ইসলাম ধর্ম আপন-পর সবাইকে ভালোবাসতে শেখায়। তবে আমরা সেই ইসলাম সম্পর্কে ভীত, যে ইসলাম সন্ত্রাসবাদ, বিস্ফোরণ ও আত্মঘাতী বোমা দ্বারা নিরীহ লোকদের রক্তপাত ঘটায়। আমরা সেই ইসলাম সম্পর্কে ভীত, যে ইসলাম ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ঘৃণা ও শত্রুতার পসার ঘটায় এবং শক্তির সাহায্যে এর বার্তাকে প্রসারিত করতে চায়।
Advertisement
আসলে প্রকৃত ইসলামের সঙ্গে এসবের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম হচ্ছে উল্লিখিত যাবতীয় মন্দ বিষয়াদির বিপরীত এক ধর্ম। আসল ইসলাম হচ্ছে সেই ধর্ম, যার উল্লেখ মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে রয়েছে এবং যা শ্রেষ্ঠনবির (সা.) মহান ব্যবহারিক জীবনাচরণ দ্বারা সমর্থিত। তার বিপরীত এবং বিরোধী কোনো কিছুই ইসলাম নয়।
ইসলামের আসল শিক্ষা এবং নৈরাজ্যবাদীদের সেসব মনগড়া ব্যাখ্যাকৃত মত ও আচরণের মধ্যে আমাদের সুস্পষ্ট পার্থক্য করতে হবে, যারা ইসলামের নামের বিকৃতি ঘটাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, এ যুগে এক বৃহৎ জনসমষ্টি ইসলামের সৌন্দর্যকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
যে ব্যক্তি প্রকৃত অর্থেই ইসলামে বিশ্বাস করে, তাকে মুসলমান বলে। আর প্রকৃত ও খাঁটি মুসলমান সে, যার হাত এবং যার জিহ্বা থেকে সব মানুষই সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ’ (সুনান নিসাই, ৮ম খণ্ড)। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজকের দিনে ইসলাম ‘সন্ত্রাস ও রক্তপাতের ধর্ম’ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, নাউযুবিল্লাহ। এক বৃহৎসংখ্যক জনগোষ্ঠী এটাকে প্রকৃতপক্ষে এমন এক ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করে, যে ধর্ম মানুষে মানুষে এবং জাতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণার বিস্তার ঘটায়।
Advertisement
প্রকৃত ঘটনা হলো, ইসলাম হচ্ছে শান্তির সবচেয়ে বড় সমর্থক এবং পবিত্র নবি মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সব যুগের শান্তির সর্বশ্রেষ্ঠ সমর্থক, সারা মানবজাতির জন্য শান্তির বাণী বিস্তারকারী।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজ দল-মত নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সন্ত্রাস যে দলেরই হোক না কেন, তা নির্মূলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কেননা যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা কোনোভাবেই ধার্মিক হতে পারে না, তারা সন্ত্রাসী।
ধর্ম একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। যার যার ধর্ম সে পালন করবে, এতে বাদ সাধার কারও অনুমতি নেই। সারা বিশ্বের সব মানুষই তাদের নিজ ধর্ম পছন্দ করতে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন, তারা যে ধর্মই পছন্দ করবে, যে ধর্মের আজ্ঞানুবর্তী হয়ে তারা সুখী হবে, সে ধর্মই তারা প্রতিপালন করবে। পৃথিবীর বুকে এমন ব্যক্তি নেই, যে কোনোভাবে কাউকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করবে অথবা সেজন্য শক্তি প্রয়োগ করবে। ধর্মের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
ধর্ম একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। যার যার ধর্ম সে পালন করবে, এতে বাদ সাধার কারও অনুমতি নেই। সারা বিশ্বের সব মানুষই তাদের নিজ ধর্ম পছন্দ করতে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন, তারা যে ধর্মই পছন্দ করবে, যে ধর্মের আজ্ঞানুবর্তী হয়ে তারা সুখী হবে, সে ধর্মই তারা প্রতিপালন করবে। পৃথিবীর বুকে এমন ব্যক্তি নেই, যে কোনোভাবে কাউকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করবে অথবা সেজন্য শক্তি প্রয়োগ করবে। ধর্মের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটাকে পছন্দ করার ব্যাপারে মানুষকে স্বাধীনতা দান করা হয়েছে।
Advertisement
অন্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা নিয়ে অন্য আরেকটি প্রশ্ন অনেকের মনে পীড়া দেয়। ইসলাম কি মুসলমানদের অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি ঘৃণা করতে, নাকি সম্মান ও দয়া প্রদর্শন করতে শিক্ষা দেয়?
এ বিষয়ের ওপর পবিত্র কোরআন আমাদের পথনির্দেশনা দান করে। পবিত্র কোরআন বর্ণনা করে, ‘বলো, হে আহলে কিতাব! আমাদের এবং তোমাদের মধ্যে সমশিক্ষাপূর্ণ একটি নির্দেশের দিকে এসো, যা হচ্ছে আমরা কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করি এবং আমরা তার সঙ্গে আর কাউকেই শরিক করি না এবং তাকে ছাড়া আমরা আর কাউকেই প্রভু-প্রতিপালক বলে মান্য করি না।’ (৩ : ৬৪)।
ধর্মের কোনো উল্লেখ এখানে করা হয়নি। পবিত্র কোরআন বলে, তোমাদের উচিত, সর্বদাই প্রত্যেক সৎকর্ম ও মহৎ উদ্দেশ্যের আহ্বানে যোগদান করা, সে আহ্বান যদি কোনো ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ অথবা যে কোনো ধর্মের অনুসারী, এমনকি নাস্তিকের তরফ থেকেও আসে, ইসলাম মুসলমানদের এ ধরনের লোকদের আহ্বানে সাড়া দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করারও আবশ্যকতা বোধ করে। তাদের উচিত কেবল সেই কারণটির প্রতিই তাকানো, যে জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, কে আহ্বান করছে, সেদিকে নয়।
ইসলাম সোনালি এক নীতি নির্ধারণ করেছে, যা সব মানুষই অনুসরণ করতে সক্ষম এবং তা থেকে সবাই উপকৃত হতে পারে। ইসলাম এ শিক্ষা দান করে যে, সব আচরণের ভিত্তি সর্বদাই ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।
পবিত্র কোরআন বর্ণনা করে, ‘হে যারা ইমান এনেছ, আল্লাহর ব্যাপারে স্থির সংকল্প হও, সাক্ষ্যদানে নিরপেক্ষতা বজায় রাখো এবং মানুষের শত্রুতা যেন তোমাদের ন্যায়বিচারহীন কোনো কাজে প্ররোচিত না করে। সর্বদাই ন্যায়পরায়ণ হও, সেটাই হচ্ছে সততার অধিকতর নিকটবর্তী এবং আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা করো, সে বিষয়ে আল্লাহ অবশ্যই অবগত আছেন’ (৫ : ৮)।
এ কথা এটাকে পর্যাপ্তভাবে খোলাসা করেছে, ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের ওপর এটা নির্ধারিত করা হয়েছে যে, শত্রুদের সঙ্গেও তারা ন্যায্যতার নিরিখে আচরণ করবে। এমন একটি ধর্ম, যা ঐক্য ও সহযোগিতার অনুপম শিক্ষার বিস্তার ঘটায়, সেই ধর্মের এমন কোনো সম্ভাবনা আছে কি যে অন্য লোকদের বিরুদ্ধে কখনো সহিংসতা অথবা ঘৃণার বিস্তার ঘটাবে?
মানবজাতিকে দেওয়া হেদায়াতের চূড়ান্ত বাণী এবং মুক্তির সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপত্রই হলো ‘ইসলাম’, আর তা হচ্ছে- ভালোবাসা ও শান্তির একটি বার্তা এবং তা কখনই সন্ত্রাস অথবা যুদ্ধের কোনো বার্তা নয়।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।
এইচআর/জিকেএস