সুবীর নন্দী সরকার নয়ন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সাভারে। তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে ধামরাই উপজেলায় দ্বিতীয় স্থান এবং অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে সাভার উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে সাভারের বিপিএটিসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিন থেকে স্নাতক পাস করেন।
Advertisement
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন?সুবীর নন্দী সরকার নয়ন: অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। মানুষের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা যখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়; তখন তার পরিশ্রম সার্থক হয়। এ অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
জাগো নিউজ: বিসিএস দেবেন এমন ভাবনা মাথায় এলো কিভাবে?সুবীর নন্দী সরকার নয়ন: আমি বিপিএটিসি (বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছি। ‘বিসিএস’ শব্দটির সঙ্গে আমি তখন থেকেই পরিচিত। কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রথম ইচ্ছেটা জাগে অনার্সের চতুর্থ বর্ষে এসে। তখনকার পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমি সরকারি চাকরির পড়াশোনা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই। তাই সরকারি চাকরির পড়ালেখাই যেহেতু করবো তাহলে শুরু থেকে বিসিএসের জন্যই পড়বো; এমন চিন্তা থেকে বিসিএসের ভাবনা শুরু। সত্যি বলতে ক্যাডার সার্ভিসের ব্যাপক কার্যপরিধি ও দায়িত্ব নেওয়ার চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক মর্যাদা আমাকে এ সার্ভিসের প্রতি আকৃষ্ট করে।
Advertisement
আরও পড়ুন: ভাইভা বোর্ডে ফার্স্ট ইম্প্রেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?সুবীর নন্দী সরকার নয়ন: অনার্স চতুর্থ বর্ষে থাকাকালীন ক্যাম্পাসের কিছু সিনিয়রের সহযোগিতা ও সান্নিধ্যে বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করি। তখন আমার থিসিসের কাজও চলমান। সে কারণে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি জোরালো ভাবে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। সেই সময় হঠাৎ আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনার্স সম্পূর্ণ করার পরপরই ক্যাম্পাস ত্যাগ করে সাভারে পরিবারের সঙ্গে থাকা শুরু করি। সাভারে বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন দুই বড় ভাইয়ের সঙ্গে গ্রুপ স্ট্যাডি শুরু করি। মূলত তখন থেকেই আমার বিসিএস প্রস্তুতির মূল যাত্রা শুরু হয়। আমি সে সময় একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ম্যাথমেটিক্স ক্লাস নিতাম এবং কিছু টিউশনি করাতাম। যা কি না আমার বিসিএস প্রস্তুতিকে আরও জোরালো করেছিল। এর বাইরে আমার কখনো কোনো বিসিএস কোচিংয়ে ক্লাস করা হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপের বিসিএস সম্পর্কিত পোস্ট, ইউটিউব, গুগল ও উইকিপিডিয়ার অনেক সাহায্য নিয়েছিলাম। তা ছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আমাকে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবগত করেছিল।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?সুবীর নন্দী সরকার নয়ন: সব সময়, সব পরিস্থিতিতে যে মানুষটি আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন; তিনি হলেন আমার মা। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাহসিকতা সব সময় আমার মনোবলকে স্থির রাখতে সাহায্য করেছে। একটি কথা না বললেই নয়, আমি যখন রাত জেগে পড়াশোনা করতাম; তিনিও তখন অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন। আরও একজন মানুষ (বর্তমানে স্ত্রী) আমার এই জার্নিতে সব সময় অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে এবং আমার সব খারাপ সময়ের সাথী হয়ে থেকেছে।
আরও পড়ুন: চাকরির পাশাপাশি চলে বিসিএসের প্রস্তুতি: আকাশ আহাম্মেদ
Advertisement
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?সুবীর নন্দী সরকার নয়ন: ধৈর্য এবং জেদ—এ দুটি বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেই নতুনদের আগানো উচিত বলে মনে করি। জীবনের যে কোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করে এবং বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জেদকে মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত রুটিন মাফিক ও কৌশল অবলম্বন করে পড়াশোনা করে যেতে হবে। তা ছাড়াও সমমনা বন্ধু-বান্ধব ও সঙ্গ নির্বাচন করতে হবে। নিজের অধিকতর শক্তিশালী ক্ষেত্রগুলোতে সর্বোচ্চ মার্ক প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্বল ক্ষেত্রগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভালো মার্ক প্রাপ্তিতে গ্রুপ স্ট্যাডির মাধ্যমে নলেজ শেয়ারিং খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়াও বিগত বছরের প্রশ্ন অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে একজন পরীক্ষার্থী খুব সহজেই বুঝতে পারে, তাকে কোন টপিকগুলোতে বেশি জোর দিতে হবে এবং কোনগুলো বাদ দিতে হবে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?সুবীর নন্দী সরকার নয়ন: ভবিষ্যতে একজন সৎ এবং নির্ভীক আমলা হয়ে দেশের জনগণের মধ্যকার বৈষম্য কমিয়ে সমতা আনার লক্ষ্যে করণীয় সব কাজ করে যেতে চাই। এছাড়া পরিবার নিয়ে একটি সুখী জীবন যাপন করতে চাই।
এসইউ/জিকেএস