সবুজে ভরা ক্যাম্পাস কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ক্যাম্পাসে রাস্তার দুই পাশে সারি সারি শোভাবর্ধনকারী ও বাহারি ফুলগাছের সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে। সারাদিনের পড়ালেখার ব্যস্ততার পর বিকেল বেলা ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতির মাঝে ঘোরাঘুরি-আড্ডায় নিমিষেই অবসাদগ্রস্ত মনে সতেজতা ফিরে পান শিক্ষার্থীরা। তবে এ ক্যাম্পাসকে সবুজ-শ্যামল করার পেছনে রয়েছে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম তাদের কজনের নামইবা আমরা জানি! তারা থেকে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে।
Advertisement
তাদেরই একজন আলতাফ হোসেন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মালি হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মালি আলতাফ হোসেন। ক্যাম্পাসের সূচনালগ্ন থেকে মরুসদৃশ ক্যাম্পাসকে বর্তমানে রূপ দেওয়ার পেছনে রয়েছে তার অসামান্য শ্রম। ৩০ বছর ধরে সন্তানের মতো করে যত্ন নিচ্ছেন ক্যাম্পাসের। বিশ্ববিদ্যালয়ে রোপণ করা প্রতিটা গাছের সঙ্গে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে মালি পদে যোগদান করেন আলতাফ হোসেন। এরআগে সড়ক ও জনপদ বিভাগের আরবরি কালচারের চুক্তিভিত্তিক কাজের সুবাদে ১৯৯২ সাল থেকেই ক্যাম্পাসে কাজ শুরু করেন তিনি।
আলতাফ হোসেন বলেন, ‘১৯৯২ সালে প্রথম ঢাকার আরবরি কালচারের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ মাসের চুক্তিভিত্তিক ডায়না চত্বরে ফুলের বাগানের কাজ করি। পরে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন ট্রেজারার আমাকে ঢাকা থেকে ডেকে পাঠালে এসে আবেদনের মাধ্যমে চাকরিতে যোগ দেই। আমি যখন ক্যাম্পাসে আসি তখন ক্যাম্পাস একদম সাদা ছিল। ক্যাম্পাসের একপাশে দাঁড়ালে অপর পাশ দেখা যেতো। সব ছিল ফসলি জমি। সেই সাদামাটা জায়গাটা আজকের এই সবুজ-শ্যামল আঙিনায় পরিণত হয়েছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটা জায়গায় যত সারিতে যত ধরনের গাছ আছে প্রত্যেকটার সঙ্গে আমি সংযুক্ত আছি। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে করতে ক্যাম্পাসের প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে। সবুজ ক্যাম্পাসের দিকে তাকিয়ে যখন দেখি যে গাছগুলো আমার লাগানো তখন মনটা জুড়িয়ে যায়। যখন দেখি বাইরে থেকে মানুষ এসে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করছে, শিক্ষার্থীরা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে তখন মনের মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পাই, তৃপ্তি অনুভব করি। এখানেই আমার আসল পাওয়া।’
তবে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে গাছ মারা যাওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক হারে গাছ কাটার কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করে ক্যাম্পাসের প্রথম মালি আলতাফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ব্যানার, পোস্টার টাঙানোর জন্য পেরেক মারা এবং বৈদ্যুতিক তারের কারণে অনেক গাছ মারা যায়। যখন দেখি নিজের হাতে রোপণ করা এবং পরিচর্যা করা বিশাল গাছটি মারা যায়, তখন খুব কষ্ট লাগে। একটি গাছ ছোট থেকে বড় করতে অনেক কষ্ট হয়। মেইনগেটের সামনে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল। এসব কারণে ওই গাছটি মারা গেছে। এখন ওই জায়গায় নতুন যে গাছটি রয়েছে তার ওপরেও বৈদ্যুতিক তার রয়েছে।’
ক্যাম্পাসে যে হারে গাছ কাটা হচ্ছে সে হারে গাছ লাগানো হচ্ছে না বলে জানান আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাস তার সেই পুরোনো জৌলুস হারাতে বসেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি দিতে হবে। একজন মালিতো আর চাইলে উদ্যোগ নিতে পারে না।’
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম কারনাইন বলেন, ‘শুরু থেকেই তিনি এ ক্যাম্পাসের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার মতো মানুষদের অক্লান্ত পরিশ্রমের করণেই আমরা এমন সুন্দর ক্যাম্পাস পেয়েছি।’
এসআর/জেআইএম