বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক ক্রেতাদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার (এএএফএ)। পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পর এমন ঘোষণা দিলো আন্তর্জাতিক এ সংগঠন। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) এএএফএর প্রধান নির্বাহী স্টিফেন লামারের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
Advertisement
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এএএফএ। বিশ্বখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপসহ বিশ্বের এক হাজারেরও বেশি ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান এই সংগঠনের সদস্য। মূলত মজুরি বাড়ার ফলে ৫ থেকে ৬ শতাংশ বাড়তি উৎপাদন ব্যয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে।
চীনের পর বাংলাদেশই বিশ্বে সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলতি সপ্তাহে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে দুদিন আগে প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার ঘোষণা দেয় সরকার, যা আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম এই মজুরি বাড়ানো হয়েছে। পোশাক শিল্প মালিকরা বলেন, মজুরি বাড়ানোর ফলে উৎপাদন ব্যয় অন্তত ৫ থেকে ৬ শতাংশ বেড়ে যাবে। এতে মুনাফার পরিমাণ কমবে। কারণ, মোট ব্যয়ের প্রায় ১০ থেকে ১৩ শতাংশই যাবে মজুরি খাতে। বিষয়টি উল্লেখ করে এই বাড়তি ৫ থেকে ৬ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বাংলাদেশের পোশাক কেনার ক্ষেত্রে দেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে স্টিফেন লামার বলেন, ‘অবশ্যই।’ মজুরি বৃদ্ধিকে সমর্থন জানানোর জন্য এএএফএ দায়িত্বশীল ক্রয়পদ্ধতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার জন্য বারবার আহ্বান জানানো হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন তার জন্য বলা হয়েছে।
Advertisement
সস্তা শ্রমের কারণেই বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প এখন বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে উল্লেখ করে রয়টার্স আরও জানায়, পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত। দেশের ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে এ খাতে, যা বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ১৬ শতাংশের জোগান দেয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পরও বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি এশিয়ার অন্যান্য তৈরি পোশাক উৎপাদক দেশের চেয়ে যথেষ্ট কম। এখন বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি দাঁড়াবে ১১৩ ডলার। যেখানে ভিয়েতনামের শ্রমিকদের মাসিক মজুরি ২৭৫ ডলার এবং কম্বোডিয়ার শ্রমিকদের মাসিক মজুরি ২৫০ ডলার। এর আগে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় মালিকপক্ষ। তাতে সম্মতি জানায় শ্রম মন্ত্রণালয়ও। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই আমরা তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করছি। আগের ৮ হাজার টাকা থেকে ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা হবে। এ ছাড়া তাদের জন্য বছরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে। তাছাড়া বেতন গ্রেড ৭টি থেকে কমিয়ে ৫টি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকরা বেসিক হিসেবে পাবেন মোট বেতনের ৬৩ শতাংশ।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ/
Advertisement