে আসামি ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করতেন। কিছুদিন পর আসামি মুশতাক ভুক্তভোগীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকাছাড়া করার হুমকি দেন।
ভুক্তভোগী এ রকম আচরণের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষকে (২ নম্বর আসামি) ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি (অধ্যক্ষ) ব্যবস্থা করতেছি বলে আসামি মুশতাককে তার রুমে নিয়ে আসেন এবং ভুক্তভোগীকেও ক্লাস থেকে নিয়ে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসামিকে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন।
এ বিষয়ে বাদী ২ নম্বর আসামির কাছে প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করেননি বরং আসামি মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করে আসতে থাকেন। বাদী উপায় না পেয়ে গত ১২ জুন ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে নিয়ে গেলে আসামি মুশতাক তার লোকজন দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর বাদী জানতে পারেন আসামি ভিকটিমকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হচ্ছে।
এএএইচ/এসএনআর/এমএস