জাতীয়

ছাড় না দিলে সমাধান হবে কীভাবে?

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। সব ছাপিয়ে দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে শঙ্কা-উদ্বেগ। ফের কি অনিশ্চয়তা, সংঘাত? এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনসাধারণের মনে।

Advertisement

চার বছর আগে যে হরতালের পথ পরিহার করেছিল রাজনৈতিক দলগুলো, আবার ফিরছে সে পথে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ডাকে প্রায় চার বছর পর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হলো রোববার (২৯ অক্টোবর)। বিএনপির পাশাপাশি হরতাল পালনের ঘোষণা দেয় জামায়াতও।

২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশ কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছিল বেশ আগে থেকেই। এদিন তা যেন বাস্তবে রূপ নেয় মাত্র। বিএনপি-আওয়ামী লীগ আর পুলিশের মধ্যকার ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে। পুলিশ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী নিহত হন দিনভর এ সংঘাতে। হতাহতের ঘটনা ঘটেছে হরতালের দিনেও।

 

রাজনীতিতে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। জটিল সমস্যাও আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। সরকারপ্রধান বারবার সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বিএনপির ভয় কীসের? নির্বাচনমুখী না হয়ে বারবার নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না।–রাশেদ খান মেনন

Advertisement

 

ফের কোন পথে বাংলাদেশ? কী ঘটবে সামনে? এবারের নির্বাচনের ফল কী হবে? এসব প্রশ্ন এখন সর্বত্রই। প্রশ্নের সঙ্গে উদ্বেগও প্রকাশ পাচ্ছে জনমানুষে।

রাজনীতির চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতির চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা অবগত। আমরা এমন একটি বিরোধী জোটের সঙ্গে রাজনীতি করি, যারা দেশ, স্বাধীনতার প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ। আমরাও চাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। অংশগ্রহণ করুক সবাই। কিন্তু স্বাধীনতবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে তো কোনো আপস হতে পারে না। অথচ বিএনপি জামায়াতের ওপর ভর করেই রাজনীতি করছে, সংঘাত সৃষ্টি করছে।’

বাম ঘরানার এই রাজনীতিক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি গতিপথ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা পায়নি। আজও সংকট নানান কারণে। বিশেষ করে স্বাধীনতার এত বছর পরেও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে, এটি দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের লড়াইটা ঠিক এখানেই।’

Advertisement

আলোচনায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। জটিল সমস্যাও আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। সরকারপ্রধান বারবার সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বিএনপির ভয় কীসের? নির্বাচনমুখী না হয়ে বারবার নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না।’

‘আলোচনার কথা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবও বলেছেন। তিনি শর্তহীন আলোচনার কথা বলেছেন। শর্ত দিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না। ২০১৮ সালে সংলাপ হয়েছে। গণতন্ত্র, ভোটের জন্য ফের আলোচনা হতে পারে। সংঘাতের পথ পরিহার করে আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান আসবে বলে আমি মনে করি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মেনন বলেন, ‘এটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) মীমাংসিত বিষয়। এ নিয়ে আলোচনার আর কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা, কমিশনের ক্ষমতা, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। এতে কোনো অসুবিধা দেখি না।’

 

প্রধান দুই জোট যে কারণে সংঘাতে জড়াচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ নেই। সংঘাত আরও বাড়বে। কারণ দুই পক্ষই ক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্নে অনড়। ছাড় না দিলে সমাধান হবে কীভাবে?-সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

 

রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতামত গ্রহণ করা হয় লেখক, গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর। তিনি বলেন, ‘আলোচনার বিষয়বস্তু হওয়া দরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। ভোট এবং ভাতের অধিকারের জন্যই তো বাংলাদেশের সৃষ্টি। একটি শোষণবঞ্চিত মুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হলো। স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশ সে পথ হারালো কেন? এ প্রশ্নের মীমাংসা তো জরুরি। মূলে না গিয়ে আপনি ওপরে ওপরে আলোচনা করে সমাধান করতে পারবেন না।’

সামনের দিনের জন্য উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ‘প্রধান দুই জোট যে কারণে সংঘাতে জড়াচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ নেই। সংঘাত আরও বাড়বে। কারণ দুই পক্ষই ক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্নে অনড়। ছাড় না দিলে সমাধান হবে কীভাবে?’

‘তবে সরকারের দায় বেশি। আজকের এই পরিস্থিতি মূলত সরকার তৈরি করেছে। লুটপাটের শাসন কায়েম হয়েছে বছর পর বছর ধরে। মানুষ তো এ থেকে মুক্তি চায়। আর মুক্তির জন্য সাধারণ মানুষকেই জাগতে হবে। বিপ্লবটা সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে না হলে বুর্জোয়ারাই ভাগবাটোয়ারা করে খাবে। এ অবস্থা বহাল থাকলে শত আলোচনা করেও লাভ হবে না।’

এএসএস/এএসএ/জিকেএস