২০১৪ সালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদফতর। কিন্তু সেই উদ্যোগের সুফল মেলেনি এখনো। সেসময় কিশোরগঞ্জকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো চলছে ভিক্ষাবৃত্তি। ভিক্ষুকদের দাবি সরকারি সুবিধায় তাদের পেট চলে না, তাই তারা পুরানো পেশায় ফিরছেন।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের মতোই গ্রাম-গঞ্জে, হাট-বাজারে ও পাড়া-মহল্লায় ভিক্ষা করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ভিক্ষা করছেন অসংখ্য ভিক্ষুক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাদেরকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল তাদের প্রায় সবাই আবার ফিরেছেন আগের পেশায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নতুন ভিক্ষুক। ২০১৪ সালে কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও তা এখন শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। তেমন কোনো কাজেই আসেনি মহতী সেই উদ্যোগ।
জেলা সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নীলফামারীর ছয় উপজেলায় ৪ হাজার ৮০০ জন ভিক্ষুক রয়েছেন। তার মধ্যে নীলফামারী সদরে ৯৯৪ জন, সৈয়দপুরে ৫৩৫ জন, কিশোরগঞ্জে ১৩০৬ জন, জলঢাকায় ৪০৮ জন, ডিমলায় ৯৮৩ জন এবং ডোমারে ৫৭৪ জন। এদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ উপজেলার ১৩০৬ জনকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পুনর্বাসন করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের পুটিমারী এলাকার শাহবুল হক। তার এক পা ও এক হাত অচল। দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষা করে মা ও বোনকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। পরে উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবার উদ্যোগে ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় একটি মুদি দোকান পান শাহবুল। যা কয়েকমাস চললেও বর্তমানে দোকানে মালামাল না থাকায় আগের মতো বেচাবিক্রি করতে পারেন না তিনি। দোকানে নতুন মালামাল কেনার সামর্থ্যও নেই তার। পরে বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীদের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে হয় তাকে। শুধু শাহবুল নন, তার মতো আরও অনেক ভিক্ষুক পুনর্বাসনের পরও ফিরেছেন আগের পেশায়।
Advertisement
শাহবুল বলেন, আমার এক হাত ও এক পা অচল হয়ে যাওয়ায় কোথাও যেতে পারি না। দোকানেও আগের মতো বেচাবিক্রি করতে পারি না। দোকানে বেচাবিক্রির মতো মালামালও নেই। আবার মালামাল কিনবো সেই সামর্থ্য নেই। বাধ্য হয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে যা পাই তা দিয়ে চলি। সরকার যদি আবারো কিছু সহযোগিতা করে তাহলে একটু উপকৃত হবো।
কিশোরগঞ্জের গাড়াগ্রাম পুষণা এলাকার গোলাপি বেগমের স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। একমাত্র ছেলে দুই বছর আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বর্তমানে তিন নাতি-নাতনিকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছেন তিনি। সরকারি যে ভাতা পান তা দিয়ে কষ্টে দিন কাটে তার। তিনিও বাধ্য হয়ে নেমেছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে।
গোলাপি বেগম বলেন, উপজেলা থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। মানুষের কাছে হাত না পাতলে না খেয়ে থাকা লাগবে। সংসারে উপার্জন করার মতো কেউ নেই। সরকারি বিধবা ভাতা দিয়ে সংসার চলে না।
উপজেলা শহরে ভিক্ষা করতে আসা আব্দুর রশিদ, হেলাল ও মুজিবরসহ আরও ১০ থেকে ১৫ জন জানান, অভাবের সংসারে ঠিকমতো দু’বেলা খেতে পারেন না তারা। সরকারের তেমন কোনো সাহায্যও পান না। তাইতো পরিবারের অভাব মেটাতে বাধ্য হয়েই ভিক্ষা করছেন তারা।
Advertisement
স্থানীয় ভ্যানচালক আব্দুল আজিজ বলেন, এর আগের ইউএনও অনেক ভিক্ষুককে ঘর, দোকান, নগদ অর্থ ও গরু-ছাগল দিয়েছেন। আমরাও জানি কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ভিক্ষুক পেশা এখন আগের থেকে আরও বেশি হয়েছে। তাদের অভাব থাকলেতো হাত পাতবেই।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, আমরা ১৩০৬ জনকে বিভিন্নভাবে পুনর্বাসন করেছি। এরমধ্যে ৭৭৪ জনকে বিভিন্ন ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। ৫৪ জনকে দোকান ঘর, ছাগল ও নগদ অর্থ দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আগামীতে নতুন করে কোনো ফান্ড আসলে তাদেরকে আরও সহযোগিতা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, উপজেলায় কিছু ভিক্ষুক আছে যারা অভ্যাসের তাড়নায় ভিক্ষা করছেন। আমরা তাদের বিভিন্ন সময় সরকারিভাবে সহযোগিতা করছি। আমরা স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এফএ/এমএস