প্রথম দেখায় মনে হতে পারে এটি কোনো বিয়েবাড়ি বা সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনের দৃশ্য। চেয়ার-টেবিলে বসে আরাম করে খাচ্ছে একদল মানুষ। তাদের মেহমানদারিতে ব্যস্ত কর্মচারীরা। এমন দৃশ্য প্রতি বৃহস্পতিবার চোখে পড়ে লালমনিরহাট রেলস্টেশনের পাশে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা হোটেলে।
Advertisement
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত গরিব ও অসহায় মানুষদের একবেলা ফ্রি খাওয়ান লালমনিরহাট মুক্তিযোদ্ধা হোটেলের মালিক আবুল হোসেন অপু।
বৃহস্পতিবার দিনটি এলেই হোটেলের সামনে ভিড় জমান অসহায়, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, ভবঘুরে ও পথশিশুরা। পরে তাদের নিজ হাতে আপ্যায়ন করান হোটেলের মালিক আবুল হোসেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর ১টা বাজার আগেই মুক্তিযোদ্ধা হোটেল ব্যবসায়ীর বাড়িতে রান্না করা খাবার রিকশাযোগে নিয়ে আসেন কর্মচারীরা। মেন্যুতে থাকে কোনোদিন মাছ, কোনোদিন মাংস আবার কোনোদিন ডিম, সবজি ইত্যাদি। সঙ্গে পট বা বাটি নিয়ে এলে প্রিয়জনদের জন্য খাবার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। প্রতি সপ্তাহে ১৫০-২৫০ জন মানুষকে এভাবেই দাওয়াত দিয়ে পেট পুরে খাওয়ান আবুল হোসেন।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব আলী মুন্সি প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুক্তিযোদ্ধা হোটেল।’ হোটেলটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানে কোনো খাবার রান্না হয় না; বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে আসা হয়। হোটেলটির বেশ সুনাম রয়েছে।
কেউ ফ্রি খেতে চাইলে হোটেল কর্তৃপক্ষ না করে না। প্রতিদিন এখানে অনেক মানুষ ফ্রি খাবার খান। ২০১৩ সালে হোটেলটির প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব আলী মুন্সি মারা গেলে হোটেলের হাল ধরেন তার তিন ছেলে আনোয়ার হোসেন, আবুল হোসেন অপু ও জাকির হোসেন।
খাবার খেতে আসা প্রতিবন্ধী রহমত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি বৃহস্পতিবার আমরা এ হোটেলে মাছ-মাংস দিয়ে ফ্রি খাবার খাই। আমরা খাবার খেয়ে খুব খুশি।’
রমিজন দেওয়া নামের একজন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, ভিক্ষা করে খাই। মাসে একবারও মাছ-গোশত খাওয়া হয় না। এজন্য প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে খাবার খেতে চলে আসি।’
Advertisement
লালমনিরহাট স্টেশন পাড়ার সমাজসেবক হান্নান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এটি একটি মহতী উদ্যোগ। সমাজের অসহায় মানুষগুলো সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও তৃপ্তি সহকারে মাছ-মাংস খেতে পারছেন।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা হোটেলের পরিচালক আবুল হোসেন অপু বলেন, আমার বাবা হোটেলটি প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে ফকির-মিসকিনদের খাওয়াতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার আমরা তিন ভাই অসহায় মানুষদের ফ্রি খাবার খাওয়াই। হোটেলের আয়ের একটি অংশ তাদের পেছনে ব্যয় করা হয়। আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এসআর/এমএস