নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে নবগঙ্গা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে ড্রাগন বাগান। মকছেদ মোল্যা অ্যান্ড মহুরন নেছা এগ্রো ড্রাগন গার্ডেনটি ইটভাটার মধ্যে ২৩ একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। এতে ১৩ হাজার ৬৫০টি পিলারে শোভা পাচ্ছে ৫৬ হাজার ড্রাগন গাছ।
Advertisement
সরেজমিনে জানা যায়, এখানে রেড ভেলভেট, আমেরিকান বিউটি, ইসরায়েল ইয়োলো, ভিয়েতনাম রেড, ভিয়েতনাম হোয়াইট এবং পলোরা জাতের ড্রাগন গাছ আছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ২.৫ একর জমিতে ১৭০০ পিলারে ৭ হাজার চারা দিয়ে শুরু হয় ড্রাগন চাষ।
মুন্সী মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মরফুদুল হাসান পলাশ বলেন, ‘প্রথমে ২ ভাইয়ের সহযোগিতায় শুরু হয় চাষ। তবে শুরুটা ভালো ছিল না। প্রতিবেশীরা বলতেন, ‘কী গাছ লাগাইছো, এতে কী হবে?’ পরে নতুন উদ্যমে আমরা ৬ ভাই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ইটভাটা ভেঙে দিয়ে ২৩ একর জমিতে ড্রাগন বাগান করেছি। এখানে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।’
আরও পড়ুন: কলা চাষে সফলতার স্বপ্ন প্রবাস ফেরত মোস্তফার
Advertisement
বাগানের শ্রমিক সুমন মোল্যা বলেন, ‘খুব সহজে বাগান তৈরি করা যায়। খুব বেশি পরিশ্রমের কাজ না। সব সময় খেয়াল রাখতে হয় যেন পোকামাকড় বা রোগবালাই কোনো ক্ষতি করতে না পারে। জেলার সবচেয়ে বড় এ বাগান দেখতে আসে দূরের মানুষ। তারা ড্রাগন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকেই চারা কিনে নিচ্ছেন।’
মরফুদুল হাসান পলাশ বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে ইটভাটার কারণে পরিবেশের ক্ষতি হবে, এটা আমি মেনে নিতে পারিনি। পরে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় গড়ে তুলি ড্রাগন বাগান। এ বছর এরই মধ্যে ১৬ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি। আগামীতে কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করি। অনেকেই চারা নিয়ে ছোট ছোট বাগান করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাকৃতিকভাবে এ ফলের চাষ করি। এতে ওষুধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। বছরে ১-২ বার সার প্রয়োগ করতে হয়। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের আকারভেদে প্রতি কেজি ১৫০-২৮০ টাকা পাইকারি বিক্রি হয়। কালিয়া বাজার, লোহাগড়া, নড়াইল সদর এবং যশোর সদরে বিক্রি করছি।’
আরও পড়ুন: পাহাড়ে ‘রূপবান’ শিম চাষে বিপ্লব
Advertisement
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ মাহামুদ বলেন, ‘কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। কম সময়ে বাগানে ফল আসতে শুরু করে। তাই এটি লাভজনক। নতুন কেউ চাষ করতে চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা করবো।’
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, ‘জেলায় ৩৬ একর জমিতে ছোট-বড় ১৩টি ড্রাগন বাগান আছে। পরিবেশের কথা ভেবে ইটভাটা ভেঙে শিক্ষক যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন; এটি প্রশংসার দাবিদার। কৃষি বিভাগ এতে সব রকমের সহযোগিতা করছে, ভবিষ্যতেও করবে।’
হাফিজুল নিলু/এসইউ/এএসএম