দেশজুড়ে

সন্তানসহ বাড়ি ফিরলেন মানসিক ভারসাম্যহীন সেই নারী

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে সন্তান প্রসব করা মানসিক ভারসাম্যহীন সেই নারীর পরিচয় মিলেছে। তার প্রকৃত নাম শরিফা খাতুন। তিনি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার কুলিয়াটি গ্রামের মৃত হান্নান মিয়ার মেয়ে।

Advertisement

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে শরিফার পরিবারের। অবশেষে বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে শরিফার আত্মীয় স্বজনদের কাছে উপজেলা প্রশাসন তাকে হস্তান্তর করে।

শরিফাকে হস্তান্তরের সময় গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিতম সাহা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীমসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

গৃহকর্তা মহসিন আলী বলেন, মাসখানেক আগে রাস্তায় ঘুরছিল পাগলিটি। ছেলেমেয়রা উত্যাক্ত করছিল তাকে। বিষয়টি দেখে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার পরিবারের লোকজন। শারীরিক গঠন দেখে সন্তানসম্ভবা বুঝতে পেরে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পর অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। গত (১৪ অক্টেবর) সে ফুটফুটে একটি সন্তান জন্ম দেয়।

Advertisement

মহসিন আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মহসিন আলীর স্ত্রী জোসনা খাতুন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর ফুটফুটে মেয়ে ফাতেমার খেলনা আর জিনিস গোছাচ্ছিলেন। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তখন। তিনি শরিফার আত্মীয় স্বজনকে বাচ্চার যত্ন নেওয়ার কথা বলছিলেন বারবার।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জোসনা খাতুন জানান, গেল এক মাস নিজের সন্তানের মতো করে তাদেরকে দেখভাল করেছেন। কোনো ত্রুটি রাখেননি তাদের প্রতি। বাড়িটি ছিল আনন্দে। অভাবের সংসারেও ছিল বেশ হাসি খুশি। পাগলিকে বিদায় জানাতে কষ্ট হলেও তার পরিবারের কাছে দিতে পারছেন এটাই বড় সান্ত্বনা।

শরিফা খাতুনের চাচা মহব্বত আলী জানান, শরিফা খাতুন দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ছয় বছর যাবত চিকিৎসা করেও কোনো লাভ হয়নি। এক বছর আগে বাসা থেকে বের হন। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি তাকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে দৃষ্টি গোচর হয় তাদের। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শরিফাকে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তারা।

শরিফা খাতুনের মামাতো ভাই আমিনুল ইসলাম জানান, শরিফা খাতুন ও তার পরিবার একদম অসহায়। তাকে নিতে আসার টাকাটা পর্যন্ত ছিল না। পরে সাংবাদিকদের দেওয়া টাকায় পথখরচ দিয়ে শরিফাকে নেওয়ার জন্য আসা হয়েছে।

Advertisement

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আরশাদ আলী জানান, বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রসাশক মহদয়কে জানানো হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে আদালতের মাধ্যমে ভবঘুরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হবে। এরইমধ্যে তার পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তাকে নিতে এসেছেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আসিফ ইকবাল/এফএ/জেআইএম