ফিচার

সসে ডুবিয়ে জীবন্ত অক্টোপাস খাওয়া জনপ্রিয় যেখানে

বাঙালির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যে বিশেষণ যুক্ত করা যায় তা হচ্ছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। বাঙালির ভোজন আয়োজনের ইতিহাস ঐতিহ্য বহুকাল আগে থেকেই চলে আসছে। মোঘলাই থেকে বিরিয়ানি, কিংবা মাছের নানান পদ প্রতি বেলায় বাঙালির রসনা মিটিয়ে আসছে।

Advertisement

তবে বর্তমানে চাইনিজ, কোরিয়ান, রাশিয়ান, থাই নানান দেশের জনপ্রিয় খাবার যুক্ত হচ্ছে বাঙালির রসনাবিলাসে। কিন্তু আমাদের দেশে যেসব চাইনিজ, কোরিয়ান খাবারের চল আছে তার সঙ্গে আসল চাইনিজ, কোরিয়ান রেসিপির বেশ খানিকটা তফাৎ আছে। বাঙালির স্বাদের উপর নির্ভর করে এসব রেসিপিকে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে।

 

কোরিয়া কিংবা চীনে বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলো কাঁচা অবস্থায় নানান ধরনের সসে ডুবিয়ে খাওয়া হয়। এর মধ্যে জীবন্ত অক্টোপাস সবচেয়ে জনপ্রিয় এক খাবার দক্ষিণ কোরিয়ার। যাকে কোরিয়ান ভাষায় বলা হয় ‘সান-নাকজি’ বা ‘লাইভ অক্টোপাস’।

আরও পড়ুন: মৃতদের স্মরণে পালিত হয় হ্যালোইন

Advertisement

অক্টোপাসকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে তিলের তেলেতিলের বীজ এবং কখনও কখনও আদা দিয়ে পরিবেশন করা হয়। সেই অক্টোপাস মুখে দিয়ে বেশ সুস্বাদুই মনে হবে যে কারও। কোরিয়ানদের কাছে এই খাবার বেশ জনপ্রিয়। এমনকি বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরাও চেখে দেখতে ভোলেন না সান-নাকজি।

তবে এটি খাওয়ার বিশেষ একটি নিয়ম আছে। খাওয়ার সময় একটু ভুল করলেই মৃত্যু নিশ্চিত। কোরিয়ায় বছরে অনেক মানুষ মারা যান এই সান-নাকজি খেতে গিয়ে। যেহেতু খাওয়ার সময় অক্টোপাসের স্নায়ু জীবিত থাকে তাই গলায় আটকে যায় এবং হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়। তাই এটি ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হয়।

সান-নাকজি একটি ছোট অক্টোপাসকে বোঝায় যা কাটা হয় এবং কাঁচা পরিবেশন করা হয়। এটি প্রায়ই দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে বা সামুদ্রিক খাবারের বাজারে খাওয়া হয়। সান-নাকজি কিন্তু অক্টোপাসটিকে পরিবেশন করার আগে মেরে ফেলা হয়। আর তারপর অংশে কেটে ফেলা হয়। এটি কাটার পরপরই পরিবেশন করা হয় এবং খাওয়া হয়। ফলে অক্টোপাসের দেহের স্নায়ুগুলো তখনো সক্রিয় থাকে। যার ফলে অক্টোপাস তখনো বেঁচে আছে মনে হয়। এই কাটা অংশগুলোকে প্লেটে চলতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন: ভয়ংকর চেহারার পুতুলের বাস যে দ্বীপে

Advertisement

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ‘লাইভ অক্টোপাসে’র টুকরো যত ছোট হবে, ততই তা খেতে সুবিধা। কারণ তখনো নড়াচড়া করতে থাকে অক্টোপাস। তাই খুব সাবধানে এই ডিশটি খাওয়া উচিত। সামান্য় অসাবধানতার জেরেই গলায় সেই টুকরো আটকে প্রাণ হারাতে হয় মানুষকে। এর আগেও দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০০৭ এবং ২০১২ সালের মধ্যে এই একই রকম ডিশ খেয়ে লিভার নষ্ট হয়েছিল তিনজনের।

এছাড়া ‘অক্টোপাস হত্যা’ নামে একটি ঘটনাও ঘটেছিল কোরিয়ায়। একজন দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যক্তিকে তার বান্ধবীকে হত্যা করার অভিযোগে এবং এটি একটি সান-নাকজি দুর্ঘটনা বলে দাবি করার জন্য ২০১২ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। তবে ২০১৩সালে অপর্যাপ্ত প্রমাণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট তাকে বেকসুর খালাস করে।

‘লাইভ অক্টোপাস’ দক্ষিণ কোরিয়ার একটি অতি জনপ্রিয় ডিশ। সে দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই বিভিন্ন রেস্তরাঁকেও এই ডিশ পরিবেশন নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

সূত্র: সিএনএন, এনডিটিভি

কেএসকে/জেআইএম