অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুর মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনেক রহস্য। এরই মধ্যে সে রহস্য উন্মোচন করতে অভিনেত্রীর প্রেমিক জিয়াউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হিমুর মৃত্যুর পর যে নামটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় রয়েছে, সেটি হলো তার ‘পালিত ভাই’ তথা মেকআপ আর্টিস্ট মিহির। হিমুর মৃত্যুর সময় প্রেমিক জিয়াউদ্দিন রুফি ছাড়াও সেখানে মিহিরও ছিলেন। মৃত্যুর পর হাসপাতালেও নিয়ে যান তারা দুজন।
Advertisement
এরপর সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে আলোচনায় আসে, এ মিহির শুধু অভিনেত্রী হোমায়রা হিমুই নয়, ২০১৮ সালের মে মাসে বিনোদন জগতের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তাজিন আহমেদের মৃত্যুর সময়ও পাশে ছিলেন। এমনকি দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসকের মৃত ঘোষণা পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন। এককথায় তাদের পুরো মৃত্যুর ঘটনাটি দেখেছেন এই মেকআপ আর্টিস্ট।
আরও পড়ুন: ‘এক মিনিটের নাই ভরসা, কথাটা আবারও প্রমাণ করলেন হিমু’
হিমুর মৃত্যুর পর বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদক সাপ্লাইয়ের সঙ্গে জড়িত মিহির। হিমুর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পর এ বিষয়টি নিয়েও ফেসবুকে চলে তুমুল আলোচনা সমালোচনা।
Advertisement
আরও পড়ুন: হিমুকে হারিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া যেন শোকবই হয়ে গেছে
অবশেষে এসব আলোচনা সমালোচনার মাঝে রোববার সকালে আলোচিত মিহির নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন। সেখানে তিনি হোমায়রা হিমুর মৃত্যু নিয়ে কথা বলেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ খণ্ডনের চেষ্টা করেন।
১৫ মিনিটের সেই লাইভের শুরুতেই মিহির জানান, তিনি প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। এজন্য তিনি বিষয়টি সবার সঙ্গে শেয়ার করতে লাইভে এসেছেন।
মিহির বলেন, ‘ফেসবুকে আমাকে নিয়ে ঝড় তুলছে কিছু মানুষ। আমি হেন, আমি তেন, আমি ড্রাগ ডিলার।’ তারপর তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এরপরও পুলিশ আমাকে রিমান্ডে নেয় না কেন?’ তিনি বলেন, ‘আপনারা যে এটা লিখেছেন আপনারা কি জানেন আমি এই তিনদিন কোথায় ছিলাম? আমি হিমুকে বাসা থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেছি, যখন ডাক্তার ঘোষণা দিয়েছেন যে হিমু মৃত, সঙ্গে সঙ্গে হিমুর বয়ফ্রেন্ড দুটি মোবাইল নিয়ে পালিয়ে গেছে। তারপর ওর (হিমুর) খালারা আসছে, আমরা থানায় গিয়েছি, স্টেটম্যান্ট দিয়েছি। তখন থেকে আমি কাল (শনিবার) পর্যন্ত থানায় বসা ছিলাম। শনিবার সকালে ওসি আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পুরান ঢাকা পাঠাইছেন। ওখানে গিয়ে আমি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সাক্ষী দিই। তারপর ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে বলেছেন যে, ঠিক আছে আপনি এখন যেতে পারেন। এসআই সাব্বির ভাই বললেন, আপনার আর কোনো কাজ নেই, আপনি যেতে পারেন। এই তিনদিন ধরে আমাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে, নজরবন্দিতে রাখা হয়েছে। আমার ফোন ট্রাক করা হয়েছে। আমাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে। হাজার হাজার প্রশ্ন করা হয়েছে।’
Advertisement
‘আমাকে পুলিশ আর কী রিমান্ডে নেবে, আমাকে কী নিয়ে ফাঁসি দিয়ে দেবে’- এমন প্রশ্ন রেখে মিহির বলেন, ‘আমি কি ক্রাইম করছি। আমি হিমুর বাসায় ছিলাম এই কারণে। আমার কাজ বন্ধ, আমি একটা সিরিয়াল করছি ওইটার পেমেন্ট আজ ছয় মাস ধরে বিটিভিতে আটকানো, বাসাভাড়া দিতে পারি না। আমার বাড়িওয়ালি আমার রুম তালা মেরে দিসে। তাই আমি বাধ্য হয়ে হিমুর বাসায় ছিলাম। আর এমনিতেও থাকতাম। রাতে হয়তো আমি আমার বাসায় থাকতাম, দিনে হিমুর দেখাশোনা করতে চলে আসতাম। কারণ হিমুর মাকে আমি মা ডাকছি, উনাকে আমি আম্মা বলতাম। হিমুর মা আমাকে বলছে যে আমি না থাকলে আমার মেয়ের দেখাশোনা করিস।’
