বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থাকা দেশের তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেটের উৎপাদন, আমদানি, বিপণন, বিক্রি, বিজ্ঞাপন ও এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, বিভিন্ন ওয়েবসাইট, লিংকইন, টুইটার এবং অনলাইন কোম্পানিতে, ইবে, ই-শপসহ সব মাধ্যমে ই-সিগারেটের বাণিজ্যিকীকরণ বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য নোটিশে বলা হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জনস্বার্থে আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে মামলা দায়ের করে ই-সিগারেট বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হবে বলেও নোটিশে বলা হয়েছে।
রেজিস্ট্রিকৃত ডাকযোগে সোমবার (১৩ নভেম্বর) মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
Advertisement
লিগ্যাল নোটিশে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) সংশ্লিষ্ট ৬ (ছয়) জনকে বিবাদী করা হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট আজকাল তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফাইবার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এই ব্যাটারিচালিত যন্ত্রের ভেতর একটি প্রকোষ্ঠ থাকে। তার মধ্যে ভরা থাকে বিশেষ ধরনের তরল মিশ্রণ। যন্ত্রটি গরম হয়ে ওই তরলের বাষ্পীভবন ঘটায় এবং ব্যবহারকারী সেই বাষ্প টেনে নেন ফুসফুসে, যা ধূমপানের অনুভূতি দেয়। এই পদ্ধতিকে বলে ‘ভেপিং’।
তরল মিশ্রণটি বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধ যুক্ত হওয়ায় তরুণ সমাজ আগ্রহ নিয়ে ই-সিগারেট ব্যবহার শুরু করেছে। ই-সিগারেটের যন্ত্রের আধুনিক স্টাইলের কারণে তরুণ সমাজ মনে করছে এ সিগারেট ব্যবহার এক ধরনের স্মার্টনেস। অতি দ্রুত আমাদের তরুণ সমাজ ই-সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে যেটি খুবই উদ্বেগজনক।
বলা হয়েছে, আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা জানাচ্ছে, ই-সিগারেটে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ৭১ শতাংশ পর্যন্ত। কণ্ঠনালী ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যথাক্রমে ৫৯ ও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফ্লেভারিং এজেন্টের কারণে শ্বাসতন্ত্র, লিভার, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। শুধু তা-ই নয়, ই-সিগারেটের নিকোটিন গর্ভজাত শিশু মেধা বিকাশ ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভয়ানক বিপজ্জনক। সিগারেটের ধোঁয়া এবং যন্ত্রে রক্ষিত লিকুইড শিশুদের জন্য হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত ভয়ংকর। এটি ব্যবহারকারী তথা অন্যদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
Advertisement
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মতে, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর, চীন, ভুটান, হংকং, জাপান, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, ভুটান, ভারতসহ বিশ্বের অন্তত ৪৭টি দেশ এই সিগারেটের উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আরও বহু সংখ্যক দেশে নিষিদ্ধ প্রক্রিয়া চলমান।
বাংলাদেশে ই-সিগারেট বন্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো আইন চূড়ান্ত হয়নি। ই-সিগারেটকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে হাজার কোটি টাকার সিন্ডিকেট। ফেসবুক, ইউটিউব, অনলাইন কোম্পানি দারাজসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ই-সিগারেটের রমরমা ব্যবসা চলছে।
বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং কফি শপে ই-সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধে সাধারণ দর্শনার্থীদের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব জায়গায় যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা ই-সিগারেট ব্যবহারকে এক ধরনের আধুনিক ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করছে।
এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের কোটি কোটি তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে রাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত বোঝা হয়ে পড়বে। ধ্বংস হবে শিক্ষাব্যবস্থা।
এ বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০২১ সালে বাংলাদেশের ১৫৩ জন সংসদ সদস্য এক চিঠিতে ই-সিগারেট বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ই-সিগারেট বন্ধের নির্দেশনা দেন। প্রচলিত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ সংশোধন করে ই-সিগারেট বন্ধের জন্য একটি প্রস্তাবিত আইন প্রস্তাব করা হয়েছে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজ পর্যন্ত এখন আইনটি আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ই-সিগারেট আমদানি এবং বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে একটি বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। তরুণ প্রজন্ম হয়ে পড়ছে ধূমপানে আসক্ত। প্রচলিত অন্যান্য সিগারেটের মতোই ই-সিগারেটও অত্যন্ত ক্ষতিকর। আকর্ষণীয় এবং সহজলভ্য হওয়ায় তরুণরা দ্রুত এতে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
এই বিষয়টি উল্লেখ করে ই-সিগারেটের বাজারজাত, আমদানি, রপ্তানি, বাণিজ্যিকীকরণ, বিজ্ঞাপন এবং ব্যবহার বন্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে লিগ্যাল নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
এফএইচ/এমকেআর/এএসএম