একুশে বইমেলা

বইয়ের বিক্রি নির্ভর করে প্রচারণার ওপর: মাসুম আওয়াল

মাসুম আওয়াল এই সময়ের শিশুসাহিত্যের উজ্জ্বল মুখ। ১৯৮৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহী শহরে তার জন্ম। ২০১২ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন। এরপর রাজশাহী থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান। অংশগ্রহণ করেন বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্পে। প্রশিক্ষণ শেষ হয় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এরপর সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। সতেরো বছর ধরে শিশুসাহিত্য চর্চা করছেন তিনি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন আর্টলিট সেরা বই পুরস্কার ২০২৩। এ ছাড়া শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন উত্তরণ সম্মাননা।

Advertisement

মাসুম আওয়ালের এপর্যন্ত ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম কিশোর কবিতার বই ‘সবুজ ফড়িং হলুদ ফড়িং’ প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। এরপর ২০১০ সালে ছড়ার বই ‘ছুটছে মজার ছড়ার গাড়ি’, ২০১৩ সালে গল্পগ্রন্থ ‘জটা কবিরাজ ও ভূতুড়ে বটগাছ’, ২০১৪ সালে ছড়ার বই ‘ভূততাড়ুয়া’, ২০১৮ সালে ছড়ার বই ‘আমিও ফড়িং তুমিও ফড়িং’, ২০১৯ সালে ছড়ার বই ‘টই টই হই চই’ ও শিশুতোষ গল্পের বই ‘আশেকীন স্যারের ক্লাসে মিষ্টি একটা পরি’, ২০২১ সালে ছড়ার বই ‘বাকশো ভরা একশো ছড়া’ এবং ২০২৩ সালে কিশোর উপন্যাস ‘গোয়েন্দা ডব্লিউ হিং টিং ছট’ প্রকাশিত হয়।

সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?মাসুম আওয়াল: বইমেলার আগেই চলে আসতে পারে আমার নতুন বই। পাঁচটি বইয়ের ইলাস্ট্রেশনের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি বই হবে আমার মজার মজার ১০০ ছড়া নিয়ে। অন্য চারটি ছোট ছোট বই। চারটি মিলেই একটি শিশুতোষ সিরিজ। প্রকাশকও ঠিক হয়েছে। আগেভাগেই এ বিষয়ে বলতে চাই না। সব কাজ গুছিয়ে নিয়ে তবেই পাঠক বন্ধুদের নতুন বইয়ের খবর দিয়ে দেব।

Advertisement

আরও পড়ুন: লিখতে চান অনেকেই কিন্তু পড়তে চান কম: শফিক হাসান

জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান? মাসুম আওয়াল: আমরা একটা পরিচ্ছন্ন গোছানো বইমেলা চাই। আমার একটাই প্রত্যাশা, এবারের মেলার স্টল এমন ভাবে সাজানো হোক; যেন মানুষ খুঁজে নিতে পারে তাদের পছন্দের প্রকাশনীর বই।

জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?মাসুম আওয়াল: গত বছর বইমেলায় খুব বেশিদিন যেতে পারিনি। বইমেলার শেষের দিকে গিয়েছিলাম। অনেক বড় পরিসরে চমৎকার আয়োজন ছিল। অসঙ্গতি বলতে আমার যেটা মনে হয়েছে, মেলার স্টল বিন্যাস ছড়ানো ছিটানো ছিল। স্টল খুঁজে পেতে একটু কষ্টই হচ্ছিল। যারা বইমেলার স্টল বিন্যাস করেন, তারা বিষয়টি বেশি ভালো বুঝবেন।

জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে? মাসুম আওয়াল: আমার মনে হয় বইমেলায় বইয়ের বিক্রি কমে যায়নি বরং প্রতি বছর তুলনামূলক ভাবে বাড়ছে। প্রকাশনীর সংখ্যাও বাড়ছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন? মাসুম আওয়াল: কঠিন বাস্তবতা হলো—প্রথমত একটি বইয়ের বিক্রি নির্ভর করে তার প্রচারণার ওপরে। কোনো বই পড়ার আগে আমরা কেউ বলতে পারি না, বইটি ভালো নাকি মন্দ। গুণগত মানসম্পন্ন নাকি মানসম্পন্ন নয়! যিনি যত চমৎকারভাবে বইয়ের প্রচারণা করতে পারেন, তার বইয়ের কাটতি তত বেশি হয়। তাই ভালো লেখার পাশাপাশি বইয়ের প্রচারণাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: বইমেলার প্রত্যেকটি প্রবেশপথ খোলা রাখা জরুরি: মোহাম্মদ অংকন

যে লেখকের বই বিক্রি হয় না, তার বই সহজে কোনো প্রকাশক করতে চান না। একটি বই লেখার পর সেটা যদি পাঠকের কাছে না পৌঁছায়; সেই বই লিখে লাভ কী? দেখুন বাংলাদেশে পাঠকের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। প্রচুর মানুষ এখনো বই পড়েন। অনেক বাবা-মা আছেন, যারা চান তাদের শিশুরা ছোটবেলা থেকে ক্লাসের বইয়ের পাশাপাশি অন্য বই পড়ুক। তাদের বই কিনে দেন তারা।

একটি নতুন বইয়ের খবর আমি যখন এক লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো; তখন সেই বইটা দুই-তিন হাজার কপি বিক্রি হওয়া তেমন বিষয় নয়। এজন্য আমি মনে করি, বইয়ের প্রচার-প্রচারণা হওয়া প্রয়োজন। লেখক তার নিজের বইয়ের প্রচারণা করেন কিংবা কোনো প্রকাশক তার প্রকাশিত বইয়ের প্রচারণা করেন, কোনোটাই খারাপ নয়। তবে লেখককে আগে ভালো লেখার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন? মাসুম আওয়াল: শুধু মেলার নয়, সব পাঠকের জন্যই পরামর্শ—আপনারা বইমেলায় আসবেন। নতুন নতুন বই কিনবেন। আপনারা বই পড়লে তবেই লেখক-প্রকাশকের সার্থকতা। একটি বইয়ের পেছনে অনেক মানুষের পরিশ্রম থাকে। একজন লেখক সারাজীবন পরিশ্রম করে যান তার পাঠককে আনন্দ দেওয়ার জন্য। বই পাঠের ভেতর যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়; সেই আনন্দ অন্য কিছু থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। বইকে ভালোবাসুন, বই পড়ুন। শিল্প-সাহিত্যের জয় হোক। জয় হোক মানবতার।

এসইউ/এমএস