বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক কর্মচারীর বেতন আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
এ নিয়ে সোমবার (৬ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কর্মচারী মোহাম্মদ ফয়সাল।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের প্রথম দিকে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে রোয়াংছড়ি উপজেলা ভূমি অফিসে চেইনম্যান পদে যোগ দেন ফয়সাল। আগের কর্মকর্তাদের সময় পদ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারলেও ইউএনও ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী তাকে দিয়ে নিজের বাসার জন্য বাজার করা, ঘর ঝাডু দেওয়া, এমনকি নিজের কাপড়-চোপড় পরিষ্কারের কাজ করাতেন। একদিন কর্মকর্তার স্ত্রীর কাপড় পরিষ্কার করতে অস্বীকৃতি জানালে তখন অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন তাকে। চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেন। ওই দিনের পর থেকে অফিসে গেলে হাজিরা খাতায় সই করতে বাধা দেন খোরশেদ আলম। এখন আর অফিসে যান না তিনি।
২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট ১৫ মাস বেতন বন্ধ ছিল। মাসিক বেতন অনুযায়ী ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৬০ টাকা হয়। এর মধ্যে ৬৬ হাজার টাকা ফয়সালকে দিয়ে বাকি ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬০ টাকা ইউএনও নিজের কাছে রেখে দেন।
Advertisement
এর আগে উপজেলার ছাইঙ্গ্যা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে খুশিদা নাহারের নামে বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর কোনো ঠিকাদার নির্মাণ করতে রাজি না হওয়ায় ফয়সালকে দায়িত্ব দেন ইউএনও। লোকসানের ভয়ে তিনিও (ফয়সাল) অপারগতা জানালে ইউএনও ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। আশ্বাস পেয়ে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা সরকারি বরাদ্দের ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করলে ইউএনও ফয়সালের মাধ্যমে প্রথম ধাপে দেড় লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করান। সেখান থেকে ইউএনও ৪০ হাজার টাকা নিজে রেখে বাকি টাকা ফয়সালকে দেন। দ্বিতীয় ধাপে ৫০ হাজার ও পরবর্তীতে আরও ৪০ হাজার তাকে দেওয়া হয়।
একপর্যায়ে প্রদত্ত টাকা শেষ হয়ে গেলে বাকি কাজের জন্য ইউএনওর কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘তুই (ফয়সাল) কাজ নিয়েছিস তুই যেমনে পারিস শেষ করে বুঝাই দে, না হলে চাকরিচ্যুত করবো।’
উপায় না পেয়ে ফয়সাল তার স্ত্রীকে দিয়ে বেসরকারি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কাজটা চালিয়ে যান। বর্তমানে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উপায় না দেখে তার বকেয়া বেতন ও পাওনা টাকা ফিরে পেতে ৬ নভেম্বর ইউএনওর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ফয়সাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের এক কর্মচারী বলেন, ‘খোরশেদ আলম চৌধুরী রোয়াংছড়ি ইউএনও ও ভূমি অফিসের দায়িত্ব নেওয়ার পর ফয়সালকে বাসায় কাজ করার জন্য নিয়ে যান। পরে ফয়সালকে দিয়ে বাজার করানো, ছেলেকে স্কুলে আনানেওয়াসহ বাসার সব কাজ করাতেন। তাদের মধ্যে কোনো এক সমস্যা হওয়ায় ফয়সালের বেতন বন্ধ ও অফিসে না আসার জন্য বলেছেন বলে শুনেছি।’
Advertisement
রোয়াংছড়ি উপজেলার ছাইঙ্গ্যা ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য মো. মোরশেদ জাগো নিউজকে বলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে খুশিদা নাহারের নামে একটি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ হয়। সে ঘরটি নির্মাণে ভূমি অফিসের ফয়সাল দায়িত্ব পান। পরে ঘরটি লিন্টার পর্যন্ত করার পর কোনো এক কারণে দীর্ঘদিন কাজটি বন্ধ ছিল।
এ বিষয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার ভূমি মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ফয়সাল আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের অভিযোগ দিয়েছে বলে শুনেছি। তবে ফয়সালের বিরুদ্ধে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের টাকা আত্মসাৎ, অসদাচরণ ও মাদক সেবনের অভিযোগও আছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ায় ফয়সাল আমাকে বিপদে ফেলার জন্য এমন মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এরপরও জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্ত দিলে তার বেতনের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ফয়সালের বিরুদ্ধেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। এছাড়া ইউএনওর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নয়ন চক্রবর্তী/এসজে/জেআইএম