‘তাজিন আপা মরছে আমি ছিলাম, হিমু মরছে আমি ছিলাম- এ বিষয়টি আপনাদের ভাবিয়ে তুলছে’ উল্লেখ করে মিহির বলেন, ‘এই পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুজন মানুষ মরছে আমি ছিলাম। এরা আমার নিকট আত্মীয় ছিল, ফ্যামিলি মেম্বারের মতো। তাজিন আপা আমাকে বলত, মুন্নার সঙ্গে আমার যখন বিয়ে হইছে তোর মতন ছেলে হইত আমার। তাজিন আপা আমাকে নিজের ছেলের মতো সম্বোধন করতো। তাজিন আপার বাসায় ছিলাম বলে আমি আপাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছি। চিকিৎসা করাইছি। চিকিৎসা করতে গিয়ে উনি তিন-চার ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা পরে মারা গেছেন। আর না হলে তো তাজিন আপা স্ট্রোক করে বাসায় মরে পড়ে থাকত। সাত দিন ধরে দরজা বন্ধ থাকত, পরে লাশ বাহির করতে হইত। আপনারা খবর পাইতেন? আমি ছিলাম বলে এরকম কিছু হয়নি। এটা কেউ বলে না যে, তুই ছিলি বলে আমরা তাজিন আপারে ফ্রেশ তরতাজা দাফন করতে পারছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি না থাকলে হিমুর বয়ফ্রেন্ড তাকে ঘরের ভেতর ঝুলাইয়া রাইখা দরজা বন্ধ কইরা পালাইয়া যাইত। এটা কি হতো না? এটা তো কেউ বলেন না যে, তুই ছিলি বলে হিমুকে আমরা বের করে আনতে পারছি বা ওকে ধরতে পারছে পুলিশ। হিমুর বয়ফ্রেন্ড ইন্ডিয়ান। না হলে তো ওই ছেলে হিমুকে রেখে কবে পালাইয়া যাইত। ঠান্ডা মাথায় পলাইয়া যাইত। আমি ভালো করছি এটা কেউ বলে না। সব খারাপ করছি, আমি রাবন। আমাকে পারলে ফাঁসি দিয়া দেন নিয়া।’
আরও পড়ুন: মায়ের কবরের পাশে হিমুকে সমাহিত করা হবে: জ্যোতিকা জ্যোতি
‘আপনারা একটা মানুষ আছেন, কেউ আছেন যে আমার পাশে দাঁড়াবেন। আমার খোঁজ নিয়েছেন। আমি কেমনে আছি, আমার মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি মানুষ না? আমার কষ্ট হচ্ছে না? হিমু আমার বোনের মতো মরে গেছে, আমার কি ভেতরে সুখ লাগতেছে? আমার ভালো লাগতেছে? আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলার জন্য সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন!
মিহির বলেন, ‘হিমু মরছে আমি ছিলাম। এখন আমি করছি না ওই ছেলে করছে সেটা তো ওই ছেলে নিজেই স্বীকার করছে। তারপরও কেনো আপনাদের ভেতর এত দ্বিধাদ্বন্দ্ব যে, মিহির ছিল। মিহির ছিল বলেই তো ফ্রেশ হিমুরে বের করে হাসপাতালে নিয়ে আসছে। আমি উপকার করছি এই জন্য আমাকে সকলে মিলে ফাঁসি দিয়ে দেন। আমার কেউ নেই তো, কোনো বড় লেভেলের মানুষ নেই যে, আমাকে সাপোর্ট দেবে, ব্যাকআপ দেবে।’
‘আমি মনে করতাম মিডিয়া আমার ফ্যামিলি, আমি কাজ করি, সবাই আমার পরিবার, আমি যখন যেখানে কাজ পাই তাদের জন্য মন থেকে কাজ করি। এমনকি অতিরিক্ত কাজও করে দেই। তাদের যে কাজ আমার করার না এগুলোও আমি করি শুটিংয়ের সেটে। আমি সেটে সবাইকে আপন করার চেষ্টা করি। সবাইকে ভালো করে সার্ভিস দেই। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি এত বছরের সার্ভিসে। আমার ভুলটা কোথায় একজন বের করেন, একজন গাইড করেন আমাকে। তা না খালি আমাকে নিয়ে বড় বড় কথা আর বদনামি করবেন, করেন। আমি যদি কোনো ধরণের খারাপ কাজ করতাম তাহলে ভয়ে পালাইয়া যাইতাম। আমার ভেতরে ভয় লাগে না। আমার ভেতরে ঘেন্না লাগছে, ভেতরে কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের জন্য মায়া হচ্ছে যে, আপনারা এতটা নেগেটিভ যে আপনারা মানুষকে নিয়ে ভাবতে পারেন না। মানুষের সাহায্য করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, আমি এই পাঁচ বছরে একটা দিন দেখি নাই হিমুর মা মরছে, হিমু না খাইয়া কান্নাকাটি করতো আমি শুটিং থেকে ছোট ভাইকে ফোন করে বিকাশে টাকা পাঠাইয়া ওর জন্য রুমে খাবার পাঠাইছি। ওর জ্বর, বিছানা থেকে উঠতে পারে না। কাউকে তো দেখিনি ওকে খাবার দিতে, ওর খেয়াল নিতে, ওর পাশে এসে দাঁড়াইতে। আপনারা কলিগ, ও মরার পর ওরে নিয়া বিভিন্ন মিটিং মিছিল করবেন। কিন্তু জীবিত থাকতে তো ওরে নিয়া এরকম নাচেন নাই কেউ। এখন এগুলো বললে তো আমি খারাপ। আমি অবশ্যই খারাপ, আমাকে নিয়া ফাঁসি দিয়ে দেন।’
এমআই/এমএমএফ/জেআইএম