তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক (বিজিএমইএ) সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে। সরকার নতুন যে বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে, আমরা পোশাক শিল্পের সব উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নেবো, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন। নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বিজিএমইএ সমিতি।
জানা গেছে, নিম্নতম মজুরি বোর্ডে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরির প্রস্তাব করা হয়েছে। আর শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষে ২৩ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়। আগামীকাল বুধবার আবারও নতুন করে দুই পক্ষ আলাদা আলাদা প্রস্তাব জমা দেবে। নভেম্বরের মধ্যেই বর্ধিত নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ হবে, যা কার্যকর হবে ১ ডিসেম্বর থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, দেশে ফরেন রিজার্ভে অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেই এতসব ঘটনার পরও ধৈর্য সহকারে কারখানা চালু রেখেছেন, রাখছেন এবং সব সময়ে কারখানা চালু রাখার প্রত্যয় নিয়ে একনিষ্ঠভাবে পরিশ্রম করছেন। তখন কোনাবাড়ি এলাকায় বিজিএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠান এবিএম ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নিসংযোগের ঘটনা মালিকদের সব প্রচেষ্টা হতোদ্যম করে দেয়।
Advertisement
গত ২৬ আগস্ট এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড ছুটি দেওয়ার ৩ ঘণ্টা পর বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী কারখানা ভাঙচুর করে। গতকাল দুপুর ১২টায় কারখানা ছুটি দেওয়ার পর কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী হাতুড়ি, শাবল দিয়ে প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে প্রায় দুই ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় এবং কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কারখানার বাটন অপারেটর মো. ইমরান মারা যান।
তিনি বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মালিকদের জানাতে চাই, দেশ ও শিল্পের স্বার্থে, শ্রমিক ভাইবোনদের কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে, যদি কোনো কারখানায় শ্রমিক ভাইবোনরা কাজ না করেন, কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান, তবে মালিকরা ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন।
আজকের এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর প্রতি অনুরোধ, পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা প্রদান করুন, এলাকায় সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করুন, সর্বোপরি জানমালের নিরাপত্তায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তবে এতে কোনো প্রিয় শ্রমিক ভাইবোন বা কর্মচারী এবং মালিক যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল আছি বর্তমানে আন্তর্জাতিক কারণে স্থানীয় পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমাদের শ্রমিক ভাইবোনরা কতখানি কষ্টে আছেন। তাদের এ কষ্টে আমরা প্রতিটি উদ্যোক্তা সমব্যাথী। সেই সঙ্গে এটিও উপলব্ধি করেছি, শিল্প যত সমস্যায়ই থাকুক না কেন, পোশাক পরিবারের সদস্য, প্রতিটি শ্রমিক ভাইবোনদের সাধ্য অনুযায়ী ভালো রাখা আমাদের উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
Advertisement
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, যখন ন্যূনতম মজুরি কাজ করছে, নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতন কাঠামো ঘোষিত হতে চলেছে, তখন আমাদের শান্ত ও নিরীহ শ্রমিক গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে, যদিও নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার আগে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। যেখানে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কাজ করছে এবং যে বোর্ডে শ্রমিক পক্ষ ও মালিক পক্ষ প্রতিনিধি এবং নিরপেক্ষ সদস্য রয়েছেন।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, কয়েকদিন ধরে বহিরাগতদের উসকানিতে কিছু পোশাক কারখানায় শ্রমিক ভাইবোনরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন, কারখানা ভাঙচুর করছেন। ফলে অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হচ্ছেন, কারখানা বন্ধ করে দিতে, যা একান্তভাবে অনভিপ্রেত। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, বহিরাগতদের উসকানির কারণে পোশাক কারখানার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু লেদার কারখানা, কেমিক্যালের গোডাউন, ফ্যাব্রিক্সের গোডাউন, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইএআর/এমআইএইচএস/জিকেএস