শনিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। ‘পুলিশের হামলায় মহাসমাবেশ পণ্ড’ হওয়ার প্রতিবাদে রোববার সকাল-সন্ধ্যা সারাদেশে হরতাল পালন করছে দলটি। আগামী দিনে বিএনপির পক্ষ থেকে আরও কঠোর কর্মসূচির ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ে লাগাতার হরতাল-অবরোধের দিকেও যেতে পারে দলটি।
Advertisement
এরই মধ্যে রোববার সকালে গুলশানের বাসা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুপুরে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, মির্জা ফখরুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ তাকে ছাড়া হবে সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। এ অবস্থায় চলমান যুগপৎ আন্দোলনে যেন কোনোরকম ছেদ না পদে সেজন্য বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজছে বিএনপির হাইকমান্ড। আর সেক্ষেত্রে ফখরুলের অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে উঠে আসছে একাধিক নেতার নাম।
আরও পড়ুন: মির্জা ফখরুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি
বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মহাসচিব আটক বা গ্রেফতার হলে কিংবা অন্য কোনো কারণে তার অনুপস্থিতিতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। সে অনুযায়ী ফখরুলকে আটক করার পর তার মুক্তি চেয়ে দলের পক্ষ থেকে বিবৃতিও দিয়েছেন রিজভী। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাইলে স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য বা অন্য যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পদে নিযুক্ত করতে পারবেন।
Advertisement
বিএনপির দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মির্জা ফখরুল আটক হওয়ার পরই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের আলোচনায় আসে কয়েকজনের নাম। তাদের মধ্যে রিজভী ছাড়াও কূটনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নাম আলোচনায় রয়েছে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খানও আছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হওয়ার আলোচনায়।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত মহাসমাবেশ করতে পারেননি তারা। তবে আগামী দিনে সরকার পতনের এক দফার কর্মসূচি হিসেবে সারাদেশে হরতাল বা অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। তার আগেই মির্জা ফখরুলের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে নতুন মুখ সামনে আনতে চায় বিএনপি। কারণ, মির্জা ফখরুল কবে ছাড়া পাবেন সেটি আপাতত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাই সামনের দিনের লাগাতার কঠোর আন্দোলন কর্মসূচিতে মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি শূন্য রাখতে চায় না দলের হাইকমান্ড।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতারা কি সহিংসতার দায় এড়াতে পারবেন?
এদিকে সকালে বিএনপি মহাসচিবকে আটকের পর ঢাকায় দলটির কেন্দ্রীয় আরও অনেক নেতার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চালানোর খবর পাওয়া যায়। সকাল থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বনানীর বাসার সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ে।
Advertisement
জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিযুক্ত করার বিষয়ে দলের হাইকমান্ড গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে টানা হরতাল বা অবরোধের কথা উঠে এসেছে। এমনকি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শেষে আজই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপি।
২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের ‘একতরফা’ নির্বাচনের বার্ষিকীতে টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যদিও তখন সেই কর্মসূচি হালে পানি পায়নি। তাই এবার আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে মরিয়া বিএনপি।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক দলের ‘অপবাদ’ ঘোচাতে কৌশলী বিএনপি
দলের পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, নতুন কর্মসূচির ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে জানিয়ে দেবো। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ব্যাপারেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেই।
কেএইচ/এমকেআর/এএসএম