বিনোদন

সিনেমার হুমায়ূন

এদেশের সাহিত্যাঙ্গন ও শোবিজ ভুবনে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম। বাংলা সাহিত্যে তিনি পাঠক সৃষ্টিতে যে ভূমিকা রেখেন, তা বলা চলে তুলনা রহিত। কেউ কেউ বলেন হুমায়ূন পাঠক সৃষ্টিতে এক প্রকার বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

Advertisement

হৃদয়গ্রাহী সাহিত্য সৃষ্টির পাশাপাশি তিনি সিনেমাতেও নতুন ধারা তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজেক বরেণ্য নির্মাতা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিক করেছেন। নির্মাণের মুন্সিয়ানা তিনি দেখিয়েছেন নাটক ও চলচ্চিত্র দুই ক্ষেত্রেই দেখিয়েছেন।

আরও পড়ুন: নিজ হাতে স্যারকে সমাহিত করেছি: ডা. এজাজ

দেশের বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমার মতো হুমায়ূন আহদেমের সিনেমা মুক্তি পেলে প্রেক্ষাগৃহে উপচেপড়া ভিড় দেখা যেত। তার নির্মিত সিনেমার বিভিন্ন ডায়লগ ও গান মানুষের মুখে মুখে ফিরত। তার সিনেমার গান আজও মানুষের হৃদয়ে গেথে আছে।

Advertisement

১৯৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটে হুমায়ূন আহদেমের। বাংলা সাহিত্যকে হিমু, মিসির আলিসহ অসংখ্য চরিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। লেখক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও শুধু বইয়ের জগতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না তিনি।

চিত্রনাট্যকার, গীতিকার ও চলচ্চিত্রকার হিসেবেও সুনাম ছিল হুমায়ূনের। সাতবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন। নন্দিত এ কথাসিাহিত্যিক হুমায়ূন যেসব সিনেমা নির্মাণ করে সিনেমাপ্রেতীদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন সে সম্পর্কে জানা যাক-

‘আগুনের পরশমণি’: হুমায়ূন আহমেদ ‘আগুনের পরশমণি’র মাধ্যমে প্রথম ১৯৯৫ সালে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এটি তার লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে। উপন্যাসটির নামও ‘আগুনের পশমণি’। এতে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর, শিলা আহমেদসহ আরও অনেকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সিনেমাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। শুধু তা-ই নয়, ১৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘আগুনের পরশমণি’ সিনেমা ৮টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভ করে।

‘শ্রাবণ মেঘের দিন’: ‘একটা ছিল সোনার কন্যা মেঘ বরণ কেশ’ গানটি শোনেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভীষণ কষ্টকর হবে। এ গানটির মাধ্যমে গীতিকার হিসেবে নিজের নাম লেখান। ১৯৯৯ সালে নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার এ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সিনেমায় ‘সোহাগী' নামের ছোট্ট এক গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রামের মানুষের সাধারণ জীবনযাপন ফুটিয়ে তোলেন তিনি। এতে অভিনয় করেছেন মুক্তা, জাহিদ হাসান, মেহের আফরোজ শাওন ও মাহফুজ আহমেদ প্রমুখ।

Advertisement

আরও পড়ুন: হুমায়ূন স্যার আমাকে প্রথম মোবাইল কিনে দিয়েছিলেন: ডা. এজাজ

‘দুই দুয়ারী’: ২০০০ সালে নির্মিত এ সিনেমায় তৎকালীন ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট ফুটে ওঠেছে। রুনা লায়লার বিখ্যাত গান ‘লীলাবালী লীলাবালী’ গানটি এ সিনেমারই। ‘দুই দুয়ারী’তে অভিনয় করেছেন মেহের আফরোজ শাওন, মাহফুজ আহমেদ, ডা. এজাজসহ আরও অনেকে।

‘চন্দ্রকথা’: ২০০৩ সালে মুক্তি পায় হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘চন্দ্রকথা’। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন মেহের আফরোজ শাওন। এছাড়াও অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। সিনেমার জনপ্রিয় ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’ গানটি লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ এবং এতে কণ্ঠ দিয়েছেন সুবীর নন্দী।

‘শ্যামল ছায়া’: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় সিনেমা ‘শ্যামল ছায়া’ নির্মিত হয় ২০০৪ সালে। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদি, মেহের আফরোজ শাওন, শিমুল, রিয়াজ, স্বাধীন খসরু এবং আরও অনেক প্রখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী। সিনেমাটিকে ২০০৬ সালে অস্কারের ‘সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ থেকে নিবেদন করা হয়েছিল।

‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’: ২০০৭ সালে হুমায়ূন আহমেদ তৈরি করেন কমেডি সিনেমা ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’। এতে অভিনয় করেছেন রহমত আলী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, দিতি, তানিয়া আহমেদ, চ্যালেঞ্জার, স্বাধীন খসরু এবং আরও অনেকে। হাস্যরসে পূর্ণ এই সিনেমাটি হুমায়ূন আহমেদের গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে চিত্রায়িত।

‘আমার আছে জল’: হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য সিনেমার তুলনায় বেশ আধুনিক ঘরানার চলচ্চিত্র ‘আমার আছে জল’। ২০০৮ সালে নির্মিত সিনেমাটিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বড়পর্দায় পা রাখেন বিদ্যা সিনহা মিম। এছাড়াও এতে অভিনয় করেছেন শাওন, জাহিদ হাসান, ফেরদৌস। সিনেমাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্মাননাও অর্জন করেছে।

‘ঘেটুপুত্র কমলা’: ২০১২ সালে নির্মিত ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত শেষ সিনেমা। দেড়শত বছর আগের সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার জলসুখা গ্রামের এক ঘেটুপত্রের কল্পকাহিনি নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রটি বেশ সমালোচনারও জন্ম দিয়েছিল। এতে ‘কমলা’ চরিত্রে দেখা গেছে শিশু শিল্পী মামুনকে। এছাড়াও অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, মুনমুন আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শামিমা নাজনিন, আগুনসহ আরও অনেকে।

শুধু সাহিত্য কর্ম নয়, সিনেমা নিয়ে ভবিষ্যতে যদি এদেশে গবেষণা করা হয় সেখানে হুমায়ূনের সিনেমার প্রথম সারিতে থাকবে। পাঠক প্রিয় এ কথাসাহিত্যিক দর্শকপ্রিয় এ চলচ্চিত্র নির্মাতার আজ জন্মদিন। এমন শুভদিনে তার স্মৃতির প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

এমএমএফ/এএসএম