দেশজুড়ে

২ মাস আগেই শেষ নির্মাণ কাজ, উদ্বোধন ১২ নভেম্বর

নির্মাণ কাজ শেষ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সার কারখানা ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক সার উৎপাদন। কারখানাটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশে সারের ঘাটতি পূরণসহ আমদানি নির্ভরতা কমার পাশাপাশি বাংলাদেশে সূচিত হবে নতুন দিগন্ত।

Advertisement

১১০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কারখানাটি চালু হলে দৈনিক ২৮০০ টন এবং বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার টন ইউরিয়ার সার উৎপাদন সম্ভব হবে। এছাড়া কারখানাটিতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে ৩০ হাজার মানুষের।

খাদ্য ঘাটতি পূরণসহ দেশের কৃষি খ্যাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার এ উদ্যোগ নেন। ১২ নভেম্বর তিনি প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সূত্রে জানা যায়, দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৯৭০ সালে বার্ষিক ৩ লাখ ৪০ হাজার এবং ১৯৮৫ সালে ৯৫ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন যথাক্রমে ঘোড়াশাল এবং পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপিত হয়। কারখানা দুটি অত্যন্ত পুরোনো হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস এবং ডাউন টাইম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারখানা দুটির স্থানে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন, শক্তি সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি সার কারখানা নির্মাণের নির্দেশ দেন। কৃষকের কাছে ন্যায্যমূল্যে সার পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

Advertisement

দেশের অভ্যন্তরে সারের ঘাটতি মেটাতে ২০২০ সালের ১০ই মার্চ ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সিসি সেভেন নামে একটি চিনা এবং জাপানের মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে দুটি কোম্পানিকে যৌথভাবে নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুমাস আগেই কারখানার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়। পরীক্ষামূলক সার উৎপাদনও শুরু করে কারখানাটি। ৪৩৬ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এ পরিবেশ বান্ধব কারখানাটি। এর মধ্যে শুধু ১১০ একর জমির ওপর কারখানাটির মেশিনারীজ স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ৩২৬ একর জমির ওপর অফিস, শ্রমিকদের আবাসন প্রকল্পসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হবে।

বিসিআইসির নথি থেকে জানা যায়, সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত একটি প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানায় প্রতি ৯ দিনে যে পরিমাণ গ্যাস অপচয় হয়, তা দিয়ে পুরো দেশের একদিনের বিদ্যুতের চাহিদা (প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট) মেটানো সম্ভব। দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ঠিক আগের বছর ১৯৭০ সালে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় বার্ষিক ৩ লাখ ৪০ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড এবং ১৯৮৫ সালে বার্ষিক ৯৫ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণ করা হয়। এ কেমিক্যাল প্ল্যান্টগুলো সাধারণত ২০ বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। আরও আগেই এ সার কারখানাগুলো বয়সসীমা পেরিয়ে গেছে। সে কারণে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হতো, সে তুলনায় প্রত্যাশিত পরিমাণে ইউরিয়া সার উৎপাদন করা যেত না।

দেশের চারটি ইউরিয়া উৎপাদনকারী কারখানা থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৯৬ লাখ টন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজনের প্রায় দ্বিগুণ গ্যাস খরচ হয়েছে। চারটি কারখানায় গড়ে একটন ইউরিয়া সার উৎপাদনের জন্য ৪৩ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট (এমসিএফ) গ্যাস প্রয়োজন হয়। কিন্তু নতুন এ কারখানায় ১ টন ইউরিয়া সার উৎপাদনের জন্য ২২ মিলিয়ন ঘনফুট (এমসিএফ) গ্যাস খরচ হবে।

নরসিংদী ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প পরিচালক মো. রাজিউর রহমান মল্লিক বলেন, দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষম দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর এ কারখানার নির্মাণ কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। যা বর্তমান সরকারের জন্যে বড় একটি সফলতা। এছাড়া এটিকে গ্রিন ফার্টিলাইজার প্রকল্পও বলা হচ্ছে। এখানে পরিবেশ দূষণ হওয়ার সুযোগ নেই। পরিবেশ দূষণের যে কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস বের হবে তা ক্যাপচার করে পুনরায় রি ইউজ করে ১০ শতাংশ সার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

Advertisement

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, বিদেশিরা আধুনিক যে টেকনোলজি আমাদের দিয়ে গেছে তা বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা চালিয়ে রাখতে পারবেন বলে আমি আশাবাদী। বর্তমানে জাপানি কনসালটেন্টদের মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রত্যেকটা কর্মকর্তা ও অপারেটরকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের লোকরা অপারেশন সিস্টেম চালাচ্ছে আর বিদেশিরা দাঁড়িয়ে তা দেখছে। এতে আমাদের দেশের লোকদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। কোনোরকম ভুল হলে তারা সেটা ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হাতে-কলমে ট্রেনিং দিচ্ছে। আমাদের কর্মকর্তা ও অপারেটররা তাদের সামর্থ্য দেখাচ্ছে, তাদের যথেষ্ট ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। আমরা অলরেডি সার উৎপাদনে চলে গেছি। আমরা এখন ট্রায়াল রানে আছি, কোনো রকম সমস্যা হচ্ছে কি না সবকিছুই নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

বিসিআইসির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, দেশের কৃষি খাতের মোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানা। দেশের মোট সারের সিংহভাগ পূরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উৎপাদনে যেতে আর অপেক্ষা অল্প সময়ের। এটি চালু হলে দেশের অন্য কারখানায় চাপ কমার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমবে।

শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, কৃষককে আর সারের পেছনে পেছনে দৌড়াতে হবে না। সার কৃষকের পেছনে দৌড়াবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের কৃষকদের কথা ভেবেই এ সার কারখানা স্থাপন করেছেন। এখন আমাদের সারের আমদানি নির্ভরতা কমবে। সার উৎপাদনে দীর্ঘদিনের যে প্রত্যাশা তা পূরণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই সার কারখানাটি উদ্বোধন করবেন। আমরা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় আছি।

এদিকে ১২ নভেম্বরের ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পটির উদ্বোধন শেষে নরসিংদী মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে জনসভা করার কথা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার আগমন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। নৌকার আদলে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। চলছে সাজ-সজ্জার কাজ। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ নেতারা।

এসজে/জেআইএম