জাতীয়

সর্বজনীন পেনশন নিয়ে আরও জোরালো প্রচারের নির্দেশ

সর্বজনীন পেনশনের বিষয়ে সারাদেশে আরও জোরালো প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সভাকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভাশেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সভায় ভর্তুকি থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে এলাকা ও আয়ের ওপর ভিত্তি করে বিদ্যুৎ ও পানির দাম নির্ধারণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ধীরে ধীরে ভর্তুকি থেকে বের হওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি মন্ত্রী, আমি পানি বিদ্যুতে যে ভর্তুকি পাই- একই ভর্তুকি যদি একজন দিনমজুর পান তাহলে এটা ঠিক হলো না। তাই প্রধানমন্ত্রী এরিয়া ও ইনকাম ওয়াইজ (এলাকা ও আয়ের ওপর নির্ভর করে) পানি-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের কথা বলেন।’

আরও পড়ুন: এলাকাভিত্তিক বিদ্যুৎ-পানির দাম নির্ধারণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

Advertisement

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেন ভর্তুকি যেন বিচারসম্মত হয়। আমি যে রেট দিচ্ছি, একজন নিম্ন শ্রেণির (নিম্ন আয়ের) মানুষও একই ভর্তুকি দিচ্ছে- এটা হয় না। ধীরে ধীরে ভর্তুকির ধারণা থেকে বের হতে হবে। এলাকাভিত্তিক পানি ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করতে হবে।’

চলতি বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। পেনশন স্কিম চালুর পর গত ২১ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধনের পর প্রথমদিনেই অর্থাৎ ১৭ আগস্ট নিবন্ধন সম্পন্ন করে ১ হাজার ৭০০ জন চাঁদা পরিশোধ করেন। তারা প্রায় ৯০ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেন।

প্রথম এক সপ্তাহে চাঁদা পরিশোধ করেন ৮ হাজার ৫৫১ জন এবং তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর প্রথম এক মাস শেষে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৯৯ জন এবং তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।

আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশনের টাকা কোথায় যাবে?

Advertisement

দুই মাস চারদিনের মাথায় অর্থাৎ ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশনে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯১১ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ১২ কোটি ৪৩ লাখ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রথম মাসে প্রায় ১৩ হাজার জন চাঁদা পরিশোধ করলেও দ্বিতীয় মাসে চাঁদা দিয়েছেন দুই হাজারের মতো মানুষ।

নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধকারীর হার কিছুটা কমলেও শুরুর মতো এখনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা চাঁদা পরিশোধে এগিয়ে রয়েছে। তাদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন করে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ করেন ৬ হাজার ৭০৮ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৬ কোটি ৬২ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনে এখন পর্যন্ত যে চাঁদা জমা পড়েছে তার ৫৩ দশমিক ৩০ শতাংশ জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা।

চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিরা। তাদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এ স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৬ হাজার ৭৪ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪ কোটি ২৮ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা।

আরও পড়ুন: করের আওতামুক্ত থাকছে সর্বজনীন পেনশন, ঘোষণা শিগগির

যাদের বর্তমান আয়সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা, তাদের জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম। এ স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন এক হাজার ৬৮১ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৩৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এ স্কিমের মাসিক চাঁদার হার এক হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার।

সর্বজনীন স্কিম গ্রহণকারী প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও এরই মধ্যে তারা এক কোটি টাকার ওপরে জমা দিয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রবাস স্কিম। এ স্কিম গ্রহণ করে এরই মধ্যে চাঁদা দিয়েছেন ৪৪৮ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ এক কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

এমওএস/কেএসআর/জেআইএম