মতামত

জীবন কী এতো তুচ্ছ?

রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়। কিন্তু এ কারণে একজন ছাত্রের জীবন প্রদীপ নিভে যাবে- এটি হতে পারে না। চট্টগ্রামে গতকাল সেটিই হলো। বলা যায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া  সোহেল আহমেদ আসলে নষ্ট রাজনীতির বলি হলো। কিছু মানুষের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করাকে কেন্দ্র করে অকালে ঝরে গেল একটি সম্ভাবনাময় প্রাণ। কিন্তু জীবন কী এত তুচ্ছ? প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে আর কতো সোহেলকে দাবার ঘুঁটির মতো ব্যবহার করা হবে নিজেদের স্বার্থে? আর ছাত্ররাই বা কতোদিন লেজুড়বৃত্তি করে যাবে। সময়ের প্রয়োজনে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আজ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ৩১ মার্চ চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অষ্টম সেমিস্টারের বিদায়ী অনুষ্ঠান নিয়ে ছাত্রদের দুই গ্রুপে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিদায়ী অনুষ্ঠানের মহড়া চলছিল। এ সময় দুপুর ১টার দিকে ১৫/২০ জন যুবক লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়া কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় চারজন গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে সোহেল আহমেদকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তাররা জানান হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মৃত্যু হয় সোহেলের। বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির যে কালো ছায়া তা থেকে অনেকটাই মুক্ত ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেখানেও এই বিষবৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে। একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ছাত্ররা মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত তা খুনোখুনিতে গিয়ে গড়াচ্ছে। একারণে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একদিকে একজন ছাত্রের জীবন গেল। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় পড়াশোনায়ও ব্যাঘাত ঘটলো। আবার যখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে তখনও যে এর জের থাকবে না- কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটবে না, তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। একজন ছাত্রকে পড়াশোনা করতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত। অভিযোগ আছে, সেখানে একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়াকে কেন্ত্র করে ক্ষমতাসীন দলের দুইজন নেতার রেষারেষির কারণেই এই হত্যাকাণ্ড। কথায় আছে, ‘শিলপাটায় ঘষাঘষি আর মরিচের দফাসারা’- এভাবে আর কতো জীবন যাবে? কে নেবে এই মৃত্যুর দায়? রাজনৈতিক মোড়কে কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে তার বিচার হওয়ার নজির খুব একটা নেই। কিন্তু বিচারহীনতার সংস্কৃতি সমাজকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা কী আমরা ভেবে দেখেছি? আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যারা দায়ী তারা যতোই প্রভাবশালী হোক না কেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এর কোনো বিকল্প নেই। এইচআর/এমএস

Advertisement