আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, জিবরাইল (আ.) নবিজিকে (সা.) প্রশ্ন করলেন, ইহসান কী? নবিজি (সা.) উত্তর দিলেন, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করা যেন তুমি তাকে দেখছো। যদি তুমি তাকে না দেখো তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
Advertisement
এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই
১. ইবাদতের সময় আল্লাহর মুরাকাবা বা তার উপস্থিতি অনুভব করতে পারলে তা সর্বোচ্চ স্তরের ইবাদত হয়। উল্লিখিত হাদিসে নবিজি (সা.) আল্লাহর মুরকাবার পরিচয় দিয়েছেন। যে ব্যক্তি অন্তরে আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করবে, সে তার সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী করবে। তার ইবাদত হবে পরিপূর্ণ ও সর্বোচ্চ স্তরের। মানুষের সমালোচনা, শত্রুতা বা ক্ষতির ভয় তার অন্তরে থাকবে না, মানুষের প্রশংসা লাভের আকাঙ্ক্ষাও না।
২. আল্লাহ তার বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি তাদের সব কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করেন। এমন কি অন্তরে তারা যা লুকিয়ে রাখে তাও তিনি জানেন। কোনো গোপন বিষয় তার কাছে গোপন থাকে না। আল্লাহ বলেন, وَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ یَعۡلَمُ مَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ فَاحۡذَرُوۡهُজেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে যা রয়েছে তা জানেন। সুতরাং তোমরা তাকে ভয় করো। (সুরা বাকারা: ১৩৫)
Advertisement
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَلَیۡکُمۡ رَقِیۡبًاনিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। (সুরা নিসা: ১)
যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং তার উপস্থিতি অনুভব করে, তাদের প্রতিদান ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন,
وَاُزۡلِفَتِ الۡجَنَّۃُ لِلۡمُتَّقِیۡنَ غَیۡرَ بَعِیۡدٍ هٰذَا مَا تُوۡعَدُوۡنَ لِکُلِّ اَوَّابٍ حَفِیۡظٍ مَنۡ خَشِیَ الرَّحۡمٰنَ بِالۡغَیۡبِ وَجَآءَ بِقَلۡبٍ مُّنِیۡبِۣ ادۡخُلُوۡهَا بِسَلٰمٍ ذٰلِکَ یَوۡمُ الۡخُلُوۡدِ
Advertisement
আর জান্নাত মুত্তাকিদের কাছে আনা হবে; কোনো দূরত্ব থাকবেনা। (বলা হবে) এ হলো তাই যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল- প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী ও (গুনাহ থেকে নিজেকে) হেফাজতকারীর জন্য। যারা না দেখেই রহমানকে ভয় করতো এবং বিনীত হৃদয়ে উপস্থিত হতো। তোমরা তাতে শান্তির সাথে প্রবেশ করো; এটা অনন্ত জীবনের দিন। তারা যা চাইবে, সেখানে তাদের জন্য তাই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরও অধিক। (সুরা কাফ: ৩১-৩৫)
৩. পূর্ববর্তী আলেমরা মানুষকে আল্লাহর মুরাকাবা বা তার উপস্থিতি অনুভব করার শিক্ষা দিতেন। বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি বড় এক আলেমের কাছে গিয়ে বললো, আমাকে কোনো উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আকাশের দিকে তাকাও। সে আকাশের দিকে তাকালে তিনি বললেন, তুমি জানো এটা কে সৃষ্টি করেছেন? সে বললো, আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি বললেন, সব সময় মনে রাখবে যিনি এটা সৃষ্টি করেছেন তিনি সর্বক্ষণ তোমাকে দেখছেন। তুমি যেখানেই থাকো না কেন, তার দৃষ্টির বাইরে নও, যেভাবে আকাশের বাইরে নও, তাই সতর্ক থাকো!
আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার (রহ.) বলেন, আমি একবার আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের (রা.) সাথে মক্কায় যাচ্ছিলাম। শেষ রাতে আমরা বিশ্রামের জন্য থামলাম। এ সময় এক রাখাল পাহাড় থেকে নেমে এলো। ইবনে ওমর বললেন, তুমি কি এখানে পশু চরাচ্ছ? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার কাছে একটা ছাগল বিক্রি করে দাও। সে বললো, আমি দাস, এই ছাগলগুলো আমার নয়। তিনি বললেন, তোমার মনিবকে বলে দিও একটি ছাগল নেকড়ে খেয়ে ফেলেছে। রাখাল বললো, কিন্তু আল্লাহ তো আছেন, তিনি তো আমাকে দেখছেন!
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) একজন রাখালের এ রকম ইমান ও খোদাভীরুতায় আশ্চর্য হলেন এবং কেঁদে ফেললেন। তিনি ওই দাসটিকে কিনে মুক্ত করে দিলেন। তাকে এক পাল বকরি কিনে দিলেন। (সিয়ারু আ’লামিন-নুবালা)
সূত্র: আল-ফাওয়ায়িদুস-সুলাসিয়্যাহ মিনাল-আহাদিসিন-নববিয়্যাহ
ওএফএফ/জেআইএম