রাজনীতি

বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের ফটকে থাকা চেয়ারে চিঠির স্তূপ

সরকার পতনের আন্দোলন বেগবান করতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেদিন থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ।

Advertisement

অন্যদিকে, কার্যালয় ভবনের সামনের রাস্তার দু’পাশে এখন দিনরাত অবস্থান করছেন পুলিশ সদস্যরা। কার্যালয়ের তালাবদ্ধ কলাপসিবল গেটের ভেতরে একটি চেয়ারের ওপর পড়ে আছে চিঠির স্তূপ। দাপ্তরিক এসব চিঠি রেখে যাচ্ছেন বার্তাবাহকরা।

বাইরে থেকে দেখা যায়, বিএনপিকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ২ নভেম্বর ইসির সাদা রঙের খামে দেওয়া চিঠিও রয়েছে। মূলত বিএনপিকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের একজন বার্তাবাহক এ চিঠি নিয়ে যান সেখানে। কিন্তু কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকায় কলাপসিবল গেটের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে চেয়ারের ওপর চিঠিটি রেখে যান তিনি। এরপর বেশ কয়েকটা চিঠি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে, ওই চিঠিগুলো কে বা কারা দিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর রাত থেকে এ কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের আসা-যাওয়া বন্ধ রয়েছে। কার্যালয়ের সামনের ফুটপাত দিয়েও এখন পুলিশ কাউকে চলাচলের জন্য ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। পথচারীদের ঘুরে যেতে বলা হচ্ছে।

Advertisement

গত শনিবার থেকে পুলিশি পাহারা বাড়ানো হয়েছে নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। বসানো হয়েছে কাঁটাতারের ব্যারিকেড। অফিসের সামনে পুলিশের একস্তরের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত কাঁটাতারের ব্যারিকেড। সেদিন মতিঝিলে আওয়ামী লীগের সমাবেশের কারণে বিএনপি কার্যালয়ের তিনদিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছিল। সেই রাতে ব্যারিকেড দু’পাশে রাখা হয়েছে।

জনবহুল নয়াপল্টনের এ ভিআইপি সড়কটি গত কয়েকদিন ধরে তার পরিচিত রূপ হারিয়েছে। সড়কে প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা হাতেগোনা। তবে, রিকশার সংখ্যা বেশি। এ সড়কের দোকানপাটগুলোও বন্ধ রয়েছে।

কথা হলে নয়াপল্টনের একটি গলির চা দোকানি সুরজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমার প্রতিদিন চা বিক্রি হতো ১০০ থেকে ১৫০ কাপ। এখন অর্ধেকের কম বিক্রি হয়। এর অধিকাংশই পুলিশসহ সাংবাদিকরা চা খেয়েছেন। সাধারণ মানুষজন কম। কারণ গ্রেফতারের ভয়ে কেউ এ সড়ক দিয়ে চলাফেরা করছেন না।

অন্যদিকে, সংলাপের আহ্বান জানিয়ে গত ২ নভেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চিঠি ঝুলিয়ে দিয়েছে ইসি। তবে দলীয় সূত্র জানায়, অন্যান্য দাপ্তরিক চিঠি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দায়িত্বরত কর্মীরা নিয়েছেন।

Advertisement

রাজনৈতিক কার্যালয়ে দাপ্তরিক চিঠিপত্র কীভাবে নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জাগো নিউজকে বলেন, সংলাপের আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশন গেটে চিঠি ঝুলিয়ে রেখেছেন। এর বেশি আমার জানা নেই।

কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রেখে নির্বাচন কমিশনের চিঠি ঝুলিয়ে রাখাকে ‘মহাতামাশা’ অভিহিত করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিএনপির বন্ধ কার্যালয় রেখে ইসির চিঠি পাঠানো ছিল আরেকটি তামাশা। আসলে সরকার নিজেদের অতিচালাক ভাবছে এবং সবকিছুতেই ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের যেভাবে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাতে এটি সুস্পষ্ট যে, আগামী নির্বাচন যেনতেন-ভাবে করে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে বদ্ধপরিকর অবৈধ শাসকগোষ্ঠী।

কেএইচ/এমএএইচ/জেআইএম