মতামত

অবরোধ দুর্ভোগে গণমানুষের কথা ভাবুন

একদিকে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম, তার ওপর মাসখানেক ধরে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের আয় কমে গেছে। জীবনের নিরাপত্তাও কমে গেছে। মানুষ কষ্টে আছে; আতঙ্কে আছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গণমানুষের দুর্ভোগের সীমা যেন ছাড়িয়ে গেছে। কোথায় যাবে মানুষ কোথায় মিলবে প্রতিকার। সরকার তার গদিটা ধরে রাখতে তৎপর, বিরোধীদলের সবাই মিলে সরকারকে গদি থেকে নামিয়ে সেই গদিতে নিজেরা বসতে যা যা করা দরকার তাই করে চলেছে। মাঝখানে চিড়েচ্যাপটা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থা আরও কতদিন চলবে তা ভেবে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ছে।

Advertisement

আন্দোলন অবরোধের নামে একশ্রেণির মানুষ যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। গত কয়েকদিনে সবজির ট্রাক, চিনিবোঝাই ট্রাক, গমবোঝাই ট্রাকে আগুন দিয়েছে তারা। পণ্য নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারছে না ব্যবসায়ীরা, সরবরাহে টান পড়ছে ফলে দাম বাড়ছে। বিরোধীদের ডাকা হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। বিপণি-বিতানগুলোতে কমেছে কেনাকাটা। শপিংমল বা দোকানপাট খুললেও নেই বিক্রিবাট্টা। বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক পণ্য পরিবহন। অনেকটাই থমকে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। মানুষের আয় কমে গেছে, সেই সাথে কমে গেছে জীবনের নিরাপত্তা।

রোববার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টে কথা হয় কাপড়ের দোকানি হাশেম মিয়ার সঙ্গে। জানান, দিনে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিক্রি আছে তার দোকানে। কিন্তু আগেরবার অবরোধের তিনদিনে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকার বেচাকেনাও হয়নি। হাশেম মিয়া বলেন, ‘কাস্টমার একেবারেই নাই। অন্য সময় দুপুরের আগেই বেচাকেনা শুরু হয়। আজ দোকান খুলেছি সেই সকালে, এখন পর্যন্ত বিক্রিই শুরু করতে পারি নাই।’

ফার্মগেটের ফুটপাতের দোকানি হাসিব বলেন, ‘রাস্তাঘাটে মানুষই নাই। ফুটপাতেও বেচাকেনা কম। অন্যান্য দিনের তুলনায় বিক্রি কমেছে শতকরা ৮০ শতাংশ। মানুষ না থাকলে ক্রেতা পাব কই? যারা বের হচ্ছেন জরুরি কাজে, তারা তো এখন কেনাকাটা করছেন না। তাই আমাদের বিক্রিও নাই।’

Advertisement

হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়িক ক্ষতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মো. বশির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই ভালো নয়। এর মধ্যে হরতাল-অবরোধ আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে। নতুন করে শুরু হওয়া রাজনৈতিক সহিংসতা, হরতাল-অবরোধ আমাদের চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। এখন ৫ শতাংশ ক্রেতাও পাইকারি বাজারে আসছে না। মানুষ আসবে কী করে, রাস্তাঘাটে তো অবরোধ?’

অন্য এলাকায়ও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের বক্তব্য এবং উদ্বেগও মোটামুটি অভিন্ন। তারাও সবাই বলছেন, সব ধরনের পণ্যের বেচাকেনাই কমে গেছে। হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে তারা চিন্তিত।

রাজনৈতিক সহিংস এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও। দেশীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা ও জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে হরতাল-অবরোধসহ অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর যে কোনো অসহিষ্ণু রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসছে। বাংলাদেশকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সবক শিখানো সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভুল নীতির মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলগুলোকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে প্রতিনিয়ত অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দোহাই দিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ঘোষণা করেছে ভিসানীতি। ইদানীং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাম্প্রতিক এমন কূটনৈতিক বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে দেশের সচেতন জনগণ হতাশ হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কথা বলছেন, যা কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত ও বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশের জনগণের জন্য অসম্মানজনক।

 

এধরনের আন্দোলন পরিহার করুন, সংলাপ-সমঝোতার পথে আসুন। দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের কথা ভাবুন। আপনাদের আন্দোলনে তাদের পাশে পেতে চাইলে অবশ্যই তাদের কথা ভাবতে হবে। গণতন্ত্রে জনগণই শক্তি এবং জনগণই শেষ কথা।

 

বিএনপিকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের করা সব কর্মকাণ্ড ও আচরণ সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী। বিএনপির প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ ও ভুল নীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিএনপি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অতীতের মতো আগুন সন্ত্রাস ও লাশের রাজনীতি শুরু করেছে। এমনটাই বলছেন দেশের বিজ্ঞজনরা।

দেশজুড়ে ডাকা অবরোধে দু-একটা ঝটিকা মিছিল ছাড়া রাজপথে দেখা যায়নি জামায়াত-বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে। সারাদেশের সব রাজপথ রয়েছে সম্পূর্ণভাবে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। জামায়াত-বিএনপি ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে রাস্তায় টায়ার ও গাছ ফেলে আগুর জ্বালাচ্ছে। সব ধরনের যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। তাদের প্রধান নেতা পুলিশ হেফাজতে, অন্য নেতারা পলাতক, কয়েকশ আটক। মির্জা ফখরুলের মুক্তি দাবির সঙ্গে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা ছাড়া সারাদিনে তাদের আর কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। ঝটিকা মিছিল করে, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে ১৩, ১৪, ১৫ সালে নির্বাচন বানচাল এবং সরকার পতনের চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

গণসম্পৃক্ততা না থাকলে গণআন্দোলন এভাবে হয় না। অতীতে কোনো দেশে, কখনো, কেউ এভাবে আন্দোলন করে সফল হয়নি। গণআন্দোলন হয় গণজাগরণের মাধ্যমে, যা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ঝটিকা আক্রমণ গেরিলা যুদ্ধের টেকনিক। গেরিলা টেকনিক ব্যবহার করে তারা দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে। বাংলাদেশের মতো একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পরাস্ত করে সরকার দখল করা দুঃস্বপ্ন মাত্র। জামায়াত এবং তাদের জঙ্গি অঙ্গ সংগঠনগুলোর অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ অনেক আগেই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সামনের দিনের অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্যও তাদের ঝটিকা আক্রমণের কৌশল নিতে হবে, অন্য কোনো পথ এখন আর খোলা নেই। গেরিলা যুদ্ধ শুরু করায় তারা এখন তথাকথিত সুশীল সমাজ এবং বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন পাওয়ার পথও বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, সন্ত্রাসীদের কেউ সমর্থন দিতে পারে না।

এধরনের আন্দোলন পরিহার করুন, সংলাপ-সমঝোতার পথে আসুন। দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের কথা ভাবুন। আপনাদের আন্দোলনে তাদের পাশে পেতে চাইলে অবশ্যই তাদের কথা ভাবতে হবে। গণতন্ত্রে জনগণই শক্তি এবং জনগণই শেষ কথা।

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস