সুরা মুজ্জাম্মিল কোরআনের ৭৩তম সুরা। মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরাটির আয়াত ২০টি, রুকু বা অনুচ্ছেদ ২টি। সুরার প্রথম আয়াতে রাসুলকে (সা.) ‘মুজ্জাম্মিল’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এ শব্দটিকেই সুরার নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মুজ্জাম্মিল অর্থ চাদর বা বস্ত্রাবৃত ব্যক্তি। যখন এই আয়াতগুলি অবতীর্ণ হয় তখন নবিজি (সা.) চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলেন। আল্লাহ তাকে ডেকে বলেছেন, এখন চাদর ছেড়ে ওঠো এবং রাতের নামাজ বা তাহাজ্জুদের নামায পড়ো। সুরার শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবিজি (সা.) ও তার সাহাবিদের রাত জেগে দীর্ঘ সময় ইবাদতের প্রশংসা করেছেন এবং এ রকম দীর্ঘ সময় রাত্রি জাগরণ কঠিন হওয়ায় এটাকে আবশ্যক না করে সবার জন্য সহজ করে দিয়ে বলেছেন, রাতের নামাজে যতটুকু সহজ হয় কোরআন পাঠ করো। রাতের নামাজ যে ওয়াজিব বা অত্যাবশ্যক নয়, বরং মুস্তাহাব তা স্পষ্ট করা হয়েছে এ আয়াতে।
Advertisement
সুরা মুজ্জাম্মিলের শেষ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِنَّ رَبَّکَ یَعۡلَمُ اَنَّکَ تَقُوۡمُ اَدۡنٰی مِنۡ ثُلُثَیِ الَّیۡلِ وَنِصۡفَہٗ وَثُلُثَہٗ وَطَآئِفَۃٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ مَعَکَ وَاللّٰہُ یُقَدِّرُ الَّیۡلَ وَالنَّہَارَ عَلِمَ اَنۡ لَّنۡ تُحۡصُوۡہُ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ عَلِمَ اَنۡ سَیَکُوۡنُ مِنۡکُمۡ مَّرۡضٰی وَاٰخَرُوۡنَ یَضۡرِبُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ یَبۡتَغُوۡنَ مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَاٰخَرُوۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنۡہُ وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَاَقۡرِضُوا اللّٰہَ قَرۡضًا حَسَنًا وَمَا تُقَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ تَجِدُوۡہُ عِنۡدَ اللّٰہِ ہُوَ خَیۡرًا وَّاَعۡظَمَ اَجۡرًا وَاسۡتَغۡفِرُوا اللّٰہَ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে, তুমি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ নামাজে দাঁড়িয়ে থাকো এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও। আল্লাহ রাত ও দিন নিরূপণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন। অতএব তোমরা কোরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়ো। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে, কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে। তাই তোমরা কোরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়ো। আর সালাত কায়েম করো, জাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Advertisement
এ আয়াত থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই
১. রাসুল (সা.) ও তার সাহাবিরা আল্লাহর নির্দেশ পালনে অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। আল্লাহ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর তারা অনেক সময় রাতের দুই তৃতীয়াংশও নামাজে দাঁড়িয়ে কোরআন তিলাওয়াত করতেন।
২. আল্লাহর ইসলাম পালন মানুষের জন্য সহজ রাখতে চেয়েছেন। রাতে দীর্ঘ সময় নামাজ আদায় কঠিন হওয়ায় যতটুকু সহজ হয়, ততটুকু পরিমাণ সময় নামাজ ও কোরআন তিলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
৩. মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, জাকাত দেওয়া ফরজ এবং ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের অন্যতম।
Advertisement
৪. কারো ঋণের প্রয়োজন হলে সওয়াবের নিয়তে সামর্থ্য অনুযায়ী সুদ ছাড়া ঋণ দেওয়াসহ যে কোনো নেক আমলের সুযোগ পেলে লুফে নেওয়া উচিত। এ জীবনে আমরা যে নেক আমল করবো, তার প্রতিদান উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে। তাই নেক আমলের কোনো সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।
৫. কোনো গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ওয়াজিব। এ ছাড়া সব সময়ই বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া উচিত।
ওএফএফ/এএসএম