আইন-আদালত

হলি আর্টিসানে হামলা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে মন্তব্য করে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডটিঁ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা মারাত্মক বিঘ্নিত করেছে বলেন আদালত।

Advertisement

সোমবার (৩০ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ হলি আর্টিসানে হামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত জঙ্গি সদস্যের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায় ঘোষণার সময় আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।

আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া সাত জঙ্গি হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। তারা এখন কারাগারে রয়েছেন।

আরও পড়ুন>> হলি আর্টিসান মামলা: ৭ জঙ্গির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড

Advertisement

হোলি আর্টিজান মামলার ডেথ রেফারেন্স প্রস্তুত হয় ২০১৯ সালে। ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করা হয়। এদিকে, দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন।

ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের করা আপিল ও জেল আপিল একসঙ্গে শুনানির জন্য গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। পরে বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। ১১ অক্টোবর শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী আজ রায় দেওয়া হলো।

এর আগে ২০১৯ সালে ৭ ডিসেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ৭ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১ জনকে খালাস দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জঙ্গিরা।

ফাঁসির দণ্ড পাওয়া সাত আসামি হলেন- রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ওরফে রশ, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, মামুনুর রশিদ রিপন, শরিফুল ইসলাম খালেদ। আর খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।

Advertisement

আরও পড়ুন>> হলি আর্টিসান হামলা নিয়ে যা বললো র‌্যাব

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় ঘটে নারকীয় জঙ্গি হামলা। জঙ্গিরা দেশি-বিদেশি নাগরিকসহ ২৩ জনকে হত্যা করেন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। বাকি দুজন ইশরাত আকন্দ ও ফারাজ আইয়াজ হোসেন বাংলাদেশি নাগরিক। হামলা প্রতিরোধে গিয়ে বোমার আঘাতে নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন ছয় জঙ্গি এবং একজন ধরা পড়েন।

ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। ওই মামলার তদন্ত চলাকালে একের পর এক অভিযানে ধরা পড়তে থাকেন অনেক জঙ্গি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।

এ মামলার বিচার শুরুর সময় আট আসামির ছয়জন কারাগারে ছিলেন। বিচার চলাকালে বাকি দুজন গ্রেফতার হন। আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬ (২) (অ), ৭, ৮, ৯, ১১, ১২ ও ১৩ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। মোট ২১১ জন সাক্ষীর ১১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। ওই দিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। পরে রায়ে মামলার আট আসামির সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং মামুনুর রশিদ রিপন।

এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।

একই বছরের (২০১৯ সালের) ৩০ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৭ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে আসে। এসময় আসামিরা জেল আপিল ও আপিল আবেদন করেন। এরপর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেন।

এফএইচ/এমএএইচ/এমএস