জাতীয়

‘অবরোধে চোরের মতো দোকানদারি করতে হচ্ছে’

মিরপুর ১২, সাড়ে ১১ নম্বরে প্রধান সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে অসংখ্য ছোট-বড় স্ট্রিট ফুডের দোকান। এখানে কার্টে বা ভ্যান গাড়িতে কেউ বিক্রি করছেন ওয়াফেল, কেউ ঝালমুড়ি তো কেউ ভাজাপোড়া। বিকেল থেকেই জমজমাট হয়ে ওঠে এসব দোকান।

Advertisement

তবে, বিগত দুই সপ্তাহ ধরে চিরচেনা এই দৃশ্য আর আগের মতো নেই। সরকারের পতন ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনাদের ডাকা অবরোধে ঠিকমতো দোকান খুলতে পারছেন না এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এর সঙ্গে আবার চলছে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন। সবমিলিয়ে ফুটপাতের এসব দোকান খুলতে হচ্ছে রয়েসয়ে। হরতাল-অবরোধের দিন ভয়ে ভয়ে কেউ এক ঘণ্টার জন্য খুলছেন দোকান, কেউবা আবার আতঙ্কে ও মুখো হচ্ছেন না।

তৃতীয় দফা অবরোধ শেষে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে ফের খুলেছে এসব দোকান। তবে বেশিরভাগ দোকানই ক্রেতাশূন্য। বিক্রেতাদের দাবি, এমন ‘অস্থিতিশীল’ অবস্থার মধ্যে বেচাকেনা অনেক কমেছে। এ অবস্থায় দেশে শিগগির রাজনৈতিক সমঝোতা চান এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

আরও পড়ুন: হরতাল-অবরোধে বাড়ছে উদ্বেগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস 

Advertisement

সন্ধ্যায় মিরপুর ১২ নম্বরে ওয়াফেল কিচেনে দেখা যায়, ফুড কার্টটির দুই বিক্রয়কর্মী মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখছেন। ওয়াফেল কিচেনের পাশেই চটপটি ও ফুচকার দোকান। এখানেও কোনো ক্রেতা দেখা যায়নি।

বিক্রেতারা বলছেন, ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একাধিক মার্কেট বিকেল থেকেই জমজমাট হয়ে যায়। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু হরতাল-অবরোধ শুরু হওয়ার পর বদলেছে দৃশ্যপট।

ওয়াফেল কিচেনের বিক্রয়কর্মী নাইম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এইদিকে বাস পুড়িয়েছে। সেই ভয়ে দোকান খুব একটা খোলা রাখতে পারিনি। লোকজন কেউ আসে না। চারদিকে আতঙ্ক, সন্ধ্যার পরপরই দোকান বন্ধ করতে হয়েছে। আবার ঝামেলা হবে এই আশঙ্কায় কোনো কোনোদিন বিকেলেই বন্ধ করেছি। চোরের মতো দোকানদারি করতে হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে 

Advertisement

তিনি বলেন, ‘এখন তো বেচাকেনা কম। সন্ধ্যার পর মাত্র ২ জন ক্রেতা আসছেন। ছয় মাস ধরে ব্যবসা করছি, অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভালোই ব্যবসা হয়েছে। এখন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক। তাই ক্রেতাও কম।’

চটপটির দোকানি আলিম হক বলেন, ‘ক্রেতা নেই। কারিগরও আসেনি। অন্য সময় বিকেল থেকে ক্রেতাদের চেয়ার নিয়ে টানাটানি হয়। এই কয়েকদিন ক্রেতা একটু কম।’

আরও পড়ুন: ‘অবরোধে বিক্রি নাই, অলস বসে থাকি’ 

মিরপুর সাড়ে ১১ মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন সড়কে ভেলপুরি ও ঝালমুড়ি বিক্রি করেন আমজাদ হোসেন। জাগো নিউজকে আমজাদ বলেন, ‘অনেকেই প্রধান সড়ক থেকে গাড়ি (ভ্রাম্যমাণ দোকান) সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। রাত ৮টা পর পুলিশ সরিয়ে দিচ্ছে। ক্রেতা না থাকায় আমরাও চলে যাই।’

সাড়ে ১১’র অনিক প্লাজা সংগলগ্ন ফুটপাতে চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের কার্টগুলোতেও ক্রেতা কম। এছাড়া ঝালমুড়ি, আলুর চিপস, বট, ডিম ও শরবতের দোকানেও হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা দেখা গেছে।

চতুর্থ দফায় আগামী রোববার ভোর ৬টা থেকে ফের সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বিএনপি ও সমমনারা। এ অবস্থায় এসব ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলছেন, হরতাল-অবরোধে স্বাভাবিক ব্যবসা বিঘ্নিত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার পথে যেতে হবে।

এসএম/কেএসআর/এএসএম