দেশজুড়ে

‘হরতাল-অবরোধ বুঝি না, টাকা দরকার’

‘হরতাল-অবরোধ বুঝি না, টাকা দরকার। ঘর করার সময় একটি এনজিও থেকে লোন নিয়েছি। সপ্তাহে ৪২০০ টাকা কিস্তি। তাই বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। বসে থাকলে কেউ এক টাকা দেবে না।’

Advertisement

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই পৌর সদরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন বারইয়ারহাট-বড়দারোগাহাট রুটের লেগুনাচালক মোহাম্মদ রেদোয়ান। শুধু রেদোয়ান নয়, বিএনপি-জামায়াতের ডাকে অবরোধ উপেক্ষা করে পেটের দায়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন অনেকে।

সরেজমিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তৃতীয় দফার টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথমদিন লেগুনা চলাচল করছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল না করলেও সড়কের ২৯ কিলোমিটার এলাকায় লেগুনা চলছে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও অফিস-আদালতের মানুষ বিকল্প হিসেবে লেগুনায় করে যার যার গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে যাত্রী অনেক কম। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।

লেগুনাচালক সুবল চন্দ্র নাথ বলেন, ‘গাড়ি না চললেতো পেটের জ্বালা মিটবে না। গাড়ি চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার চলে। আগের অবরোধে মালিক নিষেধ করায় গাড়ি চালাইনি। কিন্তু আর পারছি না। আজ সকালে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি।’

Advertisement

ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মোহাম্মদ মামুন। তিনি বলেন, ‘ভোরে গাড়ি নিয়ে বের হই। দুপুর ২টা পর্যন্ত গাড়ি চালানোর পর বন্ধ করে দিই। মালিকের কোনো বাধা নেই। গাড়ি চালালেও আমার ইচ্ছা, না চালালেও কিছু বলে না। সকাল থেকে প্রায় ১৪০০ টাকার ভাড়া পেয়েছি। তেল কিনে, মালিকের ইনকাম দিয়ে আমার ৬০০ টাকা থাকবে।’

আরেক চালক আবুল হোসেন বলেন, ‘জীবিকার জন্য অবরোধের মধ্যে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। তবে রাস্তায় তেমন যাত্রী নেই।’

জোরারগঞ্জ থেকে মিরসরাই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কাজে আসা জুলফিকার আহম্মদ নামের একজন বলেন, ‘অবরোধের কারণে বাস চলাচল বন্ধ। অটোরিকশার ভাড়া বেশি, তাই লেগুনা করে এসেছি। লেগুনা চলাচলের কারণে আমার মতো অনেকের উপকার হয়েছে।’

মিরসরাই কলেজের শিক্ষার্থী রাফি, তোফাজ্জল ও মঈনুল বলেন, ‘আমরা সবসময় বাসে চলাচল করি। অবরোধের কারণে বাস চলছে না। তাই লেগুনায় করে কলেজে এসেছি। বাড়ি যেতেও লেগুনা করে যেতে হবে।’

Advertisement

তৃতীয় দফা অবরোধের প্রথমদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে লেগুনা চলাচল করছে। তবে কোনো দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। মাঝে মধ্যে পণ্যবোঝায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলতে দেখা গেছে। মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে দায়িত্বে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মহাসড়কে র্যাবকেও টহল দিতে দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম জেলা মিনিবাস হিউম্যান হলার (ধুম-শুভপুর-মাদারবাড়ি) সমিতির শাখা লাইনের সাধারণ সম্পাদক ও বারইয়ারহাট পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরিফ উদ্দিন মাসুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বারইয়ারহাট থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত রুটে শতাধিক লেগুনা চলাচল করে। আমরা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অবরোধে গাড়ি চালাতে চালকদের বলেছি। কিন্তু অনেক মালিক ভয়ে গাড়ি চালাতে দিচ্ছেন না। কারণ যদি গাড়ির কোনো ক্ষতি হয়। তাই আমরাও চালানোর জন্য বেশি জোর করছি না।’

এসআর/জিকেএস