ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর আমেরিকা-ইউরোপে অস্ত্র শিল্পের উত্থান ঘটেছে। অস্ত্রের চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ। ফলে অস্ত্র উৎপাদন বাড়াতে আমেরিকা যোগ্য অস্ত্র শ্রমিক খুঁজছে। এমনকি নতুন কর্মীদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট সুবিধা দেবে তারা। শুধু তাই নয়, তারা অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে চায়।
Advertisement
রাশিয়া-ইউক্রেনের পর এবার গাজা যুদ্ধ। দিনকে দিন এ যুদ্ধের ব্যাপকতা বাড়ছে। জাতিসংঘ কয়েক দফা অধিবেশন ডেকে যুদ্ধ থামাতে বলেছে। তবে আমেরিকা চায় গাজার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। কিন্তু কারণ কী? শুধুই কী আদর্শিক কারণে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে দেশটি, নাকি অন্য কোনো ফন্দি আছে তাদের?
নানান গবেষণা বলছে, বিশ্বে যুদ্ধ যত বাড়ে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসা ততই জমে। রাশিয়া-ইউক্রেনের পর এবার গাজা যুদ্ধ নিয়ে খেলছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি এখন খলনায়কের ভূমিকায়। মুখে মানবিকতার কথা বললেও যুদ্ধের আড়ালে রমরমা অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। এজন্য গাজার যুদ্ধকে লম্বা করতে চায় বাইডেন প্রশাসন।
কয়েকটি গবেষণা বলছে, ইউরোপে সামরিক ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত তিন দশকের মধ্যে ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সামরিক ব্যয় হয়েছে ইউরোপে। ব্যয় বাড়ার প্রধান কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ।
Advertisement
ইউক্রেন গত এক বছরে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে। যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি'র এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া ইউক্রেনকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। অন্যদিকে, রাশিয়ার সামরিক ব্যয়ও ৯.২ শতাংশ বেড়েছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া ছাড়াও ইউরোপের অন্য দেশের সামরিক খাতে খরচ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। গত বছর ইউরোপীয় দেশগুলো সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৪৮০ বিলিয়ন ডলার। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. নান তিয়ান মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই ইউরোপজুড়ে সামরিক ব্যয় নজিরবিহীন ভাবে বেড়েছে।
ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানিও নিজের সামরিক শক্তি বাড়াতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। এতে মহাখুশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ দিন শেষে লাভ হবে তাদেরই। জার্মানি এখন আমেরিকার কাছ থেকে বেশ কয়েকটি এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান কেনার পরিকল্পনা করছে। যদিও এ নিয়ে দেশের মধ্যে জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে।
ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে প্রথম থেকেই ইউরোপকে উৎসাহ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে আমেরিকার ব্যবসা ততই জমবে। দেশটি আগের চেয়ে আরও বেশি অস্ত্র বিক্রির সুযোগ পাবে।
Advertisement
রাশিয়া-ইউক্রেনের পর এবার গাজার যুদ্ধ যেন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। বিশ্বের বড় বড় প্রতিরক্ষা কোম্পানির নির্বাহীরা আশা করছেন গাজা যুদ্ধ অস্ত্রের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দেবে। তারা বলছেন, ২০২২ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে শুধু একটি চালানেই ইউক্রেনের কাছে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপের সামরিক ব্যয় বাড়ার পেছনে উচ্চমূল্যের মার্কিন এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান কেনার প্রবণতা অনেকাংশে দায়ী। যে জার্মানি অতীতে মার্কিন অস্ত্র কেনার বিরুদ্ধে ছিল, আজ সেই জার্মানিও যুক্তরাষ্ট্রের নানান ধরনের অস্ত্র কিনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের পর এবার গাজার যুদ্ধ যেন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। বিশ্বের বড় বড় প্রতিরক্ষা কোম্পানির নির্বাহীরা আশা করছেন গাজা যুদ্ধ অস্ত্রের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দেবে। তারা বলছেন, ২০২২ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে শুধু একটি চালানেই ইউক্রেনের কাছে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্র।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী দিনে গোলন্দাজ বাহিনীর অস্ত্র, মিসাইল বিধ্বংসী সরঞ্জাম ও সাঁজোয়া গাড়ির চাহিদা বাড়বে বিশ্বে। তাতে করে জমে উঠবে অস্ত্র ব্যবসা। জেনারেল ডাইনামিকস অস্ত্র তৈরির একটি মার্কিনি বড় প্রতিষ্ঠান। ইউক্রেন যুদ্ধের পর কোম্পানিটি ৩০০ কোটি ডলার অস্ত্রের ক্রয়াদেশ পায়। ফলে এক বছর আগের চেয়ে তাদের আয় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জেসন আইকেন গণমাধ্যমকে জানান, আগে প্রতি মাসে ১৪ হাজার আর্টিলারি গোলা তৈরি করতো তারা। এখন উৎপাদন ক্ষমতা মাসে এক লাখ রাউন্ড হতে যাচ্ছে। তার মতে, ইসরায়েল যুদ্ধ এ চাহিদা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
ফিলিস্তিন যুদ্ধ সামনে রেখে চলতি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১০ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের নতুন তহবিলের চাহিদা জানিয়েছেন। এ পরিমাণ টাকার অস্ত্র যাবে ইউক্রেন, ইসরায়েল, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং সীমান্ত এলাকায়। বাইডেন আরও জানান, গোলন্দাজ বাহিনীর গোলাবারুদ দেশের ১২টি রাজ্যে তৈরি হয়। এসব রাজ্যের অন্যতম পেনসিলভানিয়া, ওহাইয়ো ও টেক্সাস। বলাই যায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ ভাগ্য খুলেছে মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ীদের।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।
এইচআর/ফারুক/জিকেএস