স্বাস্থ্যসেবা দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে, মানুষ সেবা পাচ্ছে। এসডিজি অর্জন হয়েছে, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে— এমন দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমাদের স্বাস্থ্যখাতে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ জনবলের অভাব। এটা মেটাতে অনেক সময় লাগে।
Advertisement
মন্ত্রী বলেন, ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি) এটা আমরা এখনো পুরোপুরি শুরু করতে পারিনি, এটা একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য। অসংক্রামক ব্যাধি বেড়ে যাচ্ছে তার চিকিৎসাব্যবস্থাও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ, এগুলো মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সোমবার (৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদে সায়মা ওয়াজেদের বিজয়লাভ, বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম কালাজ্বর ও ফাইলেরিয়া মুক্ত হওয়া উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয় সরকারের মেয়াদ শেষের পথে। আমাদের কাছে অভিযোগ আসে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেনি। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি? উত্তরে জাহিদ মালেক বলেন, আমি মনে করি স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে, মানুষ সেবা পাচ্ছে। এসডিজি অর্জন হয়েছে, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে।
Advertisement
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ভালো হয়েছে বিধায় গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। বিধায় পোলিও, টিটেনাস, ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর নির্মূল হয়েছে। এ অর্জন বিশ্ববাসীও গ্রহণ করেছে। জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলো কত উন্নত হয়েছে। মেডিকেল কলেজ ৫টি থেকে ৩৭টি হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সংখ্যা ৫০০ থেকে ১৫০০ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে ওষুধের কোনো অভাব নেই। ওষুধ এখন রপ্তানি হয়। ১২০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন বসানো আছে। অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো আছে। যার ফলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছি। এটা তো জাদু নয়, কাজের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। আমরা করোনার ৩৭ কোটি টিকা বিনামূল্যে দিয়েছি। অর্জন যারা দেখতে পায় না তারা কখনো দেখতে পাবে না। চোখ বন্ধ করে থাকলে তো অর্জন দেখা যাবে না।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, দেশের বাইরে অনেকেই চিকিৎসার জন্য যান। ধরেন ৫ লাখ লোক চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেলো। আর ১৭ কোটি লোক তো এখানে চিকিৎসা নিচ্ছে। বছরে ৩৬ কোটি লোক দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে বাইপাস সার্জারি হচ্ছে, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হচ্ছে, লিভার ট্রান্সফারের প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের জনবলের একটু ঘাটতি আছে। জনবল ওভার-নাইট বাড়ানো যায় না। শুধু বাংলাদেশে না আমেরিকা ও ইউরোপে ঘাটতি আছে। আমরা চেষ্টা করছি ঘাটতি কমিয়ে আনতে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে মানুষ আরও ভালো স্বাস্থ্যসেবা পায়। চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি নতুন হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যখাতে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ জনবলের অভাব। এটা মেটাতে অনেক সময় লাগে। আগে হাসপাতালে ৩০ হাজার বেড ছিল, এখন ৭০ হাজার হয়েছে। ৭০ হাজার বেডকে যদি পরিচালিত করতে হয়। মেডিকেল কলেজসহ নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে, প্রশিক্ষিত জনবল দরকার, এটার ঘাটতি আছে।
চিকিৎসা নিতে বেশি খরচ হচ্ছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এটি আমি আংশিক গ্রহণ করতে পারি। সরকারি হাসপাতালে ৭০ শতাংশ মানুষ বিনামূল্যে সেবা নিয়ে থাকেন। ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ এটা আমরা এখনো পুরোপুরি শুরু করতে পারিনি, এটা একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য। অসংক্রামক ব্যাধি বেড়ে যাচ্ছে তার চিকিৎসা ব্যবস্থাও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ, এগুলো মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছি। মন্ত্রী হিসেবে কতটুকু ভালো করেছি, তা মানুষ মূল্যায়ন করবে।
সায়মা ওয়াজেদ ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ভোটদানে অংশগ্রহণ করে। এতে সায়মা ওয়াজদে পান আট ভোট ও নেপালের প্রার্থী শম্ভু আচার্য পেয়েছেন দুই ভোট। ২০২৪ সাল থেকে পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বগ্রহণ করবেন সায়মা।
কালাজ্বর নির্মূল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ধীরে ধীরে কালাজ্বর সংক্রমণ কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। উপজেলা পর্যায়ে প্রতি দশ হাজারে একজনের কম রোগী হলে রোগটি নির্মূল হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ সেই যোগ্যতা অর্জন করেছে। কালাজ্বর সম্পর্কে গেল তিন বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে কালাজ্বরমুক্ত ঘোষণা করে।
একই সঙ্গে ফাইলেরিয়া নির্মূলে বাংলাদেশের অর্জনের কথাও জানান জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, গেল ৫ মে বাংলাদেশকে ফাইলেরিয়ামুক্ত ঘোষণা করা হয়। এ সাফল্যে বাংলাদেশ বিশ্বের আঠারোতম ও এশিয়ার চতুর্থ দেশ।
এমএএস/এমএএইচ/জিকেএস