ভ্রমণ

মিরসরাইয়ে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর সমুদ্রসৈকতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা। উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে নতুনভাবে যোগ হয়েছে এই স্পট। রথ দেখা কলা বেচার মতো একই পথে দুটি কাজ করছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ।

Advertisement

এক সময় জেগে ওঠা চরে গড়ে উঠছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এখানে দেশি-বিদেশি অনেক শিল্প মালিকরা কারখানা গড়ে তুলছেন। গড়ে উঠেছে শেখ হাসিনা স্বরণী।

আরও পড়ুন: কম খরচে আসাম ভ্রমণে যা কিছু ঘুরে দেখবেন 

প্রথমে শিল্পনগরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেখার পর এবার সবাই ছুটছেন সাগর ঘেঁষে নির্মাণ করা সুপার ডাইকে। ডাইকের পাশেই সমুদ্রসৈকত। জোয়ার-ভাটার খেলায় অপরূপ হয়ে ওঠে এই সৈকত। বৃষ্টিতে সুপার ডাইক পর্যন্ত পানিতে টইটম্বুর থাকে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে সর্বপ্রথম মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু। এরপর বঙ্গপোসাগর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয় সুপার ডাইক। সুরক্ষার জন্য ডাইকে বসানো হয়েছে হাজার হাজার ব্লক।

মূলত এরপর আবিষ্কার হয় সমুদ্রসৈকতের। বিশেষ করে বসুন্ধরা পয়েন্টে বেশি পর্যটক চোখে পড়ে। গত তিন বছর ধরে সেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন হাজার হাজার পর্যটকরা।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে 

প্রথমে মিরসরাই উপজেলার লোকজন গেলেও এখন দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক ভিড় করছেন। এছাড়া বড়তাকিয়া থেকে সমুদ্রসৈকত যাওয়ার আসার সড়কটিও অনেক চমৎকার। সড়কের দু’পাশে সবুজ-শ্যামল দৃশ্য যে কারো ভালো লাগবে।

Advertisement

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই অনেক মানুষ, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সমুদ্রসৈকতে এসেছেন। কেউ সুপার ডাইকে বসে খোশ গল্পে মেতেছেন, কেউ হেঁটে হেঁটে সাগরের বাতাস গায়ে মাখছেন!

আবার অনেকে ছবি তোলায় ব্যস্ত আছেন। কেউ সূর্যাস্তের দৃশ্যটি স্মৃতি করে রাখতে ক্যামরাবন্ধি করছেন। এখনো চোখে পড়ে দল বেধে মহিষের চারণ, ভেড়ার ছোটাছুটি।

আরও পড়ুন: শত বাঁধা পেরিয়ে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরলেন আয়াতুল্লাহ 

শিল্পনগরের জিরো পয়েন্টের একটু উত্তর পাশে বনাঞ্চলে দেখা যাবে মায়া হরিণের বিচরণ। দল বেঁধে ১৫-২০টি ছোট বড় হরিণ ঘুরতে দেখা যায়। তবে মানুষের একটু আভাস পেলে তারা বনে ঢুকে পড়ে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে গাড়ি নিয়ে এসেছেন আট বন্ধুর একটি দল। তাদের একজন সাইদুল ইসলাম অনিক বলেন, অনেক দিন ধরে ইচ্ছে মিরসরাইয়ের শিল্পনগর দেখার।

তাই আজ ছুটির দিনে আমরা আট বন্ধু মিলে ঘুরতে এসেছি। প্রথমে শিল্পনগরের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেছি। এরপর সবাই বসুন্ধরা সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসছি। খুব ভালো লাগছে।

আরও পড়ুন: ছুটির বিকেলে ঘুরে আসুন আহসান মঞ্জিল 

ফেনীর মুহুরীগঞ্জ থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসা সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘মিরসরাইয়ের ইছাখালীতে আমার আত্মীয়েরর বাড়ি আছে। আগে সেখানে বেড়াতে আসলে এখানে মাঝে মধ্যে আসতাম। এখানে ধু ধু চর ছিল।’

‘তবে ১০-১২ বছরের ব্যবধানে এত পরিবর্তন হয়েছে যা এক কথায় অবিশ্বাস্য। একসময় গরু, মহিষ, ভেড়া চরতো যে চরে এখন সে স্থানে বড় বড় দালান। আগে ছোট কাচা মাটির রাস্তা দিয়ে হাঁটতে কষ্ট হত, এখন বিশাল বিশাল রাস্তা হয়েছে। গড়ে উঠেছে অনেক দৃষ্টিনন্দন সমুদ্রসৈকত। সবকিছু দেখে অনেক আনন্দ করেছে ছেলে-মেয়েরা।’

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসা মিরসরাই উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রণি সাহা বলেন,‘ছুটির দিনে কাজের চাপ নেই। তাই মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। অনেক চমৎকার জায়গা।’

আরও পড়ুন: কম খরচে হানিমুন সারতে কোথায় যাবেন? 

তবে শিল্পনগরের মূল গেইটে প্রবেশে আনসারের হয়রানির অভিযোগ করেছেন একাধিক পর্যটক। শাকিল নামের একজন বলেন, ‘অনেক মানুষ গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা অহেতুক হয়রানি করে। ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। আমরা তো ফ্যাক্টরির ভেতর যাবো না। সমুদ্রসৈকতে যেতে বাধা দেওয়া ঠিক না।’

শিল্পনগর সমুদ্রসৈকতে অনেকে রাতেও ঘুরতে যায়। সড়কের দু’পাশে ও অর্তনৈতিক অঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার লাল,নীল বাতি দেখতে অসাধরণ লাগে।

সমুদ্রের পাড়ে দখিনা বাতাসের মধ্যে বসে গান করেন অনেকে। বিশাল আকারের সড়ক দিয়ে গাড়ি যোগে যেতে আশপাশে সবুজ দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করে।’

আরও পড়ুন: ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ বলা হলেও ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি 

কীভাবে যাবেন?

দেশের যে কোনো স্থান থেকে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে অথবা সিএনজি অটোরিকশা যোগে যাওয়া যায়।

তবে রিজার্ভ গাড়ি না হলে সিএনজি অর্থনৈতিক অঞ্চল মূল গেইটের আগে ভাবির দোকানের মোড় পর্যন্ত যাওয়া যাবে। সেখান থেকে ভেতরে প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার পথ। তাই রিজার্ভ গাড়ি নেওয়া ভালো।

থাকা ও খাওয়া

শিল্পনগরের ভেতরে কোনো খাবারের দোকান নেই। সব দোকান মূল গেইটের বাইরে। এখানে বেশ কয়েকটি খাবারের হোটেল গড়ে উঠেছে। এছাড়া যাওয়া আসার পথে আবুতোরাব বাজারে ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট আছে।

থাকার জন্য এখানে কোনো ধরনের আসাবিক হোটেল গড়ে ওঠেনি। পার্শ্ববর্তী সীতাকুন্ড সদরে কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান ও অলংকার মোড়ে অনেক আবাসিক হোটেল আছে।

এম মাঈন উদ্দিন/জেএমএস/জিকেএস