মিরাজ রহমান গতানুগতিক ধারার বাইরে কাজ করা মানুষ। মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন শিক্ষার্থী থাকাবস্থায়। কন্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ করেন দৈনিক যুগান্তরে। পড়াশোনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারার পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও। বর্তমানে নিরত আছেন এমফিল গবেষণায়। দৈনিক ডেসটিনি, দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক বাংলাদেশের খবর ও প্রিয় ডটকমে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল ‘প্রিয় ইসলাম’র সৃষ্টি ও পথচলা তারই হাতে। টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি। তার লেখা বইয়ের সংখ্যা ১২টি। ‘প্রোডাক্টিভ মুসলিম’, ‘মুসলিম সভ্যতার ১০০১ আবিষ্কার’ ও ‘দ্য গ্রেটেস্ট অন্ট্রাপ্রেনর মুহাম্মাদ (সা.)’র মতো তিনটি বেস্টসেলার বইয়ের লেখক তিনি। বরিশাল শহরে জন্ম হলেও পড়াশোনাসহ বেড়ে ওঠা ইট-পাথরের শহর ঢাকায়। সুলতানস নামে একটি প্রকাশনীর কর্ণধার মিরাজ রহমান। বর্তমানে কাজ করছেন দৈনিক খবরের কাগজের ইসলাম বিভাগের প্রধান হিসেবে।
Advertisement
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?মিরাজ রহমান: শুধু এ বছরের বইমেলায় নয়; প্রতি বছর বইমেলায় আমার একটি বই প্রকাশের টার্গেট থাকে। একেকটি বই নিয়ে ন্যূনতম দুই-তিন বছর কাজ করি। এমনভাবে শিডিউল সাজিয়ে রেখেছি, ২-৩টি কাজ করার পরে প্রতি বছর যেন একটি করে বই প্রকাশ করা সম্ভব হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে আমার একটি মৌলিক বই প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন: প্রাণ জাগাতে বইয়ের বিকল্প নেই: ইমরুল ইউসুফ
Advertisement
এবার মেলা উপলক্ষে যে বইটি প্রকাশিত হবে, বইটির কাজ শুরু করেছি ২০২০ সালে। সিরাতের মৌলিক বই। রাসুলুল্লাহর (সা.) জীবনধারাকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে; একজন মানুষের প্রতিদিনের জীবন-যাপনের মতো করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। সিরাতের বইগুলো বা নবিজির জীবন সংক্রান্ত আমলের বইগুলো দেখলে, একজন সাধারণ মুসলিম হিসেবে প্রশ্ন জাগে—নবিজি (সা.) কি সারাদিন শুধু আমল-ইবাদত আর জিকির-আজকারই করেছেন? একজন মানুষের যাপিত জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক যে কাজগুলো থাকে; সেগুলো তিনি কীভাবে সম্পাদনা করেছেন—বইটিতে সে বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। পাশাপাশি সংযুক্ত করেছি তার আমল, ইবাদত ও জিকির-আজকারের রুটিনও।
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?মিরাজ রহমান: বাংলা একাডেমির বইমেলাটি আসলে নিছক কোনো বইমেলা নয়; বাঙালি জাতি হিসেবে এটি আমাদের একটি পরিচয়ের জায়গা, ঐতিহ্যগত চিহ্ন। মেলাটিকে আমি কখনো সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখিনি। কারণ যারাই এর আয়োজক থাকেন, তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সুন্দর একটি আয়োজন করার চেষ্টা করেন। মানুষ হিসেবে কিছু ভুল-ত্রুটি, কিছু কমতি থাকতেই পারে। আয়োজনের তুলনায় সেগুলো একেবারেই গৌণ। তবে মেলা চালু থাকার সময়টি নিয়ে আমার বরাবরই আপত্তি রয়েছে। সারাদিন (সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত) মেলা খোলা রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?মিরাজ রহমান: গতবারের বইমেলায় সব মিলিয়ে পাঁচ-সাতবার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। বেশ কিছু অসঙ্গতি নজর কেড়েছে। যেমন-১. স্টলে স্টলে ঘুরে বেছে বেছে বই কেনার সুযোগ কমে গেছে।২. মেলাজুড়ে বইয়ের ক্রেতার তুলনায় সাধারণ দর্শনার্থী বেশি মনে হয়েছে। যার ফলাফল মেলা শেষে মোট বিক্রির সংখ্যা জানতে পেরে আমরা বুঝতে পেরেছি। ৩. খাবারের দোকানের আধিক্য মনে হয়েছে এবং যত্রতত্র খাবার-কফি-চা-সিগারেটের দোকান দেওয়াকে দৃষ্টিকটু লেগেছে। ৪. বেশ কিছু লেখক ও বিক্রেতাকে দেখা গেছে হকারি করে মেলার বিভিন্ন স্থানে বই বিক্রি করছেন; এটাকে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ঐতিহ্যের পরিপন্থী মনে হয়েছে। ৫. মেলার পরিধি-সীমা দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার কারণে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বইমেলার প্রত্যেকটি প্রবেশপথ খোলা রাখা জরুরি: মোহাম্মদ অংকন
Advertisement
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?মিরাজ রহমান: এটা তো প্রমাণিত কথা—গতবারের মেলা শেষে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী বিগত বছরগুলোর তুলনায় গত বছরে সর্বমোট বই বিক্রির পরিমাণ কমেছে। এর একটি অন্যতম কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, এখন সর্বোপরি অনলাইনে বই বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার বিক্রি প্রভাবিত হয়েছে। তবে এটিকে নেগেটিভভাবে দেখার কিছু নেই। মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষের উচিত—অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও যাতে বইয়ের বিক্রি বৃদ্ধি পায়; সে অনুযায়ী মার্কেটিং স্টাট্রেজি সাজানো।
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?মিরাজ রহমান: বর্তমান যুগ বা সময়টাকেই বলা হয় প্রচারণা বা মার্কেটিংয়ের যুগ। মার্কেটিং হচ্ছে এখনকার দুনিয়ার এগিয়ে থাকতে বেস্ট লার্নেবল স্কিল। নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো পণ্যই এখন মার্কেটিংয়ের আওতামুক্ত নয়। সুতরাং যুগ চাহিদাকে বুঝে বইয়ের মার্কেটিং বা প্রচারণায় লেখক, প্রকাশক এবং মেলার আয়োজক কমিটি—সবার অংশগ্রহণ করা উচিত বা এগিয়ে আসা উচিত। একজন লেখক যত ভালোই লেখেন না কেন, যদি তা সম্পর্কে পাঠক খবর না পান, তাহলে সে তা কিনবেন কীভাবে? সুতরাং মার্কেটিংয়ে মনযোগ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?মিরাজ রহমান: বইমেলা উপলক্ষে পাঠককে দেওয়ার মতো পরামর্শ শুধু একটি, সেটি হলো—আমরা সবাই মেলাতে ঘুরতেও যাবো, সাথে সবাই অন্তত একটি করে বইও কিনবো। যে পরিমাণ দর্শককে মেলাতে ঘুরতে যেতে দেখা যায়; প্রত্যেকে যদি একটি বা দুটি করে বই কেনেন—তাহলে আশা করি সর্বসাকুল্যে বই বিক্রির মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পাবে। আর এতে উপকৃত হবেন প্রকাশক। উপকৃত হবেন লেখক এবং সমৃদ্ধ হবেন পাঠক-দর্শক সবাই।
এসইউ/এমএস