আইন-আদালত

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মেনে নেওয়া যায় না: হাইকোর্ট

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের হৃৎপিণ্ড, তার বাসভবনে হামলার অর্থই হলো বিচার বিভাগের হৃৎপিণ্ডে আঘাত করা। বিচার বিভাগ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ন্যাক্কারজনক ঘটনা বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

Advertisement

২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির তিন নেতার আগাম জামিন শুনানিকালে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) আদালত এসব মন্তব্য করেন।

হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাদের জামিন আদেশ দেন।

জামিন পাওয়া নেতারা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী এবং যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

Advertisement

এসময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করেন হাইকোর্ট। জামিনপ্রাপ্তরাও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।

শুনানির শুরুতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী তিন আইনজীবী নেতার জামিন প্রার্থনা করেন। এসময় হাইকোর্ট বিএনপির আইনজীবীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের প্রতীক। তার বাসভবনে ন্যাক্কারজনক হামলা করা হলো, আপনারা কি এর প্রতিবাদ করেছেন? কোনো নিন্দা জানিয়েছেন?’

আরও পড়ুন>> হাইকোর্টে আগাম জামিন পেলেন বিএনপির তিন নেতা

তখন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছি।’ এসময় বিএনপির আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কিত পত্রিকার কাটিং আদালতের কাছে তুলে ধরেন।

Advertisement

এসশয় ‘প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা নাটকের অংশ বলে মনে করি’- বিএনপির আইনজীবীদের এমন বক্তব্য তুলে ধরে হাইকোর্ট বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা আমরা নাটকের অংশ বলে মনে করি না। এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আপনারা একেকজন এক আদর্শের থাকতে পারেন। বাইরে রাজনীতি করতে পারেন। কিন্তু কোর্ট নিয়ে রাজনীতি করবেন না। জুডিশিয়ারি সবার। জুডিশিয়ারিকে মেলাইন (হেয়) করবেন না।’

তখন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জুড়িশিয়ারিকে মেলাইন করার প্রশ্নই আসে না। জুডিশিয়ারি না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’ ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে আমার জীবনের অংশ বলে মনে করি।’

এসময় হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমীর কাছে তার বক্তব্য জানতে চান। কে এম মাসুদ রুমী বলেন, ‘২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ থেকে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। বিচারপতির বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপির আইনজীবীরা এটাকে নাটকের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাননি।’

শুনানি শেষে আদালত বিএনপির তিন আইনজীবীর আইন পেশায় অবদান, তাদের ব্যক্তিগত ইমেজ বিবেচনায় নিয়ে তিন সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এই জামিন আদেশ অন্য মামলায় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।

এমএইচ/ইএ/এমএস